দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৩ মে: বাবা সিভিক ভলেন্টিয়ার। মেয়ে লাবনী প্রথম থেকেই মেধাবী। মাধ্যমিকে এবার ৬৪৭ (৯২.৫ শতাংশ) নম্বর পেয়ে ‘গর্বিত’ করেছে বাবা-মা সহ স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। একদা মাও আঁতুড়ঘর হিসেবে পরিচিত পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শালবনী ব্লকের পিড়াকাটা সংলগ্ন বহড়াবনি এলাকার বাসিন্দা সেই লাবনী বিজ্ঞান শাখায় পড়ে ডাক্তার হতে চায়। কিন্তু, তার ‘স্বপ্ন’ ঘিরেই দেখা দেয় ঘোর অনিশ্চয়তা! লাবনীর বাবা, পেশায় শালবনী থানার অধীন পিড়াকাটা পুলিশ ফাঁড়ির সিভিক ভলেন্টিয়ার কিনু মাহাত আমাদের জানিয়েছিলেন, “মেয়ে ডাক্তার হতে চায়। কিন্তু, ওকে পড়ানোর বা নিটের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য এত টাকা কোথায় পাব? আমি যেটুকু বেতন পাই আমাদের চারজনের (স্ত্রী ও দুই মেয়ে সহ) সংসার চালাতেই সব শেষ হয়ে যায়!” খবর পাওয়ার পরই পিড়াকাটা উচ্চ বিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রী লাবনী ও তার বাবা কিনু-কে আশ্বস্ত করেন। সেইসঙ্গেই তিনি জানান, “লাবনীর পড়াশোনা বা স্বপ্ন পূরণে বাধা হবে না অর্থ। আমরা সর্বতোভাবে ওর পাশে থাকব।”

thebengalpost.net
লাবনী মাহাত:

thebengalpost.net
বিজ্ঞাপন (Advertisement):

মাত্র দু’সপ্তাহের মধ্যেই প্রতিশ্রুতি পূরণ করলেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পুলিশ সুপার আইপিএস ধৃতিমান সরকার। বৃহস্পতিবার (২২ মে) দুপুরে জেলা পুলিশ সুপারের পক্ষ থেকে লাবনীর হাতে তুলে দেওয়া হয় আর্থিক সহায়তা। পুলিশ সুপারের নির্দেশে জেলা পুলিশের আধিকারিকরা শালবনী থানার অধীন পিড়াকাটা পুলিশ ফাঁড়িতে গিয়ে লাবনী ও তার বাবা সিভিক ভলেন্টিয়ার কিনু মাহাত-র হাতে এককালীন আর্থিক সহায়তা তুলে দিয়েছেন। সেই সঙ্গে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে লাবনীকে সংবর্ধিতও করা হয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় লাবনীর বাবা কিনু মাহাত নিজেই সেই খবর দিয়ে জানান, “আমি গর্বিত, আপ্লুত। আমার চোখে জল এসে যাচ্ছে!” কিনু এও জানান, “আমি পুলিশ আধিকারিকদের কাছে আবেদন জানিয়েছিলাম, মাসে মাসেও যদি কিছু আর্থিক সাহায্য করা হয়, তাহলে মেয়েটা খুব ভালোভাবে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবে। এরপরই ওঁরা আমাকে ফোনে পুলিশ সুপারের সাথে কথা বলিয়ে দেন। স্যার সেই আশ্বাসও দিয়েছেন।” জেলা পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার জানান, “লাবনীর পাশে দাঁড়াতে পেরে আমিও খুশি। এটাই চাইব, নিজের লক্ষ্যে ও এগিয়ে যাক। নিজের পরিবার, শিক্ষক-শিক্ষিকা সহ আমাদের সকলকে গর্বিত করুক।” পিড়াকাটা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অতনু মণ্ডল এবং স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি পিন্টু ওঝা বলেন, “এক সময়ের মাওবাদী অধ্যুষিত এই এলাকার ছেলেমেয়েরা আজ আমাদের গর্ব। ওদের আরও সাফল্য কামনা করি। লাবনীর পাশে দাঁড়ানোর জন্য ধন্যবাদ জানাই জেলা পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকারকেও।”

thebengalpost.net
লাবনীর পাশে পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার:

প্রসঙ্গত, পিড়াকাটার বহড়াবনি গ্রামের বাসিন্দা কিনু মাহাতের দুই মেয়ের মধ্যে লাবণীই বড়। একচিলতে মাটির বাড়িতে কোনও মতে দিন কাটে চারজনের। পিড়াকাটা পুলিশ ফাঁড়িতে সিভিক ভলান্টিয়ার হিসেবে কর্মরত কিনু। সামান্য বেতনে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাঁকে। লাবনীর মা রীনা মাহাত গৃহবধূ। তাঁদের একচিলতে মাটির ঘরেই মেধার ‘আলো’ নিয়ে এসেছে লাবনী। যদিও, সাময়িক সময়ের জন্য দুশ্চিন্তার এক প্রগাঢ় অন্ধকার যেন ঘনিয়ে এসেছিল বহড়াবনির ওই মাহাত পরিবারে। তবে সেই ‘অন্ধকার’ দূর করে ফের লাবনীদের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার।

thebengalpost.net
পিড়াকাটা উচ্চ বিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রী লাবনী মাহাত: