Education

বরাদ্দ ১০৯ কোটি, পুজোর পরই খুলছে স্কুল! ‘দিদিমণি’ ডাক শোনার অপেক্ষায় সবংয়ের ৫৯ বছরের শিক্ষিকাও

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, কলকাতা ও পশ্চিম মেদিনীপুর, ৭ অক্টোবর: সবকিছু যদি স্বাভাবিক থাকে, পুজোর পাঠ চুকে গেলেই শুরু হচ্ছে বিদ্যালয়ের পাঠ! রাজ্য সরকারের তরফে তেমনই ইঙ্গিত মিলেছে। সেইমতো বিদ্যালয়গুলিকে প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। প্রায় দু’বছর পর, পাকাপাকিভাবে খুলতে চলেছে স্কুল। এই সময়ের মধ্যে রাজ্যের উপর দিয়ে বয়ে গেছে আমফান, ইয়াশ, গুলাব প্রভৃতি। সর্বোপরি, দুই মেদিনীপুর, দুই চব্বিশ পরগণা, হাওড়া, হুগলি প্রভৃতি জেলাগুলি অন্তত ৩-৪ বার করে প্লাবিত হয়েছে। বাঁকুড়া, পশ্চিম বর্ধমান প্রভৃতি জেলাও বন্যার মুখোমুখি হল। ‘নগর পুড়িলে কি দেবালয় এড়ায়’ প্রবাদবাক্যের মতোই, এইসব জেলার বিদ্যালয়গুলিও তাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাজ্যের অন্যান্য এলাকার বিদ্যালয়ও। তাই, বিদ্যালয়গুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, ক্ষতির পরিমাণ এবং সংস্কারের আনুমানিক মূল্য, নির্দিষ্ট পদ্ধতি ও প্রকরণ অনুযায়ী সাজিয়ে সরকারের কাছে আবেদন করার জন্য। এজন্য নির্দিষ্ট সময়ও বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। তবে, সেই সময়ের মধ্যে অনেক বিদ্যালয়ই আবেদন করে উঠতে পারেনি। যারা তা পেরেছে, সেই রকমই ৬৪৬৮টি স্কুল মেরামতির জন্য ১০৯ কোটি ৪২ লক্ষ ৩৭ হাজার ১৩৩ টাকা মঞ্জুর করেছে রাজ্য সরকার।

বিদ্যালয় সংস্কারের জন্য বরাদ্দ হল অর্থ :

জানা গেছে, পুজোর পরে স্কুল খোলা এবং তার জন্য স্কুলের চেয়ার-টেবিল-বেঞ্চ থেকে শৌচাগার সহ ভবনের পরিকাঠামো সংস্কারের জন্য এই টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। তবে, অর্ধেকের বেশি স্কুল এই তালিকায় নেই সঠিক সময়ে বা সঠিক পদ্ধতি মেনে আবেদন করতে না পারায়। বিশেষত, দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, হাওড়া প্রভৃতি জেলার বেশিরভাগ স্কুলই ক্ষতিগ্রস্ত! তাহলে তাদের কি হবে? এই প্রশ্ন তুলেই বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন দাবি করেছে, আরও একবার আবেদন করার সুযোগ দিক অথবা সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনকে দিয়ে পরিদর্শন করিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক। প্রধান শিক্ষকদের একটি সংগঠনের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা নেতৃত্বের তরফে ড. অমিতেশ চৌধুরী জানিয়েছেন, “ক্ষতিগ্রস্ত স্কুলগুলি যদি কোনোভাবে আবেদন করে উঠতে নাও পারে, তবুও জেলা প্রশাসন অথবা জেলা বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তরের পক্ষ থেকে দায়িত্ব নিয়ে সেই বিদ্যালয়ের পরিস্থিতি বিচার করে, রাজ্যের কাছে রিপোর্ট পাঠানো উচিত। কারণ, এই দু’বছরে যে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হতে হয়েছে তা অবর্ণনীয়! সুন্দরবন থেকে সবং, পাথরপ্রতিমা থেকে পটাশপুর, ঘাটাল থেকে ভগবানপুর, পিংলা থেকে হাওড়া প্রভৃতি এলাকার বিদ্যালয়, ঘরবাড়ি সবকিছুই ব্যাপকভাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই সমস্ত এলাকার একটি বিদ্যালয়ও যদি সংস্কারের অর্থ থেকে বঞ্চিত হয়, তা দুর্ভাগ্যজনক!” তবে, যাই হোক না কেন, শিক্ষামন্ত্রীর সাম্প্রতিক বক্তব্য কিংবা বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তরের তোড়জোড় থেকে মনে হচ্ছে নভেম্বর দ্বিতীয় অথবা তৃতীয় সপ্তাহেই খুলতে চলেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি।

জারি করা হয়েছে নির্দেশিকা :

