thebengalpost.net
সম্মানিত আবুল বাশার:

মণিরাজ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৬ সেপ্টেম্বর:”বিদ্যার সঙ্গে বোধহয় দয়া, মায়া, করুণারও একটা সম্পর্ক আছে! সেজন্যই বিদ্যাসাগর ‘দয়ারসাগর’, ‘করুণার সাগর’ও। আমার মনে হয় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর তাঁর মায়ের কাছ থেকেই এই ‘দয়া’ ধর্মে দীক্ষিত হয়েছিলেন। প্রকৃত শিক্ষার বিশেষত্ব হল চরিত্র সাধনা। ক্ষমা, ভালোবাসা, উদারতার বহিঃপ্রকাশ। আমরা বিখ্যাত বিজ্ঞানী আইজাক নিউটনের ক্ষেত্রেও দেখেছি, তাঁর প্রিয় কুকুর (পোষ্য) ডায়মন্ডের ভুলে নিজের আবিষ্কারের গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য পুড়ে যাওয়ার পরও তিনি শুধু বলেছিলেন, ‘ডায়মন্ড তুই জানিসনা কি ঘটিয়ে দিলি!'” মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মেদিনীপুর শহরের উপকণ্ঠে অবস্থিত বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত ৫-ম ‘বিদ্যাসাগর পুরস্কার’ প্রদান অনুষ্ঠানের মঞ্চে ঠিক এভাবেই ‘শিক্ষা জগতের নির্মাতা’, ‘বাংলা গদ্যের জনক’ পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে বিশেষিত করলেন অন্যতম পুরস্কার প্রাপক তথা প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক আবুল বাশার।

thebengalpost.net
সম্মানিত ইয়াসিন পাঠান:

শুধু তাই নয়, রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, স্বামী বিবেকানন্দের মতো বাংলার মনীষীদের মধ্যে অদৃশ্য এক ‘যোগসূত্র’ স্থাপনেরও চেষ্টা করেন বাশার। তবে, তত্ত্বকথার মধ্যে না গিয়ে নিজের সৃষ্টির সূত্র ধরে লোকায়ত জীবনের কথাই তুলে ধরেন সৃজনশীল ঝুমুরগীতির স্রষ্টা তথা জঙ্গলমহলের জীবনকথার অন্যতম রূপকার ‘অরণ্য সুন্দরী’ ঝাড়গ্রামের ‘ভূমিপুত্র’ ললিত মোহন মাহাত। তাঁর মতে, “ঝুমুর-গানের মধ্য দিয়েও সমাজ বদল করা সম্ভব। সেই চেষ্টাই করে গেছি চিরকাল।” অন্যদিকে, মন্দিরময় পাথরার ‘প্রাণপুরুষ’ ইয়াসিন পাঠান বিদ্যাসাগর পুরস্কারের মঞ্চ থেকেও ফের তাঁর পাথরা-প্রেম উজাড় করে দিলেন। এদিন, পাথরা থেকে তিনি সদ্য আবিষ্কৃত প্রাচীন এক ‘লিপি’র কথা শোনান। যেখানে পাথরা’র জমিদার বংশ ‘মজুমদার’-দের ৩৩ পুরুষের উল্লেখ আছে বলে জানান মেদিনীপুরের ‘ভূমিপুত্র’ ইয়াসিন পাঠান। কথাসাহিত্যিক আবুল বাশার ছাড়াও এদিন ঝুমুরশিল্পী ললিত মোহন মাহাত এবং প্রত্ন-গবেষক ইয়াসিন পাঠানের হাতে ওঠে ‘বিদ্যাসাগর পুরস্কার ২০২৩’।

thebengalpost.net
সম্মানিত ললিত মোহন মাহাত:

প্রসঙ্গত, ‘নবজাগরণের অগ্রদূৎ’ তথা মেদিনীপুরের ‘মহামানব’ পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ২০৪-তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে মঙ্গলবার ৫-ম ‘বিদ্যাসাগর পুরস্কার’ প্রদান অনুষ্ঠান আয়োজিত হয় বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবেকানন্দ সভাগৃহে। সমাজ জীবনে অসামান্য অবদান রাখার জন্য মোট ১৭ জন আবেদনকারীর মধ্য থেকে এই তিন গুণীজনকে নির্বাচন করা হয়েছে বলে জানান বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবন্ধক (রেজিস্ট্রার) ডঃ জয়ন্ত কিশোর নন্দী। এদিন তিন গুণীজনের হাতে পুরস্কার তুলে দেন, যথাক্রমে- বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সুশান্ত কুমার চক্রবর্তী, বিজ্ঞান অনুষদের অধ্যক্ষ (ডিন) অধ্যাপক সত্যজিৎ সাহা, কলা অনুষদের অধ্যক্ষ (ডিন) অধ্যাপক তপন কুমার দে। পুরস্কার মঞ্চ থেকে বাংলার তিন কৃতি সন্তানই মূলত ধর্মীয় ও সামাজিক উদারতা তথা মানবতার জয়গান গাইলেন। আর, এ প্রসঙ্গেই পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সম্পর্কে সাহিত্যিক আবুল বাশারের এদিনের পর্যালোচনাও স্মরণীয়। তাঁর মতে, “ঈশ্বর নিয়ে মাথা-ব্যথা ছিলোনা ঈশ্বরচন্দ্রের। ঈশ্বর আছে কি নেই, সেই আলোচনাও তিনি পছন্দ করতেন না! তিনি শুধু নিঃশব্দে সমাজের অবহেলিত, নিষ্পেষিত, অসহায়, অবলাদের জন্য প্রাণপণে কিছু করার চেষ্টা করে গিয়েছেন!”

thebengalpost.net
সম্মানিত আবুল বাশার:

thebengalpost.net
বিদ্যাসাগর পুরস্কারের মঞ্চে :