দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর ও বাঁকুড়া, ২৯ ডিসেম্বর: “একটা ভুল হয়ে গেছে। মানুষ আর সেই ভুল করবেনা!” মাত্র দু’দিন আগেই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মেদিনীপুর সদর ব্লকের বাগঘরা গ্রামের বিমল মাহাত, মিলন মাহাত, লক্ষ্মী মাহাত, স্বপন মাহাত-রা এমনটাই দাবি করেছিলেন ক্যামেরার সামনে। এমনকি, সিমলিপাল ব্যাঘ্র প্রকল্প থেকে পালিয়ে আসা তিন বছরের বাঘিনী জিনাত যাতে সুস্থ ভাবেই বনদপ্তরের খাঁচা-বন্দী হয়, সেই প্রার্থনাও করেছিলেন তাঁরা। গ্রামের বাবলু হাঁসদা, দীপক হাঁসদা, বনমালী হাঁসদা, চাঁদমণি হাঁসদা, রঞ্জিত মাহাত, মিলন মাহাত, লক্ষ্মী মাহাত-রা বনদেবীর কাছে ‘মানত’ও করেছিলেন কোনভাবেই যেন এবার আর রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের পরিণতি ২০১৮ সালের মতো মর্মান্তিক না হয়! শেষ পর্যন্ত তাঁদের সেই ‘মানত’ পূরণ হল। রবিবার (২৯ ডিসেম্বর) বিকেলে বাঁকুড়ার মুকুটমণিপুর সংলগ্ন গোঁসাইডিহির জঙ্গলে বনদপ্তরের ঘুমপাড়ানি গুলিতে কাবু হয় বাঘিনী জিনাত।
উল্লেখ্য যে, শনিবার সকালে পুরুলিয়ার জঙ্গল থেকে বাঁকুড়ার রানিবাঁধ থানার গোঁসাইডিহি গ্রাম লাগোয়া জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছিল বাঘিনী জিনাত। অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার পরেই ঘুমপাড়ানি গুলি ছুড়ে বাঘিনীকে কাবু করার চেষ্টা শুরু করে বনদপ্তর। বারকয়েক গুলি ছোঁড়াও হয়। কিন্তু, তাতে কাজ হয়নি। আবারও জঙ্গলেই কোথাও লুকিয়ে পড়ে বাঘিনী। এরপর গোটা জঙ্গল ঘিরে ফেলে জায়গায় জায়গায় আগুন লাগিয়ে জিনাতকে খাঁচা-বন্দী করার কৌশল নেওয়া হয়েছিল। সেই কৌশলেই সাফল্য আসে। শেষ পর্যন্ত বনকর্মীদের জালে ধরা পড়ে গত ২৪ নভেম্বর সিমলিপাল ব্যাঘ্র প্রকল্প থেকে চুপিসাড়ে পালিয়ে আসা বাঘিনী জিনাত। গত এক মাস ধরে প্রথমে ঝাড়খণ্ডের চাকুলিয়ার চিঁয়াবান্ধির জঙ্গল, তারপর পশ্চিমবঙ্গের ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ির কাটুচুয়ার জঙ্গল হয়ে সে পৌঁছে গিয়েছিল পুরুলিয়ার রাইকা পাহাড় সংলগ্ন জঙ্গলে। গত শনিবার (২১ ডিসেম্বর) সেখান থেকেই বাঁকুড়ায় পৌঁছয় জিনাত। অবশেষে আট দিনের মাথায় তাকে সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থাতেই খাঁচা-বন্দী করল বনদপ্তর।
স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনায় খুশি মেদিনীপুরের বাগঘরা গ্রামও। প্রায় সাত বছর আগে, ২০১৮ সালের ১৩ এপ্রিল (চৈত্র সংক্রান্তির আগের দিন) পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মেদিনীপুর বনবিভাগের অন্তর্গত চাঁদড়া রেঞ্জের অধীন বাগঘরার জঙ্গলেই শিকারিদের বল্লম, টাঙির আঘাতে মৃত্যু হয়েছিল সিমলিপাল ব্যাঘ্র প্রকল্প থেকেই পালিয়ে আসা একটি পূর্ণবয়স্ক রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের। শোনা যায়, বাগঘরার জঙ্গলে শিকারিদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বাঘটি। পাল্টা টাঙি, বল্লম দিয়ে আঘাত করে শিকারিরাও! তাতেই বাঘের মৃত্যু হয়েছিল বলে মনে করা হয়। যদিও, আদালতে এখনো মামলা বিচারাধীন। তবে, যে বা যারাই হত্যা করুক ওই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারকে, মন থেকে মেনে নিতে পারেননি বাগঘরার অধিকাংশ বাসিন্দারাই। তাই, সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে এবার আর না হয়; সেই প্রার্থনা করেই বনদেবীর কাছে ‘মানত’ করেছিলেন তাঁরা!