এদিকে, আদালতের নির্দেশে প্রিয় ২৫ বছর পর প্রাথমিক শিক্ষকের নিয়োগপত্র পেলেন অবিভক্ত মেদিনীপুরের ১১ জন চাকরিপ্রার্থী। সোমবার রাত সাড়ে ৯ টায় পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ অফিস থেকে চাকরি প্রার্থীদের হাতে নিয়োগপত্র তুলে দেওয়া হয়। জরুরি ভিত্তিতে মঙ্গলবার (৫ অক্টোবর) এই ১১ জনই চাকরিতে যোগদান করেন। দীর্ঘ লড়াইয়ের পর এই নিয়োগপত্র পেয়ে চোখে জল এসে যায় অধিকাংশের! জীবনের শেষ বয়সে এসে চাকরি পাবেন ভাবেননি কেউই। অসীম ধৈর্য্যের পরীক্ষা দিয়ে নিয়োগপত্র পেয়ে আপ্লুত সকলেই! প্রায় অবসরের বয়সে এসে চাকরি পেলেও ভীষণ খুশি মেনকা মুন্ডা বিষই, অশোক কুমার গরাই, নিত্যানন্দ দোলই, বলরাম বসন্ত, বিমল হারা, পূর্ণ চন্দ্র বারিক’রা। মাত্র ১৫ মাস চাকরি করবেন সবংয়ের মাসুমপুরের মেনকা মুন্ডা বিষই! ছলছল চোখে তিনি বুধবার জানালেন, “সত্যের জয় হলো। দীর্ঘ লড়াইয়ের পর এই চাকরি অনেক বেশি মর্যাদার। অনেক আবেগের। অনেক সম্মানের। ১৫ মাস চাকরি করলেও, ছাত্রছাত্রী, এলাকার মানুষ আমাকে ‘দিদিমণি’ বলবে এতেই সন্তুষ্ট। এর চেয়ে বড় পাওনা আমার কাছে আর কিছু নেই। এই ‘দিদিমণি’ ডাকটা শোনার জন্যই এতকাল অপেক্ষা করে আছি!” মেনকার চাকরির খবরে খুশি স্বামী, দুই মেয়ে-জামাই, ছেলে-বউমা, নাতি-নাতনিরাও। আর, মেনকা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছেন, কবে খুলবে স্কুল; কবে কচিকাঁচারা তাঁর উদ্দেশ্যে ডেকে উঠবে- ‘দিদিমণি….ই…’!

৫৯ বছরের মেনকা মুন্ডা বিষই-কে মিষ্টি মুখ করালেন চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দু বিষই :

(প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মেনকা মুন্ডা বিষই এর মাত্র ৯ মাস চাকরি বাকি আছে, এরকম একটি তথ্য এর আগের প্রতিবেদনে আমরা দিয়েছিলাম, তথ্য গ্রহণে সামান্য ভুল হয়েছিল। ওনার বয়স এই মুহূর্তে ৫৮ বছর ৯ মাস, তাই ১৫ মাস চাকরি করবেন বলে জানা গেছে।)
***পড়ুন : অবসরের বয়সে চাকরি পেলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের ১১ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা….

News Desk

Recent Posts

Ghatal Flood: নদীতেই ‘রোপওয়ে’? চন্দ্রকোনায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পড়ুয়াদের যাতায়াত; প্লাবিত ঘাটালে তলিয়ে মৃত্যু এক ব্যক্তির

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৮ আগস্ট: বানভাসি ঘাটালের দুর্যোগের নানা চিত্র! কোথাও সেতু…

6 hours ago

Midnapore: স্ত্রী-র পরকীয়া ধরে ফেলেছিলেন, ভাতের সাথে বিষ মিশিয়ে পুরো পরিবারকেই খুনের ছক, মৃত্যু স্বামীর; সিনেমাকেও হার মানাবে ডেবরার ঘটনা

শশাঙ্ক প্রধান, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৬ আগস্ট: স্ত্রী-র পরকীয়ার বলি স্বামী! মৃত স্বামীর নাম বুদ্ধদেব দোলাই…

2 days ago

Medinipur: গড়বেতার নির্জন এলাকায় রেললাইনে হঠাৎ বিকট ‘শব্দ’, থমকালো রাজধানী! নমুনা সংগ্রহের পর ফরেন্সিক দল যা জানাল…

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৫ আগস্ট: শিলাবতী নদীর উপর রেলওয়ে ব্রিজ। তার উপরই…

4 days ago

Midnapore: একদিকে চন্দ্রযান, অন্যদিকে হরিনাম; শিক্ষা-সংস্কৃতি-বিজ্ঞান-ক্রীড়া ও পরিবেশের অভূতপূর্ব মেলবন্ধন বিদ্যাসাগর শিশু নিকেতনের বার্ষিক প্রদর্শনীতে

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৩ আগস্ট: আধুনিক যুগের বিজ্ঞান থেকে সনাতন সংস্কৃতি, যোগব্যয়াম-খেলাধুলার…

6 days ago

Kharagpur: নতুন কারখানায় কাজ শুরু করবে রশ্মি মেটালিক্স, বাধা সৃষ্টি হলে পুলিশের পদক্ষেপ; নির্দেশ আদালতের

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৩ আগস্ট: নতুন কারখানায় অবিলম্বে কাজ শুরু করতে পারবেন…

6 days ago

Midnapore: মেদিনীপুরের একটি বুথেই ৪৯ জন ‘মৃত’ ভোটার, মৃত্যুর ৭ বছর পরও বাদ পড়েনি নাম! প্রশাসনের ঘাড়েই দায় চাপালেন BLO

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২ আগস্ট: SIR-এর নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজ্য-রাজনীতি উত্তাল। এই ইস্যুতে…

6 days ago