দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৮ জুলাই: রথের রশি ধরে টান দিচ্ছে খুদেরা। বাবা-মা-দাদা-দিদি’রা বলে উঠছেন, “জয় জগন্নাথ…জয় জগন্নাথ!” কচি হাতে টানা সুসজ্জিত রথ এগিয়ে চলেছে ঘাসের সবুজ গালিচার উপর দিয়ে। শুধুই হাততালি নয়! বিচারকদের তীক্ষ্ণ নজরও রয়েছে প্রতিটি রথের উপর। ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রতি অল্পবয়স থেকেই খুদেদের উৎসাহিত করতে রথযাত্রা (৭ জুলাই)-র দিন এমনই অভিনব প্রতিযগিতার আয়োজন করা হয়েছিল জেলা শহর মেদিনীপুরের মিত্র কম্পাউন্ড এলাকায়। রবিবার (৭ জুলাই) বিকেলে মিত্র কম্পাউন্ড উন্নয়ন সমিতির উদ্যোগে কিছুটা কার্নিভালের ধাঁচে এই আয়োজন করা হয় মিত্র কম্পাউন্ড পার্কে। নিজেদের এলাকা ঘুরে বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ নিজেদের সুসজ্জিত রথ নিয়ে মিত্র কম্পাউন্ড পার্কে চলে এসেছিল কচিকাঁচার দল।
শাঁখ, কাঁসর, ঢোল নিয়ে তৈরি ছিলেন পরিবারের বড়রাও। রথের রশি টেনে নিয়ে গেল পরিবারের খুদে সদস্যটি। কারও পরনে ধুতি, কেউ পরেছে পাজামা-পাঞ্জাবি, কেউ আবার কেপরি কিংবা ফ্রক। কেউ মাথায় বেঁধেছে পাগড়ি, কেউ পরেছে ফুলের হেয়ারব্যান্ড। পাশে পাশে হেঁটে কখনও রথ সামলে উৎসাহ দিলেন বাবা-মা। আবার কখনও শাঁখ-কাঁসর বাজাতে বাজাতে কাকা-কাকিমা, দাদু-ঠাকুমা, দাদা-দিদিদের দল চেঁচিয়ে উঠলেন ‘জয় জগন্নাথ’ বলে। রীতিমতো হইচই, হুল্লোড়ের মধ্য দিয়ে চলে প্রতিযোগিতা। দু’-চারটে নয়, রীতিমতো ২০টি রথের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই!
প্রতিটি রথের নামকরণও করা হয়েছিল পরিবারের নামানুসারে। মিত্রবাড়ির রথ, ঘোষবাড়ির রথ, রানাবাড়ির রথ, সেনবাড়ির রথ, মুখুজ্জে বাড়ির রথ কিংবা ব্যানার্জি বাড়ির রথ। কারও রথ ফুলে সাজানো, কারও বা বাহারি পাতায়! কোনও রথ আবার সেজেছে রংচঙে কাগজে। হাতে খাতা-পেন নিয়ে গুরুগম্ভীর বিচারকেরা খুঁটিয়ে দেখলেন রথের খুঁটিনাটি। প্রায় ঘণ্টাখানেক পরে শেষ হয় প্রতিযোগিতা। রথের সাজ শুধু নয়, তার পিছনে ভাবনা, পরিকল্পনা, শোভাযাত্রা সবকিছুর উপর নির্ভর করেই নম্বর দিয়েছেন বিচারকেরা। পুরস্কৃত করা হয়েছে প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থানাধিকারীদের। উদ্যোক্তাদের পক্ষে মিত্র কম্পাউন্ড উন্নয়ন সমিতির সম্পাদক সুজিত বসু বলেন, “আমরা দেখেছি রথের দিন শিশুরা ছোট ছোট রথ নিয়ে নিজেদের পাড়ার রাস্তায় এখানে-ওখানে ঘুরে বেড়ায়। তাই আমরা ভাবলাম, ওদের যদি একটা প্রতিযগিতার মাধ্যমে এক জায়গায় আনা যায়, তাহলে মন্দ হয় না। কিছুটা কার্নিভালের স্বাদও পাওয়া যাবে। আগে থেকে নাম লেখাতে বলেছিলাম। ১৪টি দল আমাদের কাছে নাম লিখিয়েছিল। কিন্তু, প্রতিযগিতার সময় শিশুদের ২০টি দল রথ নিয়ে হাজির হয়ে যায়। প্রথমবার নিয়মের কড়াকড়ি না করে সবাইকেই অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়েছি।” তাঁর সংযোজন, “আমরা প্রথম বছরেই যে ভাবে সাড়া পেয়েছি, তাতে ভবিষ্যতে আরও ভালো ভাবে পরিকল্পনা করে উদ্যোগ নেব।” প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া অস্মিত বন্দ্যোপাধ্যায়, শিবম মিত্র, অঙ্কন রানা, অরিত্রিক মজুমদার, দৃশান ঘোষরা বলে, “রথ নিয়ে তো প্রতি বছর পাড়ায় পাড়ায় ঘুরি। এ বার পার্কে এলাম। রথ টেনে পুরস্কারও পেয়েছি। একসঙ্গে এত রথ দেখে খুব ভালো লাগছে। খুব মজা করেছি আমরা।” প্রবীণরা বললেন, “দারুণ অনুভূতি! এমন কম্পিটিশন আমরা তো কোনও দিন দেখিনি। ইদানিং টিভি-মোবাইলের দৌলতে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে পুজোর পর বিসর্জনের কার্নিভাল বা শোভাযাত্রা দেখি। খুব ভালো লাগে। এদিন আমাদেরই নাতি-নাতনিদের এই রথযাত্রার কার্নিভালও খুব উপভোগ করলাম। ওরাও একেবারে আহ্লাদে আটখানা! সর্বোপরি, এই অতি-আধুনিকতার যুগেও এই ধরনের আয়োজনের ফলে নিজেদের উৎসব কিংবা ঐতিহ্য সম্পর্কে ছোট থেকেই ওরা ওয়াকিবহাল হবে।”