দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১ জুলাই: ফের বিলুপ্তপ্রায় বন্যপ্রাণীর রক্তাক্ত মৃতদেহ উদ্ধার পশ্চিম মেদিনীপুরে! ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে (১৩ এপ্রিল) মেদিনীপুর শহরের উপকন্ঠে (মেদিনীপুর বনবিভাগের অধীন চঁদড়া রেঞ্জে) বাঘঘরা’র জঙ্গল থেকে উদ্ধার হয়েছিল রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার (Royal Bengal Tiger)- এর মৃতদেহ। পশুপ্রেমীদের অভিযোগ ছিল, ‘গ্রামবাসীরাই হত্যা করেছেন!” সেই তদন্ত এখনো চলছে। এর মধ্যেই, ২০২৩ সালের ১ জুলাই অর্থাৎ আজ (শনিবার), শহর মেদিনীপুরের উপকন্ঠে প্রায় কাছাকাছি এলাকা থেকেই উদ্ধার হল বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির ডোরাকাটা হায়না (Striped Hyena/ Hyaena hyaena)’র রক্তাক্ত মৃতদেহ। শনিবার দুপুরে মেদিনীপুর বনবিভাগের মেদিনীপুর রেঞ্জের অধীন মুড়াকাটা (সিজুয়া সংলগ্ন) এলাকা (মেদিনীপুর সদর ব্লক) থেকে ওই হায়না (বা, হুঁড়ার)’র মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। এদিকে, জঙ্গল থেকে গ্রামে (মুড়াকাটা) ঢুকে পড়া ওই হায়নাটিকে লাঠি-সোটা নিয়ে তাড়া করা এবং তার উপর স্থানীয় কিছু মানুষের নৃশংস আক্রমণের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এই ঘটনার কিছুক্ষণ পরেই জঙ্গল সংলগ্ন এলাকা থেকে ওই হায়নার মৃতদেহ উদ্ধার করে বনদপ্তর। ঘটনার তদন্ত শুরু করা হয়েছে মেদিনীপুর রেঞ্জের তরফে।
বিলুপ্তপ্রায় এই বন্যপ্রাণীর মৃত্যু ঘিরে এই মুহূর্তে তোলপাড় জেলা শহর মেদিনীপুর। ঘটনার নিন্দা করেছেন অনেকেই। যদিও হায়না হিংস্র এবং মাংসাশী প্রাণী, তা লোকালয়ে ঢুকে পড়ায় সাময়িকভাবে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল গ্রামে। তা সত্বেও তার ওপর নৃশংসভাবে হামলা না করে বনদপ্তরে খবর দেওয়া কিংবা তাড়া করে গভীর জঙ্গলে পাঠিয়ে দেওয়া উচিত ছিল বলে মনে করছেন পশুপ্রেমীরা। যেভাবে রক্তাক্ত মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে, তাতে গ্রামবাসীদের মারেই হায়নাটির মৃত্যু হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন অনেকেই। যদিও, মেদিনীপুর বনবিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক মনীশ যাদব জানান, “রবিবার হায়নাটির মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করা হবে। তারপরই মৃত্যুর যথাযথ কারণ বোঝা যাবে।” তিনি এও জানান, “ওই ভিডিওতে আমরাও গ্রামবাসীদের তাড়া করতে দেখেছি হায়নাটিকে। তবে, তার কিছুক্ষণ পর মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। হায়নার মাথাটা যেভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে, তাতে আহত অবস্থায় হায়নাটি দুর্ঘটনার শিকারও হতে পারে। পিটিয়ে মারা হয়েছে নাকি পথ দুর্ঘটনার ফলে মৃত্যু হয়েছে, তা ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট এলে বোঝা যাবে।”
বন্যপ্রাণী গবেষক এবং পশুপ্রেমী রাকেশ সিংহ দেব জানান, “ডোরাকাটা হায়না এশিয়া ও উত্তর আফ্রিকার বিভিন্ন জঙ্গলে পাওয়া যায়। এই হায়না ইউরোপ মহাদেশে পাওয়া যায় না। ভারতের ঝাড়খন্ড, পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে এটি “হুঁড়ার” নামেও পরিচিত।” তিনি এও জানান, “হায়না সম্পূর্ণরূপে নিশাচর প্রাণী। অত্যন্ত বুদ্ধিমান ও লাজুক প্রকৃতির হয়। সচরাচর মানুষের সামনে আসেনা। হায়না রাতের অন্ধকারে যাবতীয় কাজ সেরে সূর্য উদয়ের আগে বাসায় ফিরে আসে। এরা কোন অন্ধকার গুহা বা গর্তে সারাদিন কাটায়। কখনো কখনো দিনেও বাইরে দেখা যায়। সাধারণত মরা প্রাণীদেহ খেয়ে থাকে। অনেক সময় অন্যের করা শিকারকে হাতিয়ে নেয় বা চুরি করে। এরা খুব ভালো শিকারি এবং বন্য শুয়োর, হরিণ, সজারু, খরগোশ, মুরগি শিকার করে। হায়না নিজেদের খাদ্য কারো সাথে ভাগ করা পছন্দ করেনা। বনে খাদ্যাভাব দেখা দিলে নিকটবর্তী গ্রামের গবাদি পশু শিকার করে থাকে। হায়না নিজের গুহা বা গর্ত বানাতে পারে। কিন্তু, এরা পাহাড়ের গুহা, পাথরের বড় ফাটল, ভূমিক্ষয়ের ফলে সৃষ্ট গর্তে বা অন্য প্রাণীর পরিত্যক্ত গর্তেও বাস করে। এরা এক সঙ্গীর সাথে জীবন যাপন করে। বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ আইন ১৯৭২ অনুযায়ী, হায়না তফসিল-১ আই. ইউ. সি. এন. তালিকায় বিপদগ্রস্ত N.T বা বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির প্রাণী।”