দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৩ নভেম্বর: দীপাবলির আগেই ভাঙা ঘরে খুশির আলো! সাফল্যের রোশনাই। ভাগ চাষির মেধাবী সন্তান সর্বভারতীয় মেডিক্যাল প্রবেশিকায় (NEET- National Eligibility Cum Entrance Test) চূড়ান্ত সফল। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা ফের একবার আলোকিত হল শুভম ঘোষের সাফল্যের গৌরবে। ডাক্তারি পড়ার সর্বভারতীয় প্রবেশিকা পরীক্ষায় (NEET) ৭২০ মধ্যে শুভম পেয়েছে ৬৭৬। তার অল ইন্ডিয়া জেনারেল র্যাঙ্ক ১১০২ (আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া শ্রেণীতে ১০১)। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাসপুরের সুলতাননগরের দিলীপ ঘোষের পরিবারে তাই খুশির যেন বাঁধ ভেঙেছে! দিলীপ বাবুর সংসার চলে ১০০ দিনের কাজ আর ভাগের জমিতে চাষ করে। তাঁর ছেলেই এবার জেলার অন্যতম গর্ব! MBBS পড়ার সুযোগ পাওয়া গ্রামের প্রথম সন্তান। শৈশব থেকেই মেধাবী শুভম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষাতেও ভালো রেজাল্ট করেছিল। দাসপুরের কলোড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিল সে। উল্লেখ্য যে, অবিভক্ত মেদিনীপুরের মধ্যে সেরা র্যাঙ্ক (৮২) দখলকারী অনির্বাণ দে’ও পশ্চিম মেদিনীপুরেরই (মেদিনীপুর শহরের) সন্তান। স্বভাবতই দীপাবলির আগেই জেলা জুড়ে যেন খুশির ঝর্ণাধারা বয়ে যাচ্ছে!
আপাত লাজুক স্বভাবের শুভমের অন্তরে লুকিয়ে ছিল এক তীব্র জেদ! ২০২০-তে নিট এর ফলাফল অনুযায়ী, কোন সরকারি মেডিক্যাল কলেজে সুযোগ পায়নি শুভম। জেদ চেপে বসে। একবছরের কঠোর পরিশ্রম। নিবিড় অধ্যাবসায়। অবশেষে সাফল্য এল ২০২১ এ। র্যাঙ্কের বিচারে এই রাজ্য কিংবা দেশের কোনো সরকারি মেডিক্যাল কলেজ থেকে ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পেয়ে যাবে শুভম। শুভম জানায়, তার এই ডাক্তারি পড়ার ইচ্ছে জন্মেছিল একাদশ শ্রেনীতে এসে। ২০২০’তে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে সে এবং প্রথমবারের জন্য ডাক্তারির এই সর্বভারতীয় প্রবেশিকায় বসে। ফল আশানুরূপ হয়নি। তারপর, একবছর ধরে শুধুই নিটের জন্য পড়াশোনা করেছে সে। সেই অর্থে কোনো গৃহ শিক্ষকই ছিলনা। গৃহশিক্ষক রাখার মতো আর্থিক পরিস্থিতি তার বাবার ছিলওনা। তবে, অনেক শিক্ষকই সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন তার প্রতি। তাঁদের সাহায্য নিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করেছে শুভম। কঠোর অধ্যাবসায়ের ফল পেয়েছে! বাড়িতে এখন শুভেচ্ছার বন্যা। বাবা দিলীপ ঘোষ কিংবা মা চিনা দেবী, দু’জনের চোখেই জল! মা বললেন, “ছোটো থেকেই ছেলেটা মুখচোরা। নিজের পড়াশোনা নিয়েই থাকে। খাওয়া-পরা কোনো কিছুতেই ওর জেদ, বায়না নেই! একটাই জেদ পড়াশোনার।” শুভম বলল, “একজন ভালো চিকিৎসক হওয়াই লক্ষ্য।”