দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৬ সেপ্টেম্বর: গোটা রাজ্য জুড়েই ভয় ধরাচ্ছে ডেঙ্গু! হু হু করে বাড়ছে পশ্চিম মেদিনীপুরেও। গত বছর যেখানে জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিলেন ১৩০ জন, চলতি মরশুমে সেখানে এখনও পর্যন্ত (২৫ সেপ্টেম্বর) আক্রান্তের সংখ্যা ১৮৮। এর মধ্যে, গত দু’ সপ্তাহেই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন (১২-২৫ সেপ্টেম্বর) ৭৯ জন! আজ, সোমবার জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন-ই গড়ে ৫-৬ জন করে ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছেন। এই মুহূর্তে (২৫ সেপ্টেম্বরের তথ্য অনুযায়ী) পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঘাটাল মহকুমা হাসপাতাল, খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতাল ও মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ মিলিয়ে চিকিৎসাধীন আছেন ১৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত। সর্বাধিক ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালেই ৮ জন চিকিৎসাধীন আছেন এবং মেদিনীপুর মেডিক্যালে ৭ জন। খড়্গপুরে ১ জনের চিকিৎসা চলছে। এর মধ্যেই, চলতি মরশুমে জেলায় প্রথম ডেঙ্গু আক্রান্তের মৃত্যু হল! জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গত ২৩ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার রাতে মৃত্যু হয়েছে দাসপুর থানার বারজালালপুর গ্রামের রাসবিহারী বাগ (৬৮) নামে এক ব্যক্তির। তিনি মাথায় গুরুতর আঘাত ও জ্বর নিয়ে ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। মৃত্যুর পর তাঁর ডেঙ্গু রিপোর্ট পজিটিভ আসে।
জানা গেছে, রাসবিহারী বাগ নামে বছর ৬৮’র ওই ব্যক্তি বাথরুমে পড়ে গিয়ে মাথায় চোট পেয়েছিলেন। পরে তাঁর জ্বরও হয়। এরপরই অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। অন্যদিকে, ঘাটাল মহকুমা জুড়ে যেভাবে মারাত্মক হারে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে চলেছে তাতে আতঙ্কিত এলাকাবাসী। স্বাস্থ্য দপ্তর ও মহকুমা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পৌরসভা এলাকা এবং গ্রাম গঞ্জগুলিতে সচেতনতা মূলক প্রচার চালানো হচ্ছে। ঘাটাল, চন্দ্রকোনা, রামজীবনপুর, ক্ষীরপাই প্রভৃতি পৌর এলাকাগুলোতে প্রতিনিয়ত সচেতনতামূলক প্রচার এবং সাফাই অভিযান চালানো হচ্ছে। জেলার জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ শ্যামপদ পাত্র জানিয়েছেন, “ঘাটালের পরিস্থিতি কিছুটা উদ্বেগজনক। তবে, স্বাস্থ্য দপ্তরের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সবরকম পদক্ষেপ-ই করা হচ্ছে।” এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, গত কয়েকদিনে ঘাটাল মহকুমার দাসপুর ১ নং (২৭); দাসপুর ২ নং (১৭) এবং ঘাটাল (১৩) এলাকা ছাড়াও খড়্গপুর পৌরসভা এলাকাতেও ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। চলতি মরশুমে সর্বাধিক আক্রান্ত খড়্গপুর পৌরসভা (২৬) এলাকাতেই। এছাড়াও, ডেবরা (১৩), পিংলা (৯), কেশপুর (৮), মেদিনীপুর সদর (৭), গড়বেতা (১১) এলাকাতেও গত কয়েক সপ্তাহে ২-৩ জন করে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী জানিয়েছেন, “মূলত, আগস্ট এবং সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। তবে, এবার আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলক ভাবে বেশি। বিশেষত ঘাটাল মহকুমায়। তবে, স্বাস্থ্য দপ্তরের পক্ষ থেকে সব রকম পদক্ষেপ-ই করা হয়েছে এবং হচ্ছে। স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রতিমুহূর্তে তৎপর আছেন। এলাকা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা, গাপ্পি মাছ ছাড়ার কাজ-ও চলছে।” (বন্ধনীর মধ্যে চলতি মরশুমে মোট আক্রান্তের সংখ্যা।)