দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৬ এপ্রিল: বাহানাগা রেল দুর্ঘটনার বছর ঘোরেনি এখনও। এবার, মর্মান্তিক বাস দুর্ঘটনা ওড়িশা-র জাজপুর সংলগ্ন বারবাটিতে! ভয়াবহতা বা ব্যাপকতার বিচারে আসমান-জমিন ফারাক হলেও, সোমবার (১৫ এপ্রিল) রাতের বাস দুর্ঘটনাও নতুন বছরের শুরুতেই এক বড় ধাক্কা দিয়ে গেল বাঙালি তথা মেদিনীপুরবাসীকে! পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন সূত্রে পাওয়া সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, জাজপুরের বারবাটি সেতু থেকে পুরী-কলকাতা যাত্রীবাহী বাস পড়ে যাওয়ার ঘটনায় এখনও পর্যন্ত যে ৫ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করেছে ওড়িশা সরকার; তাঁদের মধ্যে ৩ জন পূর্ব মেদিনীপুরের বাসিন্দা। ২ জনকে এখনও চিহ্নিত করা যায়নি! অন্য একটি সূত্রে জানা গেছে, ৪ জনকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে। তাঁরা সকলেই পূর্ব মেদিনীপুরের বাসিন্দা। অন্যদিকে, আহত ৪৪ জনের মধ্যে ৩২ জনই বাংলার। এর মধ্যে, ২৪-২৫ জন পূর্ব মেদিনীপুরের বলে জানা গেছে প্রশাসন সূত্রে। এঁদের মধ্যে, ২০ জনের আঘাত তেমন গুরুতর না হলেও, ১২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। ইতিমধ্যে, ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের তরফে পাঠানো অ্যাম্বুলেন্স, শববাহী গাড়ি সহ বিভিন্ন যানবাহন।

thebengalpost.net
পূর্ব মেদিনীপুর থেকে রওনা দিচ্ছে শববাহী গাড়ি:

পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক খুরশিদ আলী কাদেরী জানিয়েছেন, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা থেকে ৩টি ক্রিটিক্যাল কেয়ার এম্বুলেন্স, একটি মিনিবাস এবং একটি সিভিল ডিফেন্সের গাড়ি পাঠানো হয়েছে। রওনা দিয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) সুমন সৌরভ মোহান্তি। উল্লেখ্য, ওড়িশা-র বাহানাগা রেল-দুর্ঘটনার সময়ও পশ্চিম মেদিনীপুরের ADM সুমন সৌরভ মোহান্তি টানা কয়েকদিন দুর্ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে থেকে উদ্ধারকাজের তদারকি করেছেন। আর এজন্য তিনি স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারাও প্রশংসিত হয়েছিলেন। আদতে ওড়িশারই বাসিন্দা সুমনকে এবারও মঙ্গলবার সাত সকালেই জাজপুরের উদ্দেশ্যে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জেলাশাসক জানিয়েছেন। প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষকেও। মঙ্গলবার বেলা এগারোটা-বারোটা পর্যন্ত আহতদের নিয়ে আসা না হলেও, পড়শি জেলার দুর্ঘটনাগ্রস্তদের বা আহতদের নিয়ে যেকোনও মুহূর্তে অ্যাম্বুলেন্স প্রবেশ করতে পারে বলে অনুমান করছেন মেডিক্যাল কলেজের আধিকারিকরা।

অন্যদিকে, পূর্ব মেদিনীপুর জেলা থেকেও অ্যাম্বুলেন্স, শববাহী গাড়ি এবং বেশ কয়েকটি পিকাপ ভ্যান পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। পাঠানো হয়েছে চিকিৎসকদলও। একই সঙ্গে দুই জেলাতেই খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। প্রতিমুহূর্তে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে ওড়িশা সরকারের সঙ্গে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সোমবার রাত্রি প্রায় ৯টা নাগাদ পুরী-কলকাতা যাত্রী বোঝাই বাসটি ১৬নং জাতীয় সড়কের উপর বারাবাটি ব্রিজের ওপর থেকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সটান নীচে পড়ে যায়! সেই সময় বাসে প্রায় ৫০-৫২ জন যাত্রী ছিলেন। আহতদের উদ্ধার করে কটকের এসসিবি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। প্রাথমিক তদন্তে অনুমান, চালক মদ্যপ অবস্থায় থাকার কারণেই প্রথমে ইলেকট্রিক খুঁটিতে ধাক্কা মারে। তারপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফ্লাইওভার বা উড়ালপুল থেকে প্রায় ২০ ফুট নীচে গিয়ে পড়ে! ওড়িশা সরকারের তরফে দ্রুত উদ্ধার কাজ শুরু করা হয়। মঙ্গলবার ভোর রাত অবধি চলে উদ্ধারকাজ। ইতিমধ্যে, ওড়িশা সরকারের তরফে নিহতদের পরিবার পিছু ৩ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণও ঘোষণা করা হয়েছে।

thebengalpost.net
পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের তৎপরতা: