দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৮ ফেব্রুয়ারি: গত ২১ জানুয়ারি (২০২২) জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করে ‘ডায়গনস্টিক সেন্টার’ (Diagnostic Centre) অবিলম্বে বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছিল, ২০১৭ সালের ৫ অক্টোবর এই ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্সের মেয়াদ ফুরিয়ে গেছে (Expired)। তারপরও, বিনা লাইসেন্সেই ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তাই, অবিলম্বে তা বন্ধ করতে হবে। কিন্তু, গত সাড়ে বছর ধরে কিভাবে এই সেন্টারটি বিনা লাইসেন্সে ব্যবসা চালিয়ে গেল কিংবা সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলল, সেই প্রশ্নের উত্তর নেই! পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা শহর মেদিনীপুরের প্রাণকেন্দ্র রবীন্দ্রনগরে অবস্থিত ‘অ্যাপোলো ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও পলিক্লিনিক’ নামে ওই সেন্টারটি সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যাতেও খোলা ছিল বলে অভিযোগ। যদিও কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ‘আমাদের সেন্টারের সব কাজ বন্ধ আছে।’ কিন্তু, সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরায় উঠে আসা ছবি এবং বিভিন্ন রোগীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সোমবার সন্ধ্যাতেও তা খোলা ছিল! একই কথা জানিয়েছেন, ওই এলাকার বাসিন্দারাও।

thebengalpost.net
সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যাতেও খোলা সেন্টার :

উল্লেখ্য যে, গত ২০১৭ সালে লাইসেন্স বাতিলের পরও রমরমিয়ে সেন্টার চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ স্বাস্থ্য দপ্তরের কাছে পৌঁছে ছিল বিভিন্ন সময়ে। এজন্য, ২০২২ সালের আগেও ওই সেন্টার-কে সতর্ক করা হয়েছিল বলে জানা গেছে। অভিযোগ যে, বিভিন্ন সময়ে এই সেন্টার স্বাস্থ্য দপ্তর ও সাধারন মানুষের সঙ্গে লুকোচুরি খেলেছে! মাঝেমধ্যেই ইংরেজিতে লেখা একটি করে নোটিশ ঝুলিয়ে দেওয়া হত (যেমন, বর্তমানেও একটি নোটিশ চেটানো আছে), “টেকনিক্যাল কারণে নতুন টেস্ট হবে না, তবে পুরানো রিপোর্ট ডেলিভারি করা হবে।” আর, এই নোটিশের আড়ালেই, সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে সেন্টার-টি! এমনই মারাত্মক অভিযোগ উঠে এসেছে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহল থেকে। এমনকি, অতিমারীর সময়ে কোভিড টেস্টও করা হয়েছে বলে অভিযোগ। এই বিষয়ে ভুক্তভোগী কেশপুরের জনৈক ব্যক্তি জানিয়েছেন, “আমি জানতাম না ওই সেন্টার অবৈধ। পরে জানতে পারি।” স্বাভাবিকভাবেই, অবৈধভাবে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠছে এই সেন্টারের বিরুদ্ধে। সোমবার সন্ধ্যায় কর্তৃপক্ষকে ফোন করা হলে সেন্টারের পক্ষ থেকে যদিও বলা হয়, “আমাদের সমস্ত কাজ বন্ধ আছে। তবে, রিনিউয়াল বা পুনর্নবীকরণের আবেদন করা হয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে। স্বাস্থ্য দপ্তরও জানে!” কিন্তু, ৫ বছর হয়ে গেল পুনর্নবীকরণ হয়নি, কবে হবে ঠিক নেই, সেন্টার খোলা কেন? সেন্টারের মালিকের দাবি, “বলছি তো সেন্টার বন্ধ আছে।” তবে, রবিবার সন্ধ্যাতে ওই একই নম্বরে ফোন করলে, এক রোগীকে সেন্টারের তরফে জানানো হয়েছে, “মঙ্গলবার সকাল সাড়ে সাতটায় চলে আসুন টেস্ট করা হবে।” সেই কল রেকর্ডও এসে পৌঁছেছে সংবাদমাধ্যমের হাতে!

thebengalpost.net
খোলা ছিল সোমবার দুপুরেও :

সোমবার এই বিষয়ে সংবাদমাধ্যমের তরফে ফোন করা হয়, জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ ভুবন চন্দ্র হাঁসদা-কে। তিনি জানান, “সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আসার পর ওই সেন্টার সহ আরও একটি সেন্টার (নবোদয় ডায়াগনস্টিক সেন্টার) বন্ধ করার বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। তারপরও সেন্টার চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ মারাত্মক! অবিলম্বে স্বাস্থ্য দপ্তরের দল যাবে ওই সেন্টারে। ওই ধরনের যতগুলি সেন্টার আছে তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হবে স্বাস্থ্য দপ্তরের তরফে।” কিন্তু, এভাবে বছরের পর বছর ধরে সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে যে সমস্ত স্বাস্থ্য কারবারিরা, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি মূলক পদক্ষেপ কি আদৌ নেওয়া হবে? তা নিয়েই সংশয়ে সাধারণ মানুষ।