Corona Hospital

“কিনে খেতে হয় পানীয় জল, অপরিচ্ছন্ন বাথরুম, ওয়ার্ড”, শালবনী করোনা হাসপাতাল পরিদর্শনে রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তা

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৫ জুন: “৪ তলার সেই ওয়ার্ডে ঢুকে দেখলাম, এতক্ষণে আমি পুরোপুরি নরকে পৌঁছে গেছি! তিনটে ভাগে ৬০ জন রোগী থাকার ব্যবস্থা। তখন ছিলেন ৫০ জন। পৃথিবীর কোনো সপ্তম আশ্চর্য দেখতে পাওয়ার মতো আমি চমকে উঠলাম! ২০২০ সাল থেকে চালু হওয়ার পর এই কোভিড ওয়ার্ডে কোনো দিন ঝাঁট পড়ছে বা পরিষ্কার হয়েছে বলে মনে হয় না। প্রত্যেক বেডের নিচে নোংরা আর আবর্জনার স্তূপ…ওয়ার্ড জুড়ে বাথরুমের জল। কোনো বেসিন ব্যবহারের যোগ্য নয়। বাথরুম ব্যবহারের যোগ্য নয়।” এই ছিলো পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার একজন অভিজ্ঞ সাংবাদিক বুদ্ধদেব দাসের নিজের অভিজ্ঞতা! মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের দিকে করোনা সংক্রমিত হওয়ার পর, প্রথমে তিনি ভর্তি হয়েছিলেন জেলার লেভেল ফোর শালবনী করোনা হাসপাতালে! কিন্তু, উপরিউক্ত পরিস্থিতি স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করার পর, মাত্র এক রাত কাটিয়েই তিনি মেদিনীপুর শহরে ফিরে আসেন এবং একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন। শুধু বুদ্ধদেব বাবু নন, এর আগে মেদিনীপুর শহরের নামকরা বাচিক শিল্পী ও শিক্ষিকা সদ্য প্রয়াত মিতালী ত্রিপাঠী কিংবা তাঁর ছাত্র কৃষ্ণেন্দু ঘোষ সমাজ মাধ্যমে শালবনীর পরিষেবা নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছিলেন! এছাড়াও, গত বছরের (২০২০) মতোই, গত ২৪ শে এপ্রিল (২০২১) এক করোনা আক্রান্ত ও চিকিৎসাধীন রোগী চার তলার ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন। পরিষেবার দিকে নজর না দেওয়া প্রভৃতি বিষয় নিয়ে নানা অভিযোগ ছিল শালবনী হাসপাতালের সুপারের বিরুদ্ধেও! সূত্রের খবর অনুযায়ী, শালবনী করোনা হাসপাতালের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ পৌঁছে যায় রাজ্যেও। তাই, আজ (১৫ ই), মঙ্গলবার শালবনী করোনা হাসপাতাল পরিদর্শনে আসছেন রাজ্যের কোভিড ও.এস.ডি (অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি) ডাঃ গোপালকৃষ্ণ ঢালি।

শালবনী করোনা হাসপাতাল :

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কোভিডের প্রথম ঢেউয়ের সময়ও শালবনী করোনা হাসপাতাল নিয়ে নানা অভিযোগ থাকায় একাধিকবার পরিদর্শন হয়েছে রাজ্য ও জেলার তরফে। এসেছিলেন ডাঃ ঢালিও। তারপর থেকে অবশ্য শালবনী করোনা হাসপাতালের পরিষেবা অনেক উন্নত হয়েছিল। দ্বিতীয় ঢেউয়ের শুরুর দিকেও পরিষেবা নিয়ে অভিযোগের থেকে প্রশংসাই বেশি শোনা গেছে রোগীদের মুখে। তবে, রোগীদের চাপ সামান্য বাড়তেই এপ্রিলের শেষ থেকে – মে মাস পর্যন্ত নানা অভিযোগ উঠতে শুরু করে! কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ হল- “কয়েকটি ওয়ার্ডে রোগীরা ডাকলেও তাঁদের ডাকে সাড়া দেননা নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। পানীয় জল কিনে খেতে হয়, অ্যাকোয়াগার্ড থাকলেও তা এতোটাই দূরে সংকটজনক করোনা রোগীরা তা আনতে যেতে পারেন না, বিশেষত যাদের অক্সিজেন চলে! পরিষ্কার করা হয়না বাথরুম ও চারতলার ওয়ার্ড।” এই সমস্ত অভিযোগ সুপার ডাঃ নন্দন ব্যানার্জি’র কানে পৌঁছলেও নাকি তিনি ভ্রুক্ষেপ করেননি বলে অভিযোগ স্থানীয় এক সমাজকর্মীর। এই প্রসঙ্গে সাংবাদিক বুদ্ধদেব দাস নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দিন চারেক আগে লিখেছিলেন- “এরপরে জানলাম এই কোভিড হাসপাতালে রোগীদের পানীয় জল কিনে খেতে হয়। ওয়ার্ড বয়কে ২০০ টাকা দিলাম। একটা হাফ লিটার সহ ২ বোতল জলের দাম ১০০ টাকা। বাকি টাকা তখনই ফেরত নয়। বিস্কুট বা অন্য কিছু খাবার কিনে এডজাস্ট করে নিতে হবে। আমি যেহেতু পরের দিন চলে আসি তাই আমাকে ওই ২ বোতল জল ২০০ টাকাতেই কিনে খেতে হয়েছে….সারারাত জেগেই কাটল। পাশের বেডের কয়েকজন খুব খারাপ পেশেন্ট ছিলেন। অক্সিজেন ঠিকমতো যাচ্ছে না। ডেকেই চলেছেন ‘ও দাদা ও দাদা , ও দিদি ও দিদি, সিস্টার আসুন না একবার।’ না কেউ আসেননি!”

