Administration

Kharagpur: ‘হিরণ গল্প’ ওড়াচ্ছে জেলা তৃণমূল! পুরপ্রধানের দৌড়ে প্রদীপের সঙ্গে অপূর্ব, মেদিনীপুরে এগিয়ে সৌমেন খানই

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৫ মার্চ: মুখে স্বীকার না করলেও, বার্তা দিয়ে চলেছেন খড়্গপুর সদরের বিজেপি বিধায়ক তথা সদ্য নির্বাচিত ৩৩ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হিরন্ময় চট্টোপাধ্যায় ওরফে হিরণ। পূর্ব ঘোষণামতোই শনিবারের দলীয় সংবর্ধনা সভায় যাননি হিরণ। কলকাতার ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে বিজেপির জরুরি বৈঠক এবং বিজয়ী ৬৫ জন কাউন্সিলরদের সংবর্ধনা সভা এড়িয়ে গিয়েছেন তিনি। এই বিষয়ে দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার-কে আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন। সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রের খবর অনুযায়ী, হিরণ রাজ্য সভাপতি-কে জানিয়েছিলেন, “আমি এখন ময়দান ছেড়ে যেতে পারব না। আমার কর্মীরা মার খাচ্ছে। খড়্গপুর সদরে শাসকদলের সন্ত্রাস চলছে। এ সব ছেড়ে, কর্মীদের বিপদের মধ্যে রেখে আমি কলকাতায় প্রাইজ নিতে যেতে পারব না।” এছাড়াও, শুক্রবার হিরণ ওই সাংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, “এই নির্বাচনে আমাকে হারানোর জন্য কারা কারা ষড়যন্ত্র করেছেন, তার সব প্রমাণ আমার কাছে রয়েছে। আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সেই সব প্রমাণ সামনে নিয়ে আসব। সাংবাদিক বৈঠক করে জানাব কে কী ভাবে আমাকে হারানোর চেষ্টা করেছেন।”

হিরন্ময় চট্টোপাধ্যায় :

অভিযোগের তীর দিলীপ গোষ্ঠীর দিকে হলেও, আসলে তৃণমূল-এর শীর্ষ নেতৃত্বকেও যে ‘বার্তা’ দিয়ে রাখতে চাইছেন হিরণ, তা বলাই বাহুল্য! যদিও, আজ নয়, হিরণ যখন ৪ জানুয়ারি (২০২২) বঙ্গ বিজেপি’র সমস্ত হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ছেড়ে বেরিয়ে এসে জানিয়েছিলেন, “বঙ্গ বিজেপির আমাকে দরকার নেই… রাজনীতি নয়, আমি উন্নয়নের পক্ষে আছি”, সেই সময়ই (৫ জানুয়ারি) বেঙ্গল পোস্ট জানিয়েছিল, “তৃণমূল কংগ্রেসকেই পরোক্ষে বার্তা দিয়ে রাখলেন। ঘরের ছেলে যেকোনো দিন ঘরে ফিরতে পারেন!” উড়িয়ে দেয়নি জেলা তৃণমূল থেকে রাজ্য তৃণমূলও। তবে, সেই সময় থেকেই জেলা ও রাজ্য তৃণমূলের একাংশের সঙ্গে হিরন্ময় চট্টোপাধ্যায় গোপনে সু-সম্পর্ক রেখে চললেও, জেলা তৃণমূলের একাংশ কোনোকালেই তাঁকে চায়নি! ওই অংশের মতে, “এমনিতেই খড়্গপুরে গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব রয়েছে। প্রদীপ গোষ্ঠীর সঙ্গে বর্ষীয়ান নেতাদের গোষ্ঠী কোন্দলের বিষয়টি উপেক্ষা করা যায় না। তার উপরে হিরনকে দলে নিলে ‘গোষ্ঠী কোন্দল’ এর আগুন জ্বলবে!” সর্বোপরি, নিজেদের স্বার্থে দলত্যাগ করা নেতাদের পুনরায় ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে শীর্ষ নেতৃত্ব এখনও একশো শতাংশ সবুজ সঙ্কেত দেয়নি। বিশেষত, সকলকে ফিরিয়ে নিতে আপত্তি রয়েছে খোদ সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। হিরণের ক্ষেত্রে হয়তো দলের শীর্ষ নেতৃত্বের বড়সড় কোনো আপত্তি নাও থাকতে পারে, কারণ আপাত ভদ্র, সভ্য ও সংযত মানসিকতার হিরণ আজ অবধি তৃণমূল কংগ্রেস তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে কোন আপত্তিকর কথা বলেননি! শুধু তাই নয়, এখনও তিনি ‘মুখ্যমন্ত্রী’ বলতে অজ্ঞান। তবে, হিরণে আপত্তি রয়েছে জেলা ও খড়্গপুর তৃণমূলের একটি বড় অংশের। তাঁরা শীর্ষ নেতৃত্বকে বোঝানোর চেষ্টা করছে, “দলের গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের কারণেই, খুব সামান্য ভোটে (৩ হাজারের আশেপাশে) হিরন বিধানসভা নির্বাচনে জয়লাভ করেছে। এবারও মাত্র ১০৮ ভোটে জিতেছেন হিরণ। আর, হিরন-কে ছাড়াই খড়্গপুরে ভালো ফল করেছে তৃণমূল। কাজেই, হিরনের মতো নেতাদের খড়্গপুরে বা পশ্চিম মেদিনীপুরে কি প্রয়োজন! বরং যাদের নেতৃত্বে রেলশহর খড়্গপুরে এগিয়ে চলেছে তৃণমূল। তাঁদেরই গুরুত্ব দেওয়া উচিত।”

প্রদীপ সরকার:

আর, এক্ষেত্রে খড়্গপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান (পৌরপ্রধান) হিসেবে প্রদীপ সরকার ছাড়া যে নামটি জল্পনা উঠে আসছে, তিনি হলেন ৩৪ নং ওয়ার্ডের নব নির্বাচিত কাউন্সিলর অপূর্ব ঘোষ। লড়াকু ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তির এই নেতা এই ওয়ার্ডের দীর্ঘদিনের কাউন্সিলর। মাঝখানে তাঁর স্ত্রী এই ওয়ার্ডে নির্বাচিত হয়েছিলেন। অপূর্ব যুব নেতা হিসেবেও জনপ্রিয় ছিলেন। দলে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। প্রদীপ সরকারের থেকে পুরানো নেতাও। অন্যদিকে, প্রদীপ সরকার এর আগে সফলভাবে পৌরসভা পরিচালনা করেছেন। পরবর্তী সময়ে, তাঁকেই পৌর প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারপারসন বেছে নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মাঝখানে উপনির্বাচনে একবার বিধায়কও হয়েছিলেন। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে অবশ্য হিরণের কাছে সামান্য ব্যবধানে পরাজিত হয়েছেন। তবে, পৌরসভা নির্বাচনে ২২৩৩ ভোটে জয়ী হয়েছেন ৬ নং ওয়ার্ড থেকে, যদিও এই ওয়ার্ড-টি তাঁর ঘরের মাঠ ছিলনা। তাঁর নিজের ওয়ার্ডেও (২০ নং) তৃণমূল প্রার্থী পি. প্রভাতী-কে এক হাজারের বেশি ভোটে জিতিয়েছেন। সর্বোপরি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও তাঁর ভালো সম্পর্ক। তবে, প্রদীপের সঙ্গে দলের কিছু বর্ষীয়ান নেতার আবার মনোমালিন্য! তাঁদের অনেকেই বিকল্প কাউকে চাইছেন। সেক্ষেত্রে ১৭৩৭ ভোটে জিতে আসা অপূর্ব ঘোষের নাম উঠে আসছে জল্পনায়। কয়েকজন গ্রহণযোগ্য মহিলা কাউন্সিলরের নামও অবশ্য ভেসে বেড়াচ্ছে। তবে, তাঁরা ভাইস চেয়ারম্যান বা বিশেষ কোনো দপ্তর পেলেও, এখনও অবধি চেয়ারম্যান হওয়ার দৌড়ে প্রদীপ সরকার-ই যে এগিয়ে, তা বলাই বাহুল্য। ঠিক তেমনই মেদিনীপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান হিসেবে অনেকটাই এগিয়ে আছেন ইতিমধ্যে পৌর প্রশাসক মণ্ডলীর চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব পালন করা সৌমেন খান। তবে, দীর্ঘদিনের কাউন্সিলর তথা পৌর প্রশাসক মণ্ডলীর অন্যতম সদস্য এবং শহর সভাপতি বিশ্বনাথ পান্ডব-কেও এবার পৌরপ্রধান হিসেবে চাইছেন জেলা তৃণমূলের একাংশ। যদিও, মেদিনীপুরের বিধায়ক জুন মালিয়া’র ‘ভোট’ সৌমেনের পক্ষে যেতে পারে বলে মনে করাচ্ছে রাজনৈতিক মহল। অন্যদিকে, জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা মুখে কিছু না বললেও, তাঁর প্রথম পছন্দ যে বিশ্বনাথ পান্ডব- তা মেনে নিচ্ছেন দলের একাংশ। এসব নিয়ে সুজয় জানিয়েছেন, “সবকিছুই রাজ্য নেতৃত্ব ঠিক করবে।” তবে, খড়্গপুরের হিরণ-গল্প অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি! দলের একটি সূত্রে জানা গেছে, ৮ মার্চ রাজ্যর তরফে চেয়ারম্যান বা পুরপ্রধান-দের নাম জানিয়ে দেওয়া হতে পারে।

