দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৭ জুলাই: গত চব্বিশ ঘণ্টায় সারা দেশে করোনা আক্রান্ত প্রায় ১৯ হাজার (১৮,৯৩০)। রাজ্যে ২৩৫২ জন সংক্রমিত। আর, জঙ্গলমহল পশ্চিম মেদিনীপুরে গত চব্বিশ ঘণ্টায় এক লাফে আক্রান্ত হয়েছেন ৮০ জন। যা গত কয়েকদিনের তুলনায় দ্বিগুণ বা তিন গুণ বলে জানা গেছে জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে। গত ৭২ ঘন্টায় অর্থাৎ শেষ তিনদিনে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলেও জানা গেছে স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে। তবে, তিনজনের-ই বয়স ছিল ৫৫’র ওপরে এবং নানা কো-মর্বিডিটিতে তাঁরা ভুগছিলেন বলে জানিয়েছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ ভুবন চন্দ্র হাঁসদা। তিনি এও জানিয়েছেন, তিনজনেরই মৃত্যু হয়েছে খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে। এই মুহূর্তে জেলার মধ্যে সর্বাধিক আক্রান্ত ভর্তি আছেন-ও এই হাসপাতালে। বুধবার সন্ধ্যার রিপোর্ট অনুযায়ী ১৬ জন ভর্তি আছেন খড়্গপুর মহাকুমা হাসপাতালে। মেদিনীপুর মেডিক্যাল এবং ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালেও কয়েকজন ভর্তি আছেন। উল্লেখ্য যে, মাত্র এক সপ্তাহ আগেও হাসপাতালে ভর্তি করোনা রোগী ছিলেন মাত্র ৩ জন। তবে, এখনও অবধি মারণ উপসর্গ বা আশঙ্কাজনক কোনো উপসর্গের দেখা মেলেনি বলে জানিয়েছেন জেলার CMOH থেকে শুরু করে চিকিৎসকরা। তা সত্ত্বেও এবার সাধারণ মানুষ-কে একটু সতর্ক হয়ে চলার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে স্বাস্থ্য দপ্তরের পক্ষ থেকে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, করোনা ‘র তৃতীয় ঢেউ (Third Wave) ছিল অনেকটাই নির্বিষ বা দুর্বল। মৃত্যু’র হার খুবই কম ছিল। এই মুহূর্তে যে ‘চতুর্থ ঢেউ’ এসে হাজির হয়েছে তাও অনেকটাই সেই তৃতীয় ঢেউয়ের মতোই দুর্বল বা সাধারণ ভাইরাল ফিভারের মতোই বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ ভুবন চন্দ্র হাঁসদা জানিয়েছেন, “চতুর্থ ঢেউ কিনা বলতে পারবনা। তবে, আমাদের জেলাতেও কোভিড সংক্রমণ বাড়ছে। গত চব্বিশ ঘণ্টায় আক্রান্ত সর্বাধিক (৮০)। টেস্ট যেমন বাড়ানো হয়েছে, বেড়েছে পজিটিভিটি হার-ও। তবে, এখনই ভয় পাওয়ার মতো পরিস্থিতি হয়নি। খুব-ই সাধারণ উপসর্গ। জ্বর-সর্দি কাশির। তা সত্ত্বেও সুস্থ থাকতে হলে, সচেতন হতে হবে। মাস্ক, স্যানিটাইজার পুনরায় ব্যবহার করতে হবে। স্বাস্থ্য দপ্তর সচেতন আছে। উপসর্গযুক্তদের জন্য মেদিনীপুর মেডিক্যাল, খড়্গপুর SDH এবং ঘাটাল SDH- এ ওয়ার্ড প্রস্তুত রাখা হয়েছে।” মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ পঞ্চানন কুন্ডু জানিয়েছেন, “হ্যাঁ, কোভিড বাড়ছে। তবে, এখনও অবধি বিপজ্জনক কোনো উপসর্গ আমরা পাইনি। তবে, এটাও ঠিক আগামী কয়েকদিনে বোঝা যাবে ভ্যারিয়েন্টের কোনো পরিবর্তন হয় কিনা। আমরা কোভিড ওয়ার্ড প্রস্তুত রেখেছি। আপাততো আইসোলেশন ওয়ার্ডে সাধারণ জ্বর-সর্দি-কাশির উপসর্গ নিয়ে কয়েকজন ভর্তি আছেন। এই ওয়েভে মেডিক্যাল কলেজে এখনও অবধি মৃত্যু হয়নি কারুর।”
মেদিনীপুর শহরের বিশিষ্ট ফুসফুস রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ প্রবোধ পঞ্চধ্যয়ী’র সঙ্গে কথা বলে এই মুহূর্তে কোভিডের যে উপসর্গগুলো সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে, সেগুলি হল- জ্বর, সর্দি, কাশি, মাথা ব্যথা বা মাথা ধরা, গলা ব্যথা, মাসল ক্র্যাম্প বা পেশিতে টান, পেটের রোগ, ডায়রিয়া- প্রভৃতি। তিনি স্পষ্ট করেছেন, “তৃতীয় ঢেউয়ের মতোই উপসর্গ। এখনও অবধি ফুসফুসের উপর প্রভাব পড়তে দেখিনি। অনেকটাই ইনফ্লুয়েঞ্জা বা সাধারণ ফ্লু- এর মতো উপসর্গ।” তিনি এও জানিয়েছেন, সব বয়সের মানুষই (শিশু থেকে বৃদ্ধ) আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে, এই ভ্যারিয়েন্টের সংক্রামক শক্তি অনেকটাই কম। তা সত্ত্বেও, ভারতবাসীকে সতর্ক করে দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা হু (World Health Organization)। কারণ, সারা ভারতবর্ষ জুড়েই বাড়ছে সংক্রমণ। অবিলম্বে তাই, সম্পূর্ণ টিকাকরণ বা বুস্টার ডোজ সহ ভ্যাকসিনেশন, সচেতন ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা, মাস্ক ব্যবহার এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার মধ্য দিয়ে নিজেদের সুস্থ রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে সব মহল থেকে।