মণিরাজ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১২ জুলাই: গত চব্বিশ ঘণ্টায় পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় করোনা সংক্রমিত হয়েছেন মাত্র ৩৫ জন। সোমবার সকালের তথ্য অনুযায়ী, জেলার লেভেল ফোর শালবনী করোনা হাসপাতালে রোগী ভর্তি আছেন মাত্র ১৩ জন। কিন্তু, চিকিৎসক আছেন ৪০ জনেরও বেশি। এই পরিস্থিতিতে, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের কাজে লাগিয়ে গ্রামীণ এলাকার মানুষদের জন্য আজ (সোমবার) থেকেই আউটডোর বা বহির্বিভাগ পরিষেবা খুলে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে শালবনী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে। তবে, গ্রামীণ হাসপাতালে সাধারণ আউটডোর পরিষেবা কোভিড পরিস্থিতির তধ্যেও চালু ছিলো বলে জানাচ্ছেন শালবনীর ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ মনোজিৎ বিশ্বাস। তিনি বললেন, “স্পেশালিস্ট ডাক্তারবাবুরাও এবার গ্রামীণ হাসপাতালের আউটডোরে বসবেন। অর্থাৎ, এম. ডি ডাক্তারবাবুরা তাঁদের নিজেদের বিভাগের রোগী দেখবেন। তাই, একে ‘সুপার স্পেশালিটি’ আউটডোর বলা যেতে পারে।” সুতরাং, এবার থেকে পেডিয়াট্রিক্স (শিশু চিকিৎসা), গাইনোকলোজি (স্ত্রী ও প্রসূতিদের চিকিৎসা), মেডিসিন (যেকোনও জটিল রোগ) এবং সার্জারি (অপারেশন বা শল্য চিকিৎসা বিষয়ক) বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা রোগী দেখবেন গ্রামীণ হাসপাতালের আউটডোর। এমনটাই জানিয়েছেন ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক তথা শালবনী সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের সুপার ডাঃ মনোজিৎ বিশ্বাস। করোনা হাসপাতালে চাপ কমে যাওয়ার কারণেই জেলা প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। নিয়ম মেনে সোমবার থেকেই সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ২ টো অবধি শালবনী রুরাল হাসপাতাল বা গ্রামীণ হাসপাতালে এই পরিষেবা দেওয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

thebengalpost.in
শালবনী সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল (ফাইল ছবি) :

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই মুহূর্তে রাজ্য তথা জেলার সংক্রমণের হার নিম্নমুখী। করোনা হাসপাতালগুলিতে রোগী প্রায় ভর্তি নেই বললেই চলে। কিন্তু, লেভেল ফোর করোনা হাসপাতাল তথা সুপার স্পেশালিস্ট হাসপাতাল গুলিতে একাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা আছেন। তাঁদের উপর এই মুহূর্তে বিশেষ চাপ নেই। অথচ, গ্রামীণ এলাকার মানুষদের বিভিন্ন জটিল রোগ বা সংকটজনক শারীরিক পরিস্থিতিতে অসুবিধায় পড়তে হয়। দৌড়তে হয় শহরে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ক্ষেত্রে একমাত্র ভরসা মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল। এক্ষেত্রে, তাই শালবনী সুপার স্পেশালিস্ট হাসপাতালেও “সুপার স্পেশালিস্ট” আউটডোর পরিষেবা পুনরায় চালু করে প্রত্যন্ত জঙ্গলমহলের মানুষজনকে পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এতদিন করোনা পরিস্থিতির জন্য সাধারণ পরিষেবা চালু থাকলেও, এই বিশেষ চিকিৎসা পরিষেবা বন্ধ ছিলো। এই মুহূর্তে করোনা রোগীদের চাপ অনেকটাই কম। শালবনী সুপার স্পেশালিস্ট হাসপাতালের সুপার ডাঃ মনোজিৎ বিশ্বাস বললেন, “সুপার স্পেশালিস্ট হাসপাতাল থাকলে, সেই এলাকার মানুষজনের কিছু দাবি থাকে। করোনা হাসপাতাল হয়ে যাওয়ার কারণে, দীর্ঘ সময় তা বন্ধ ছিল‌। বাসিন্দারা তা মেনে নিয়েছেন। কিন্তু, এখন স্পেশালিস্ট ডাক্তারবাবুদের চাপ অনেক কমে গেছে। ১০-১২ জন করে করোনা রোগী ভর্তি আছেন। এদিকে, ২০ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আছেন আমাদের সুপার স্পেশালিটিতে। তাঁরা গ্রামীণ হাসপাতালের আউটডোরে স্ত্রী ও প্রসূতি রোগ, শিশু রোগ কিংবা জটিল শারীরিক সমস্যার কিছু কিছু বিষয় যা মেডিসিন বা ইঞ্জেকশনের মাধ্যমেই নির্মুল হয় তা এখানেই চিকিৎসা করতে পারবেন। এছাড়াও, ছোটোখাটো সার্জারির বিষয় গুলিও‌ গ্রামীণ হাসপাতালেই হয়ে যাবে।” এই বিষয়ে জেলাশাসক ডঃ রশ্মি কমল এবং জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ ভুবন চন্দ্র হাঁসদা’র প্রয়োজনীয় অনুমতি নিয়ে এবং শুধুমাত্র বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করেই এগোনো হচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন। শালবনী সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন জেলার জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ শ্যামপদ পাত্র’ও। তিনি বললেন, “শালবনীতে এখন গ্রামীণ হাসপাতাল ও সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের দায়িত্বে একজনই আছেন। তাই উনি এই ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারছেন সহজেই। আমরা ডাঃ মনোজিৎ বিশ্বাসের পাশে আছি।”

thebengalpost.in
শালবনী গ্রামীণ হাসপাতাল :