thebengalpost.net
ডিআই অফিস, পশ্চিম মেদিনীপুর:

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৩১ মার্চ: এ যেন “বাঘের ঘরেই ঘোগের বাসা!” খোদ ডিআই (District Inspector of School) অফিসের iQSMS স্যালারি পোর্টালের ‘পাসওয়ার্ড’ (Password) চুরি করে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শালবনী ব্লকের ভীমপুরে অবস্থিত ভীমপুর এবিএম গার্লস হাই স্কুল এবং ভীমপুর সাঁওতাল উচ্চ বিদ্যালয়ের মোট ৪ জন ‘ভুয়ো’ শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী-কে গত প্রায় ৬ মাস ধরে বেতন দেওয়ার অভিযোগ উঠল! অভিযোগকারী আবার স্বয়ং জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক বা ডিআই (মাধ্যমিক) স্বপন কুমার সামন্ত। ইতিমধ্যেই তিনি শালবনী থানার দ্বারস্থ হয়েছেন। এ প্রসঙ্গে এও উল্লেখ্য যে, শালবনী থানাতে এই দুই স্কুলের ‘বেআইনি নিয়োগ প্রক্রিয়া‘ নিয়ে গত প্রায় দু-তিন বছর ধরে তদন্ত চলছে। মামলা চলছে কলকাতা হাইকোর্টেও। আর তার মধ্যেই ডি.আই অফিসের তথা স্যালারি পোর্টালের পাসওয়ার্ড চুরি করে ৪ জন ভুয়ো বা অবৈধভাবে নিয়োগ হওয়া শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীকে বেতন দেওয়াও চলছে!

thebengalpost.net
ভীমপুর সাঁওতাল উচ্চ বিদ্যালয়:

ডি.আই অফিসের একটি সূত্রে জানা গেছে, এই দু’টি স্কুল পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে খ্রিস্টান সার্ভিস সোসাইটি। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা কিংবা শিক্ষাকর্মী নিয়োগ এই সোসাইটি করে। তবে, প্যানেলের অনুমোদন দেওয়া থেকে শুরু করে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেতন দেওয়া, এসব হয় জেলা শিক্ষা দপ্তর বা ডিআই অফিসের মাধ্যমে। অভিযোগ, এই সোসাইটির ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী গত কয়েক বছর ধরেই বেআইনিভাবে বা অবৈধভাবে (ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত সহ শিক্ষকদের উপযুক্ত যোগ্যতার তোয়াক্কা না করেই) ভুরি ভুরি শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগ করে চলেছে ভীমপুরের এই দু’টি স্কুলে। এর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন সোসাইটির অধীন অন্য একটি গোষ্ঠীর সদস্যরা সহ কিছু চাকরিপ্রার্থী এবং এবিএম গার্লস হাই স্কুলের প্রাক্তন টিচার ইনচার্জও। তবে তাতে বিশেষ কাজ হয়নি! তৎকালীন ডিআই চাপেশ্বর সর্দার (বর্তমানে, পূর্ব মেদিনীপুরের একটি স্কুলের মামলায় জেলে আছেন) সহ জেলা শিক্ষা দপ্তরের একটি অসাধু-চক্রের সৌজন্যে সোসাইটির ক্ষমতাসীন ওই গোষ্ঠী তদন্ত বা মামলা চলাকালীনও ‘বেআইনিভাবে’ শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগ করেছেন। তাঁদের মধ্যেই চার শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী হলেন যথাক্রমে- মেদিনীপুর শহরের বাসিন্দা অনিন্দ্য দাস মহাপাত্র (ভীমপুর সাঁওতাল উচ্চ বিদ্যালয়; মৌমিতা দাস (ভীমপুর এবিএম গার্লস হাই স্কুল); অনুরণন সেখ (ভীমপুর এবিএম গার্লস হাই স্কুল) এবং সৌভিক দাশগুপ্ত (ভীমপুর এবিএম গার্লস হাই স্কুল)। গত বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে প্রথম তিনজনের বেতন বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন ডিআই। কিন্তু, তারপরও ডিআই অফিসের একটি অসাধু চক্রের ‘কৃপায়’ তাঁরা বাড়িতে বসেই বেতন পেয়ে চলেছেন বলে অভিযোগ!

অপরদিকে, জেলা শিক্ষা দপ্তর বা ডিআই অফিসের এক ক্লার্কের নিকটাত্মীয় সৌভিক দাশগুপ্তের নিয়োগ কিভাবে হয়েছে, তা নাকি স্বয়ং ডিআই-ও জানেন না! বিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বা উপস্থিতির (attendence) খাতাতেও সৌভিকের কোনো সই বা স্বাক্ষর নেই। তা সত্ত্বেও গত জুলাই (২০২৩) থেকে তিনি বহাল তবিয়তে বেতন পেয়ে চলেছেন! বর্তমান ডিআই তাই শেষ পর্যন্ত পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন (গত ১৩ মার্চ) এবং অনিন্দ্য দাস মহাপাত্র বাদে বাকি ৩ জনের বাড়ির ঠিকানা চেয়ে এবিএম গার্লস হাই স্কুলের বর্তমান টিচার ইনচার্জকে চিঠি পাঠিয়েছেন গত ২৮ মার্চ। যদিও, ডিআই স্বপন কুমার সামন্ত এই বিষয়ে সংবাদমাধ্যমের সমনে কিছু বলতে চাননি! শুধু জানিয়েছেন, “পুলিশ তদন্ত করছে।” অন্যদিকে, তদন্তকারীদের একটি সূত্রে জানা গেছে, তদন্ত চলছে। তবে, বিষয়টি কলকাতা হাইকোর্টেও বিচারাধীন। তা সত্ত্বেও ডিআই-র সাহায্য পেলে তাঁর অফিসের অসাধু কর্মীদের চিহ্নিত করে, উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

thebengalpost.net
ডিআই অফিস, পশ্চিম মেদিনীপুর: