দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২ সেপ্টেম্বর: পশ্চিম মেদিনীপুরে এই ‘প্রথম’ ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু! তাও আবার খোদ জেলা শহর মেদিনীপুরে। শুক্রবার ভোর চারটা নাগাদ মেদিনীপুর শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে (স্পন্দন) চিকিৎসাধীন অবস্থায় সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধা ঊষা রানি দাসের মৃত্যু হয়। তিনি মেদিনীপুর পৌরসভার ১৪ নং ওয়ার্ডের চিড়িমারসাই এলাকার বাসিন্দা বলে জানা গেছে জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে। গত ৩০ আগস্ট জ্বর নিয়ে ওই বৃদ্ধা বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। চিকিৎসকেরা আপ্রাণ চেষ্টা করা সত্ত্বেও, বয়সজনিত কারণে চিকিৎসায় তেমন সাড়া দেননি বলেই নার্সিংহোম সূত্রে জানা যায়। অবশেষে, শুক্রবার অর্থাৎ ১ সেপ্টেম্বর ভোর ৪টা ১০ মিনিটে ওই বৃদ্ধার মৃত্যু হয়। বৃদ্ধার পরিবারের তরফেও বিষয়টি স্বীকার করে নিয়ে জানানো হয়েছে, “বয়সজনিত কারণে কয়েকদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন। তারপর জ্বর হয়। ডেঙ্গু রিপোর্ট পজিটিভ আসার পর, আমরা স্পন্দন হাসপাতালে ভর্তি করি।” জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকারিক ডঃ সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী জানান, “বেসরকারি ওই হাসপাতাল সূত্রে আমাদের কাছে এই তথ্য পৌঁছনোর পরই সমস্ত রকমের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এলাকায় স্বাস্থ্য দপ্তরের দল ইতিমধ্যে পৌঁছে গেছে। এমনিতেই প্রতিটি ব্লক ও পৌরসভাতে প্রতিদিন ডেঙ্গু প্রতিরোধে স্বাস্থ্য দপ্তরের তরফে সমস্ত রকমের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।”

thebengalpost.net
এলাকার জমা আবর্জনা নিয়ে ক্ষোভ:

উল্লেখ্য যে, গত কয়েক সপ্তাহে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বিভিন্ন ব্লকেই ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা হু হু করে বেড়েছে। চলতি মরশুমে অর্থাৎ ১ জানুয়ারি থেকে ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জেলায় প্রায় ৪০০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন বলে জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের রিপোর্টে জানা গেছে। এর মধ্যে শুধু গত এক সপ্তাহেই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ১০৯ জন। সর্বাধিক আক্রান্ত মেদিনীপুর পৌর এলাকা বা শহরে। গত ১ সপ্তাহে সরকারিভাবে সেখানে ১৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। যদিও, এলাকাবাসীরা জানান সংখ্যাটা আসলে অনেক বেশি। এর আগে, চন্দ্রকোনার ভালুককুণ্ড, শালবনীর মাঝিপাড়া, বেলদার সশিন্দা, ডেবরার বালিচক, খড়্গপুর পৌরসভার বিভিন্ন এলাকাতেও ডেঙ্গুর বাড়বাড়ন্ত দেখা দিয়েছিল। এদিকে, মেদিনীপুর পৌরসভার ১৪ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের অভিযোগ, “এই এলাকা যেন আবর্জনা স্তূপের উপর বসে আছে!” ওয়ার্ডের সর্বত্র নোংরা ও আবর্জনার স্তূপ এবং যত্রতত্র জল জমে আছে বলে তাঁদের অভিযোগ। পৌরসভা এবং ১৪ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে তাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

শ্যাম পাল নামে স্থানীয় এক বাসিন্দার অভিযোগ, “এই ওয়ার্ডে অনেকেই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। আজ (শনিবার) সকালে আরো একজনকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। আমরা খুব আতঙ্কের মধ্যে আছি। চারিপাশে শুধু আবর্জনার স্তূপ। পৌরসভার তরফে সঠিকভাবে সাফাইয়ের কাজ করা হয়না। কাউন্সিলরের কোনো ভূমিকাই নেই।” তাঁর আরও অভিযোগ, “কাউন্সিলরকে তো এলাকায় দেখাই যায় না।” এদিকে, ১৪-নং ওয়ার্ডের ‘নির্দল’ কাউন্সিলর অর্পিতা রায় নায়েক জানান, “ডেঙ্গু প্রতিরোধে সব রকমের ব্যবস্থাই গ্রহণ করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও একটি দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে। আরও তৎপরতার সঙ্গে আমরা প্রতিটি বিষয়ে স্বাস্থ্য দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় রেখে সচেতনতামূলক পদক্ষেপ গড়ে তুলব।” এদিকে, জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের তরফে জেলাবাসীর উদ্দেশ্যে পুনরায় বার্তা দেওয়া হয়েছে, জ্বর সহ যেকোনো উপসর্গ দেখা দিলেই নিকটবর্তী স্বাস্থ্য কেন্দ্র বা হাসপাতালে যাওয়ার জন্য। আশে পাশে যাতে কোনভাবেই জমা জল না থাকে, সেই বিষয়েও সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।