দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৫ সেপ্টেম্বর: “শিশুগণ দেয় মন নিজ নিজ পাঠে…”! ছড়ার জগতে যতখানি সত্য, বাস্তবে ততখানি নয়। কারণ, শিশুমন সতত চঞ্চল প্রকৃতির। তাঁকে পাঠে মনোনিবেশ করানোর কাজখানি খুব একটা সহজ নয়! সেজন্যই, প্রাথমিক শিক্ষা করা হয়েছে ‘শিশুকেন্দ্রিক।’ শিশু’র ইচ্ছা-অনিচ্ছা, ভালোলাগা-মন্দলাগার উপর প্রাধান্য দিয়েই শিশুদের পাঠ দিতে হবে। সেজন্য শিক্ষকদের ২ বছরের কঠোর ট্রেনিং (D.El.Ed) বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, আজ থেকে বছর দশেক আগেই। আর, এবার অতিমারীর প্রকোপে প্রায় ২ বছর (২০-২১ মাস) পর যখন শিশুদের জন্য খুলে যাবে বিদ্যালয়ের বন্ধ দরজা, কিভাবে হবে শিশুদের পঠন-পাঠন? তা নিয়েই একটি তিনদিনের কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছিল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খাকুড়দায় অবস্থিত ভগবতী দেবী শিক্ষক শিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে। দীর্ঘ বিরতির পর, শিশুদের বিদ্যালয়ের ছন্দোবদ্ধ পাঠদান প্রক্রিয়ায় ধাতস্থ করে তুলতে এবং প্রায় ২ বছরের বিচ্ছেদের পর দ্রুত তাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে, কিভাবে পাঠদান করা উচিত, বিদ্যালয়ের পরিবেশ সাজিয়ে তোলা উচিত বা সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীর মধ্য দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া উচিত, তা নিয়েই এই কর্মশালা (Workshop)। অংশগ্রহণ করেছিলেন ৪-৫ টা জেলার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকারা। বিশেষজ্ঞ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, অভিজ্ঞ শিক্ষক ও অধ্যাপকরা।

thebengalpost.in
কর্মশালা :

বিশেষজ্ঞদের মতে, শিখন ও পঠন সম্ভার নির্মাণের এই কর্মশালা আগামীতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেবে। বিদ্যালয় খোলার তোড়জোড় ও আয়োজনের সাথে এই শিখন ও পঠন সম্ভার অনুসারী হয়ে উঠবে। ইতিমধ্যে, প্রায় সতেরো মাসের বেশি সময় ধরে স্কুল বন্ধ। শিশুর বুনিয়াদী চর্চা শোনা-বলা-পড়া ও লেখা (learn to read and write) স্বাভাবিক অবস্থায় নেই। অর্থাৎ শিশুর প্রাতিষ্ঠানিক শিখন স্তব্ধ। অথচ তার বেড়ে ওঠার জন্য যা ছিল অবশ্যম্ভাবী। করোনা অতিমারিতে ‘রুদ্ধ শিখন’ নানান পথ ধরে চলেছে। কিন্তু, তা কখনোই সরাসরি বিদ্যালয় শিক্ষার পরিপূরক হতে পারেনা। কারণ বাড়ি কখনোই সামাজিক ভাবে বিদ্যালয়ের সম্প্রসারণ হতে পারেনা। বললেন জাতীয় শিক্ষক উৎপল মুখোপাধ্যায় এবং শিক্ষা আলোচনার রাজ্য কমিটির সদস্য সুমন দাস। অন্যদিকে, ভগবতী দেবী শিক্ষক শিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ডাঃ সিদ্ধার্থ মিশ্র বললেন, “আগামীতে স্কুল খুলে গেলে, আমাদের শিখন প্রক্রিয়া ,পড়াশোনা এগোবে কোনদিকে? বিশেষ করে প্রাথমিক স্তরে ? স্বাস্থ্যের নিরাপত্তা, খাদ্যের প্রতুলতা, জীবিকার বন্দোবস্ত- এইসব করার পর পড়াশোনা আসবে। সেক্ষেত্রে আমরা কতটা তৈরি ? শিশুর শিখন ও মানসিক গ্যাপ আমরা কতটা কমাতে পারব ? খুলে যাওয়া বিদ্যালয়ে শিশুদের কতটা সম্পৃক্ত করতে পারব ? এই সমস্ত প্রশ্নের আনাগোনা শুরু হয়ে গেছে। সেই জায়গা থেকেই আমাদের এই ভাবনা। আমরা যদি আগেভাগেই তৈরি ও প্রস্তুতি নিয়ে থাকি তাহলে তো আমাদেরই সোনার কাঠি শিশুদের একটু স্বাচ্ছন্দ্যের জায়গায় পৌঁছে দিতে পারব। সেই ভাবনাকে রূপ দিতেই এবং প্রয়োগ পরিকল্পনার জন্যই শিক্ষা আলোচনার এই কর্মশালা।”

thebengalpost.in
আলোচনায় বিশেষজ্ঞরা :