দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১২ আগস্ট: সিলিং ফ্যানের উপর চাপ পড়লেই তা নিচে নেমে আসবে। বেজে উঠবে স্বয়ংক্রিয় অ্যালার্ম। ‘আত্মহত্যা’ (সুইসাইড) রুখতে বিশেষ ‘অ্যান্টি সুইসাইড ফ্যান’ (Anti Suicide Fan)। বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসুর আত্মবলিদান দিবস (১১ আগস্ট) উপলক্ষে ঘাটাল মহকুমা প্রশাসনের উদ্যোগে ঘাটালের বর্ণপরিচয় মুক্তমঞ্চে অনুষ্ঠিত ‘ক্ষুদিরাম বিজ্ঞান মেলা’-তে এমনই এক মডেল তৈরি করে নজর কেড়েছে দাসপুরের গোবিন্দনগর গান্ধী শতবার্ষিকী বিদ্যালয়ের দুই ছাত্রী বৃষ্টি হাজরা (নবম শ্রেণী) ও ঐশানী পাত্র (দশম শ্রেণী)। প্রতিযোগিতায় তাঁরা দ্বিতীয় স্থান অধিকারও করেছে। স্কুল পড়ুয়া বৃষ্টি-ঐশানীদের তৈরি এই ‘অ্যান্টি সুইসাইড ফ্যান’-এর প্রযুক্তি ও ভাবনার সাথে অনেকেই আইআইটি খড়্গপুর (IIT Kharagpur) কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনার মিল খুঁজে পাচ্ছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘উদ্দেশ্য ‘ যখন এক, ‘মিল’ পাওয়াটাই তো স্বাভাবিক!

ঘাটাল মহকুমা প্রশাসনের উদ্যোগে সোমবার সকাল সাড়ে ১১টা থেকে বিকেলে সাড়ে ৪টা অবধি চলে এই ক্ষুদিরাম বিজ্ঞান মেলা ও প্রদর্শনী। এই বিজ্ঞান মেলা বা প্রদর্শনীতেই নজর কাড়ে উন্নত বা ব্যতিক্রমী ভাবনার বেশ কিছু মডেল। এর মধ্যেই অন্যতম দাসপুর-১ নং ব্লকের গোবিন্দনগর গান্ধী শতবার্ষিকী হাইস্কুলের পড়ুয়াদের তৈরি এই ‘অ্যান্টি সুইসাইড ফ্যান’। সিলিং ফ্যানে দড়ি বা ওড়না জাতীয় কিছুর ফাঁস লাগিয়ে ঝোলার চেষ্টা করলেই বিশেষ স্প্রিং লাগানো ওই ফ্যান নিচে নেমে আসবে এবং তাঁর পা মাটিতে বা চৌকিতে লেগে যাবে। সেইসঙ্গেই ফ্যানের উনর চাপ পড়লেই বেজে উঠবে স্বয়ংক্রিয় অ্যালার্ম। ফলে সে যাত্রায় ‘আত্মহত্যা’ রুখে দেওয়া সম্ভব বলেই মনে করে বৃষ্টি, ঐশানী এবং তাদের স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। কিন্তু, হঠাৎ এই ভাবনা কেন? বৃষ্টি ও ঐশানী বলে, “আমরা তখন ক্লাস সেভেন-এইটে পড়ি। আমাদের স্কুলের উঁচু ক্লাসের (একাদশ শ্রেণির) এক দিদি সিলিং ফ্যানে ফাঁস লাগিয়ে নিজের বাড়িতেই আত্মহত্যা করেছিল। সেই ঘটনাই নাড়িয়ে দিয়েছিল আমাদের মন! আমরা খুবই কষ্ট পেয়েছিলাম। তাছাড়াও, গত দু’মাসে ঘাটাল মহকুমার ৭ জন ছাত্রছাত্রী আত্মহত্যা করেছে বলে আমরা শুনেছি। সেই ভাবনা থেকেই আমাদের এই প্রয়াস। সহযোগিতা করেছেন আমাদের শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং অন্যান্য সহপাঠীরাও।” ঠিক এমনই ভাবনা থেকেই তো আইআইটি খড়্গপুর কর্তৃপক্ষও তাঁদের হোস্টেলের (বা, হলের) রুমগুলিতে এমনই স্বয়ক্রিয় অ্যালার্ম ও স্পিং যুক্ত সিলিং ফ্যান লাগানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেন। গত দু-এক সপ্তাহ আগেই এই বিষয়ে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন স্বয়ং ডিরেক্টর সুমন চক্রবর্তী। গত সাত মাসে আইআইটি খড়্গপুরের চার পড়ুয়ার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারের পরই এমন ‘ভাবনা’ বলেও জানান তিনি। তবে, এজন্য তির-চার মাস সময় লাগবে বলেও জানিয়েছিলেন ডিরেক্টর।
এদিকে, ঘাটাল মহকুমাতেও আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে। আর তাই আইআইটি খড়্গপুরের সাফল্যের আগেই ‘অ্যান্টি সুইসাইড ফ্যান’-এর মডেল তৈরি করে ফেলে বৃষ্টি, ঐশানীরা। তারা বলে, “আমাদের ভৌত বিজ্ঞানের (Physical Science) স্যার মনোজ কুমার সিং খুব সাহায্য করেছেন। প্রধান শিক্ষক সহ অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকারাও উৎসাহিত করেছেন।” কি কি উপকরণ দিয়ে তৈরি হয়েছে এই ফ্যান? বৃষ্টি ও ঐশানী জানায়, “একটি ফ্যান (পাখা), পাইপ, ডিসি মোটর, একক চ্যানেল রিলে মডিউল, নয় ভোল্টের ব্যাটারি, প্রতিরোধক, সুইচ, অ্যালার্ম প্রভৃতি লাগবে।” এই ফ্যান ইলেকট্রিক মাধ্যমেও লাগানো সম্ভব বলে জানিয়েছেন শিক্ষক মনোজ কুমার সিং। সেক্ষেত্রে আগামীদিনে আইআইটি খড়্গপুরের মতো বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আত্মহত্যা রুখতে যে এই ‘ফ্যান’ অত্যন্ত কার্যকরী হবে তাও মানছেন মনোজ। মহকুমাশাসক সুমন বিশ্বাস বলেন, “শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান ভাবনা ও মানসিকতার প্রসারের লক্ষ্যেই তো এই উদ্যোগ।” তিনি এও জানান, মহকুমার ২০টি হাইস্কুল (১টি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল সহ) এবং ১০টি প্রাইমারি স্কুলকে আগেই বেছে নেওয়া হয়েছিল এই বিজ্ঞান মেলার বিজ্ঞান ও ভূগোল বিষয়ক মডেল এবং শিক্ষক শিক্ষণ উপকরণ (TLM) তুলে ধরার জন্য। তাঁদের মধ্য থেকেই তিনটি বিভাগের (বিজ্ঞান, ভূগোল ও প্রাথমিক) মোট ৯টি স্কুলকে পুরস্কৃত করা হবে বলে জানিয়েছেন মহকুমাশাসক সুমন বিশ্বাস। বৃষ্টি-ঐশানীদের ‘অ্যান্টি সুইসাইড ফ্যান’ ছাড়াও অন্যান্য বিভিন্ন স্কুলের ক্লাউড সিডিং টেকনোলজি (কৃত্রিম বৃষ্টিপাত), বাইক সেফটি সিস্টেম (হেলমেট না পরলে স্টার্ট হবেনা বাইক), কার্বন ডিডাকশন (কলকারখানার ধোঁয়াকে কার্বন মুক্ত করা) প্রভৃতি মডেলগুলিও নজর কেড়েছে। এদিন ছাত্রছাত্রীদের জন্য টেলিস্কোপের সাহায্যে মহকাশ পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল বলেও জানিয়েছেন মহকুমাশাসক।