শালবনী করোনা হাসপাতাল :

সূত্রের খবর অনুযায়ী, বুদ্ধদেব বাবু’র ফেসবুক পোস্ট সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পর নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। জেলাশাসক ডঃ রশ্মি কমল’ও নাকি সুপারকে সতর্ক করে দেন। তারপরই, চারতলার ওই ওয়ার্ডের ভোল বদলে যায় বলে খবর! তবে ততক্ষণে, রাজ্যের কাছেও এই খবর পৌঁছে যাওয়ায় দ্রুত পরিদর্শনের নির্দেশ দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। আজ সেই পরিদর্শন হবে বলে জানা গেছে। তবে, শালবনী সম্পর্কে ভালো অভিজ্ঞতাও আছে অনেকের। বিশেষত এইচ ডি ইউ (HDU) ওয়ার্ড এবং তিন তলার মেল ও ফিমেল ওয়ার্ডের পরিষেবা যথেষ্ট ভাল বলে জানা গেছে। শুধু তাই নয়, একাধিক সংকটজনক রোগী শালবনী থেকে সুস্থ হয়ে ফিরেছেন বলেও জানা গেছে। কিন্তু, অপরিচ্ছন্নতা নিয়ে একটা অভিযোগ ছিলোই। শালবনীর এক যুবক সঞ্জয় পাত্র শালবনী করোনা হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে ফিরেছেন মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ নাগাদ। তিনি বললেন, “আমার অবস্থা অনেকটাই সংকটজনক হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু, চিকিৎসক ও নার্সরা যথেষ্ট তৎপরতা দেখিয়েছেন ও সুচিকিৎসা দিয়েছেন। আমি তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞ। তবে, আমাকেও জল কিনে খেতে হয়েছে এবং নীচের এমারজেন্সি ওয়ার্ডের বাথরুম অত্যন্ত অপরিষ্কার। তবে, তিনতলার ওয়ার্ডের বাথরুম পরিষ্কার।” জেলার আরও দু’একজন সাংবাদিকদের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, “আমাদের নিকট আত্মীয়রা শালবনীতে ভর্তি ছিলেন। পরিষেবা খুব খারাপ কখনোই বলবোনা। আন্তরিকভাবে চিকিৎসা করা হয়েছে। তবে, শুনেছি কিছু কিছু ওয়ার্ডে ঠিকঠাক পরিষেবা দেওয়া হয়না এবং বেশি দাম দিয়ে জল কিনে খেতে হয়।” এক্ষেত্রে, সাংবাদিকরা আরও একটি অভিযোগ করেছেন, যেকোনও জরুরি প্রয়োজনে বিএমওএইচ (ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক) ডাঃ নবকুমার দাস এবং শালবনী করোনা হাসপাতালের অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার ডাঃ বিদেশ দে ফোন ধরলেও, সুপার ডাঃ নন্দন ব্যানার্জি ফোন ধরার প্রয়োজন মনে করেন না!

News Desk

Recent Posts

Vidyasagar University: আবহাওয়ার নিখুঁত খবর জানতে ISRO-র সহযোগিতায় আকাশে যন্ত্র লাগানো বেলুন পাঠাল বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৩ জুন: রবিবার (২২ জুন) দুপুর ঠিক ২টো ১…

1 day ago

Midnapore: “১৯৭৮-এর পর এমন ভয়াবহ বন্যা দেখেনি গড়বেতা!” আসরে NDRF-SDRF; প্লাবন পরিস্থিতি চন্দ্রকোনাতেও

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২০ জুন: ১৯৭৮ সালের পর এমন ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির…

4 days ago

Midnapore: মিয়াজাকি, ব্ল্যাকস্টোন থেকে আম্রপালি, হিমসাগর; মেদিনীপুরে জমজমাট ‘আম উৎসব’

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৮ জুন: ৩০ টাকা প্রতি কেজি থেকে ৩ লক্ষ…

6 days ago

Kharagpur: খড়্গপুরের কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ! মৃত্যু এক শ্রমিকের

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, খড়্গপুর, ১৭ জুন: গ্লিসারিন কারখানায় ওয়েল্ডিং- এর কাজ চলাকালীন ভয়াবহ বিস্ফোরণ!…

1 week ago

Midnapore: প্রায় দু’দশক পরে পশ্চিম মেদিনীপুরে শুরু হয়েছিল প্রাথমিকে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া; থমকে গেল আদালতের নির্দেশে

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৬ জুন: ২০০৮ এর পর ২০২৫। দীর্ঘ প্রায় দুই…

1 week ago

Elephant: হাতির পালকে তাক করে ছোঁড়া হচ্ছে একের পর এক জ্বলন্ত হুলা; নেটমাধ্যমে ছবি ছড়িয়ে পড়তেই নিন্দার ঢল

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, খড়্গপুর, ১৩ জুন: হাতির পালকে তাক করে ছোঁড়া হচ্ছে একের পর…

2 weeks ago