অপূর্ব ঘোষ :

News Desk

Recent Posts

Vidyasagar University: আবহাওয়ার নিখুঁত খবর জানতে ISRO-র সহযোগিতায় আকাশে যন্ত্র লাগানো বেলুন পাঠাল বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৩ জুন: রবিবার (২২ জুন) দুপুর ঠিক ২টো ১…

20 hours ago

Midnapore: “১৯৭৮-এর পর এমন ভয়াবহ বন্যা দেখেনি গড়বেতা!” আসরে NDRF-SDRF; প্লাবন পরিস্থিতি চন্দ্রকোনাতেও

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২০ জুন: ১৯৭৮ সালের পর এমন ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির…

4 days ago

Midnapore: মিয়াজাকি, ব্ল্যাকস্টোন থেকে আম্রপালি, হিমসাগর; মেদিনীপুরে জমজমাট ‘আম উৎসব’

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৮ জুন: ৩০ টাকা প্রতি কেজি থেকে ৩ লক্ষ…

6 days ago

Kharagpur: খড়্গপুরের কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ! মৃত্যু এক শ্রমিকের

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, খড়্গপুর, ১৭ জুন: গ্লিসারিন কারখানায় ওয়েল্ডিং- এর কাজ চলাকালীন ভয়াবহ বিস্ফোরণ!…

1 week ago

Midnapore: প্রায় দু’দশক পরে পশ্চিম মেদিনীপুরে শুরু হয়েছিল প্রাথমিকে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া; থমকে গেল আদালতের নির্দেশে

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৬ জুন: ২০০৮ এর পর ২০২৫। দীর্ঘ প্রায় দুই…

1 week ago

Elephant: হাতির পালকে তাক করে ছোঁড়া হচ্ছে একের পর এক জ্বলন্ত হুলা; নেটমাধ্যমে ছবি ছড়িয়ে পড়তেই নিন্দার ঢল

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, খড়্গপুর, ১৩ জুন: হাতির পালকে তাক করে ছোঁড়া হচ্ছে একের পর…

2 weeks ago