মণিরাজ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১ জুন: তিন বোন এক ভাই। বাবা নিমাই মাহাত নিজেদের সামান্য জমিতে চাষাবাদ করেন। মা জ্যোৎস্না মাহাত গৃহবধূ। বাড়ি জঙ্গলমহল পশ্চিম মেদিনীপুরের একদা মাও ‘আঁতুড় ঘর’ পিড়াকাটা থেকে আরও ৬-৭ কিলোমিটার দূরে জঙ্গলের মাঝে প্রত্যন্ত কুমিরকাতা (ভীমপুর সংলগ্ন) গ্রামে। হাতির ভয় উপেক্ষা করেই সরকারের দেওয়া ‘সবুজ সাথী’ সাইকেলে চেপে প্রতিদিন স্কুল আর টিউশনের ব্যাচে যাতায়াত। সমস্ত বাধা-বিপত্তিকে জয় করে, অভাবের সংসার থেকে কিছুটা স্বপ্নের মতোই উত্থান ফুলমণি মাহাত’র! পিড়াকাটা উচ্চ বিদ্যালয়ের ‘গর্ব’ ফুলমণি (Fulmoni Mahata)’র সৌরভে মাতোয়ারা এখন গোটা শালবনী ব্লক-ই। উচ্চ মাধ্যমিকে প্রায় ৯৪ (৯৩.৮) শতাংশ নম্বর (৪৬৯) পেয়ে পিড়াকাটা উচ্চ বিদ্যালয় (উচ্চ মাধ্যমিক)’র ফুলমণি এবার জঙ্গলমহল শালবনী ব্লকের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ (সম্ভাব্য) নম্বর প্রাপক। সর্বোচ্চ (সম্ভাব্য) ৪৮২ নম্বর পেয়েছে ভাউদি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী ঋত্বিকা মন্ডল। ঋত্বিকা ও ফুলমণি- দু’জনই কলা বিভাগের ছাত্রী। ভূগোল সহ ৩টি বিষয়ে ৯৬ নম্বর পেয়েছে ফুলমণি। ইচ্ছে ভূগোল নিয়ে পড়াশোনা করার। শিক্ষিকা হতে চায় প্রত্যন্ত কুমিরকাটা এলাকার মাহাত পরিবারের এই মেজ মেয়ে। দিদির বিয়ে হয়ে গেছে। ছোটো বোন আর ভাইও পিড়াকাটা উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। বাড়িতে অভাব-অনটনের কারণে, ফুলমণি বড় হয়েছে মামাবাড়ি রামেশ্বরপুরে (কুমিরকাতার পাশের গ্রাম)। ফুলমণি বলে, “আমার দাদু (মামাতো দাদু ছত্রধর মাহাত)-ই আমার টিউশনের খরচ দিতেন। তবে, আমার রেজাল্ট বেরোনোর কয়েকদিন (১৫ দিন) আগেই উনি পরলোকগমন করেন!” দাদু না থাকলেও, তাঁর আশীর্বাদকে পাথেয় করেই আরো এগোতে চায় ফুলমণি। বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা জানান, তাঁরা‌ বরাবরের মতোই ফুলমণির পাশে থাকবেন।

thebengalpost.net
ফুলমণি মাহাত:

অন্যদিকে, এবার (২০২৩) মাধ্যমিকের ফলাফল অনুযায়ী, শালবনী ব্লকের সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপক পিড়াকাটা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র সোহম ঘোষ (Soham Ghosh)। একদা মাও অধ্যুষিত পিড়াকাটার বাসিন্দা সোহম এবার মাধ্যমিকে ৬৬৭ (৭০০’র মধ্যে) নম্বর (৯৫.২৮ শতাংশ) পেয়ে শালবনী ব্লকে প্রথম স্থান (সম্ভাব্য) অধিকার করেছে। বিজ্ঞান (Science) নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেছে সোহম। মেডিক্যালের প্রবেশিকা নিট (NEET)’র জন্যও প্রস্তুতি নিচ্ছে সে। বাবা সৌভিক ঘোষ পিড়াকাটা উচ্চ বিদ্যালয়েরই শিক্ষাকর্মী (গ্রুপ-ডি স্টাফ)। মা মালা ঘোষ গৃহবধূ। এক সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান সোহম কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমেই এই সাফল্য পেয়েছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অতনু মন্ডল। সোহম জানায়, “বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সাহায্য পেয়েছি প্রতি মুহূর্তে। বিজ্ঞান ও ইংরেজি বিষয়ের জন্য টিউশনের ব্যাচে পড়তাম। পরীক্ষার আগে নিয়মিত ৭-৮ ঘন্টা পড়াশোনা করেছি।” চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন রয়েছে সোহমের। এদিকে, একদা মাও ‘আঁতুড় ঘর’ পিড়াকাটার এই জোড়া সাফল্যে গর্বিত এলাকাবাসী!

thebengalpost.net
বাবা-মা’র সঙ্গে সোহম :