দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২০ জুলাই: রাজ্য জুড়ে যেন “ভুয়োর রমরমা”! ভুয়ো IAS অফিসার, ভুয়ো CBI অফিসার, ভুয়ো বিচারপতি এবং ভুয়ো পুলিশ অফিসারের পর এবার ভুয়ো ডায়াগনস্টিক সেন্টার! তাও আবার খোদ জেলা শহর মেদিনীপুরের প্রাণকেন্দ্র রবীন্দ্র নগরে। দিনের পর দিন বড় মাপের লোগো লাগিয়ে, হাতে লেখা বিল দিয়েই ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালাচ্ছিলেন ভুয়ো স্বাস্থ্য কারবারীর দল। চলছিল মানুষের জীবন আর কষ্টের রোজগার নিয়ে ছিনিমিনি খেলা! পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা সদর মেদিনীপুরের প্রাণকেন্দ্র রবীন্দ্রনগরে এমনই এক ভুয়ো সেন্টারের সন্ধান মিলেছে! অভিযোগ অনুযায়ী ওই সেন্টারের নাম- দ্য এইচ এম সি অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার (The H.M.C & Diagnostic Centre)। অভিযোগকারীরা মেদিনীপুর সদরের বাসিন্দা। মোটা টাকা বিল নিয়ে সম্পূর্ণ ভুল রিপোর্ট দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। চাপে পড়ে ওই সেন্টারের তরফে “রিপোর্ট ভুল” দেওয়ার কথা স্বীকার করা হয়েছে বলেও জানা গেছে। লিখিত অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (CMOH) ডাঃ ভুবন চন্দ্র হাঁসদা।

thebengalpost.in
ভুল রিপোর্টের অভিযোগ :

ঘটনাচক্রে জানা যায়, মেদিনীপুর সদরের রাজারবাগান এলাকার সালমা বিবি পেটের ব্যথা নিয়ে ২-৩ দিন আগে রবীন্দ্রনগরে দ্য এইচ এম সি (The H.M.C) ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আসেন, ওই সেন্টারে বসা গ্যাস্ট্রো’র ডাক্তারবাবুকে দেখাতে। এরপর ওই সেন্টারের মালিকের পরামর্শ অনুযায়ী তাঁরা ডাঃ সৌগত রায়’কে দেখান। তিনি ওই সেন্টারেই বসেন। সেই নির্দেশ মোতাবেক ডাঃ সৌগত রায় কে দেখালে তিনি একগুচ্ছ টেস্ট এবং ওষুধ লিখে দেন। এরপর সেই ওষুধ কিনে এবং সমস্ত টেস্ট করিয়ে মা’কে নিয়ে বাড়ি ফিরে যান ছেলে। সালমা বিবি বাড়িতে ফেরার পর তাঁর কষ্ট আরো বেড়ে যায়। এদিকে, পরের দিন বিভিন্ন টেস্ট বা ডায়াগনোসিসের রিপোর্ট নিতে এলে পরিবারের সদস্যদের বলা হয় একটু সমস্যা হয়েছে, রিপোর্ট সন্ধ্যায় দেওয়া হবে। এরপর সন্ধ্যা থেকে সকাল, সকাল থেকে বিকেল ঘোরার পর তাঁকে একটি রিপোর্ট দেওয়া হয় এবং ৩১০০ টাকার বিল ধরিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু, পেটের ব্যথা না কমায় ফের তাঁরা অন্য একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রিপোর্ট করালে, সেটির রিপোর্টও ওই দিন (রবিবার) সন্ধ্যাতেই হাতে পেয়ে দু’টো রিপোর্টই সঙ্গে নিয়ে তাঁরা ডাঃ আনসার আহমেদ’কে দেখাতে যান। দেখা যায়, দু’টো রিপোর্টে আকাশ-পাতাল ফারাক! এরপর, ওই সেন্টারের ডাক্তার সৌগত রায়কে সেই রিপোর্ট দেখাতে গেলে, তিনি বলেন- তিনি এখনো হাতে রিপোর্ট পাননি, তাই তিনি রোগী দেখবেন না! এই ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে রোগীর পরিজনদের মধ্যে। রোগীর ছেলে এবং রোগীর আত্মীয়রা সেই ডায়াগনস্টিক সেন্টারের (দ্য এইচ এম সি) মালিককে অন্য সেন্টারের রিপোর্ট দেখানোর পর তারা নিজেরাই ওষুধ পরিবর্তন করে দেন এবং রিপোর্ট সম্পূর্ণ ভুল আছে বলে স্বীকার করেন! এরপর ওই রোগীর আত্মীয় স্বজন ভুয়ো রিপোর্ট দেওয়ার ব্যাখা চান। কেনই বা টেস্ট সঠিক না করেই টাকা নিয়েছে, তারও প্রতিবাদ জানান। এই ঘটনায় প্রথমে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক শেখ মুস্তাক তাদের তাড়িয়ে দেন। পরে, রোগীরা টাকা ফেরত দেওয়ার আবেদন করলে, সেন্টারের মালিক তাদের বলেন, টাকা ফেরত দিয়ে দেওয়া হবে! এই ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে রোগীর আত্মীয় পরিজনদের মধ্যে। সোমবার (২০ জুলাই) তাঁরা এই সেন্টারে বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন। তাঁরা অভিযোগ করেন, “এই ডায়গনস্টিক সেন্টারের না আছে রেজিস্ট্রেশন নম্বর, না আছে জিএসটি নাম্বার। হাতে লিখে বিল দিচ্ছেন এবং যে রিপোর্ট দিচ্ছেন তাও সম্পূর্ণ ভুল। আকাশ পাতাল পার্থক্য অন্যান্য সেন্টারের রিপোর্টের সঙ্গে।” যদিও ওই সেন্টার তাদের টাকা ফেরত দিয়ে দিয়েছে, তা সত্ত্বেও তাদের দাবি এই ভুয়ো ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিক প্রশাসন এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক। এই বিষয়ে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ ভুবন চন্দ্র হাঁসদা জানান, “অভিযোগ পেলেই দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই ধরনের সেন্টারের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে।”