Health

“টাকা নেই, খুলে দিতে হচ্ছে বাচ্চার শরীরে থাকা গয়নাগাটি”! মেদিনীপুর মেডিক্যালে আয়া দৌরাত্ম্য চলছেই, পদক্ষেপের আশ্বাস অধ্যক্ষের

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৩০ অক্টোবর: স্ট্রেচারের জন্য ৩০০ টাকা, লিফটের জন্য ৩০০ টাকা, বেডে নামানোর জন্য ৫০০ টাকা, বাচ্চা হওয়ার খবর দিলে আরও ৫০০, আর বাচ্চাকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য ১০০০! এরপরেও একাধিক কারণে টাকা চাইছেন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ‘মাতৃমা’ বিভাগের আয়ারা। এমনই মারাত্মক অভিযোগ উঠে আসছে বারবার! শুক্রবার সন্ধ্যাতেও ফের একবার আয়া দৌরাত্ম্যে অস্থির হলো রোগীর পরিবার। এক প্রসূতির স্বামীর অভিযোগ, শুক্রবার তাঁর স্ত্রী-কে ভর্তি করা হয় ‘মাতৃমা’তে। সেখানে ভর্তির পরেই মাতৃমার আয়ারা বিভিন্নভাবে টাকা চাইছে। তিনি প্রতিবাদ শুরু করার পরই, তাঁর সঙ্গে যোগ দেন আরো একাধিক পরিবারের সদস্য। তাঁদের অভিযোগ আরও মারাত্নক, “টাকা না দিলেই হুমকি! অবশেষে বাচ্চার শরীর থেকে রূপার হার, রিং, তোড়া এমনকি মোবাইল বিক্রি করতেও রাজি হয়েছি।” এরপরই হাসপাতাল চত্বর উত্তাল হয়ে ওঠে। পরিস্থিতি সামাল দিতে পৌঁছয় মেদিনীপুর কোতোয়ালী থানার পুলিশ। কিছুক্ষণের মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে!

মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ‘মাতৃমা’ বিভাগ :

উল্লেখ্য যে, জঙ্গলমহল পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা হাসপাতাল মেদিনীপুর মেডিক্যাল এলাকাবাসীর কাছে এক এবং একমাত্র ভরসা! বর্তমানে, সেই হাসপাতালের পরিকাঠামোও অনেক উন্নত হয়েছে। স্ত্রী, প্রসূতি ও শিশুদের জন্য খোলা হয়েছে সুপার স্পেশালিটির ব্যবস্থা যুক্ত পৃথক ‘মাতৃমা’ বিভাগ। কিন্তু, প্রথম দিন থেকেই বিভিন্ন ভাবে সেখানে আয়া দৌরাত্ম্যের অভিযোগ উঠে আসছে। শুক্রবারও রোগীর পরিজনেরা অভিযোগ করলেন, অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়ার জন্য ৫০০ টাকা, বাচ্চা হয়েছে সেই খুশির খবর শোনাবে তার জন্য ৫০০ টাকা দাবি করা হচ্ছে। OT থেকে স্ট্রেচারে করে নিয়ে আসবে তার জন্য ৫০০ টাকা, স্ট্রেচারে করে বেডে দেবে তার জন্য ৫০০ টাকা আর লিফটে ওঠার জন্য ৩০০ টাকা চাইছে। এরপর প্রসূতিকে স্যালাইন দেবে তার জন্য ৫০০ টাকা; এমনকি এই ক’দিন দেখভাল করবে তার জন্য মোটা অঙ্কের টাকা দাবি আয়াদের। সবমিলিয়ে টাকার পরিমাণ ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা ছাড়িয়ে যাচ্ছে! টাকা না দিলে তারা বলছে, বাচ্চাকে কোনোভাবেই পরিবারের হাতে দেওয়া যাবে না! আর তাতে ঘন্টার পর ঘন্টা পড়ে থাকছেন বাচ্চা সহ প্রসূতি। তাদের টাকা না দিলেও, নিস্তার নেই! কারণ, হাসপাতালের মাতৃমা বিভাগের ভেতরে ঢোকার ক্ষমতা রোগীর পরিবারের নেই! তাই বাচ্চার দেখভালের দায়িত্ব নার্স ও আয়াদের। সেজন্যই আয়াদের দাবি বাধ্য হয়েই মেনে নিতে হচ্ছে। অভিযোগ, কখনো কখনো সে টাকা দিতে গিয়ে রোগীর অসহায় ও দরিদ্র পরিবার সঙ্গে থাকা জিনিসপত্র, ঘড়ি, মোবাইল কিংবা বাচ্চার শরীরে থাকা গয়নাগাটি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে! সব শুনে শুক্রবার সন্ধ্যায় মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ পঞ্চানন কুন্ডু ফোনে জানালেন, “কোনভাবেই আর এই দৌরাত্ম্য বরদাস্ত করা হবে না। প্রতিটি অভিযোগ আমরা খতিয়ে দেখব এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করব।” এক্ষেত্রে তিনি লিখিত অভিযোগও চেয়েছেন। তবে, এখনও অবধি কোন পরিবারই সাহস করে লিখিত অভিযোগ করেননি বলেই জানা গেছে!

News Desk

Recent Posts

Medinipur: একে একে ছেড়ে গেছেন বাবা-মা, মানুষ করেছেন দাদু-দিদা; উচ্চ মাধ্যমিকে জেলায় মেয়েদের মধ্যে প্রথম সেই ‘লড়াকু’ রিয়াই

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৯ মে: "দাদু বেঁচে থাকলে খুব খুশি হতেন...!" চোখে…

16 hours ago

Midnapore: বাবা সবজি বিক্রেতা, দারিদ্র্যের সাথে লড়েই ‘শালবনীর সেরা’ সুইটি! সাফল্য উৎসর্গ দেশের ‘নারীশক্তি’-কে

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৯ মে: বাবা সবজি বিক্রেতা। মা গৃহবধূ। দারিদ্র্যের সাথে…

21 hours ago

Operation Sindoor: সরাসরি পাকিস্তানের রাজধানীতে হামলা, বন্দী পাইলট! ভারতের প্রত্যাঘাতে কাঁপছে ইসলামাবাদ

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, ৮ মে: রাজস্থানের জয়সলমীরে ভারতের হাতে বন্দি হলো এক পাকিস্তানি যুদ্ধবিমানের…

1 day ago

Midnapore: উচ্চমাধ্যমিকের মেধাতালিকায় মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলের দুই ছাত্র! সৌম্যসুন্দর ও সাগ্নিকের পরবর্তী লক্ষ্য IIT

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৭ মে: খুব সামান্য কয়েকটা বিষয়ে 'অমিল' থাকলেও, দুই…

3 days ago

Midnapore: মাধ্যমিকে দশমের পর উচ্চমাধ্যমিকে পঞ্চম মেদিনীপুর রামকৃষ্ণ মিশনের বীরেশ! সাফল্য সেল্ফ স্টাডিতেই

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৭ মে: মাধ্যমিকের পর এবার উচ্চ মাধ্যমিকের মেধাতালিকাতেও জায়গা…

3 days ago

Midnapore: মাধ্যমিকে ৯২ শতাংশ নম্বর! ডাক্তার হতে চায় শালবনীর সিভিক-কন্যা, স্বপ্নপূরণে পাশে থাকার আশ্বাস পুলিশ সুপারের

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৭ মে: দিনেদুপুরে শোনা যেত গুলির আওয়াজ। রাস্তায় পড়ে…

3 days ago