দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৮ আগস্ট: চুয়াড় বিদ্রোহের অন্যতম পীঠস্থান মেদিনীপুর। আর, মেদিনীপুর সংলগ্ন শালবনীর কর্ণগড় থেকেই দ্বিতীয় চুয়াড় বিদ্রোহের (১৭৯৮-‘৯৯) নেতৃত্ব দিয়েছিলেন রাণী শিরোমণি। ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দের ৬ এপ্রিল ইংরেজরা শিরোমণিকে চুয়াড় বিদ্রোহের প্রধান নেত্রী ঘোষণা করে পরোয়ানা জারি করে। ওই দিন ব্রিটিশ কর্ণগড়ে পৌঁছলে, রাণী গোপন সড়ঙ্গপথে মেদিনীপুরের আবাসগড় প্রাসাদে পালিয়ে যাওয়ার সময় ধরা পড়ে যান! তাঁকে বন্দি করে কলকাতায় নিয়ে যায় ইংরেজরা। কর্ণগড় প্রাসাদ লুঠ করে ধ্বংস করে দেয় ইংরেজ সৈন্যরা। মুক্তি পাওয়ার পরে শিরোমণি আর কর্ণগড়ে ফিরে যাননি। মেদিনীপুরের আবাসগড়ের প্রাসাদে শেষ দিনগুলো কাটিয়েছিলেন তিনি। ১৮১২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর (বাংলা, ২ আশ্বিন) আবাসগড়েই তাঁর মৃত্যু হয়। ঐতিহাসিকদের অনেকের মতেই, রাণী শিরোমণি শুধু চুয়াড় বিদ্রোহ বা কৃষক বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেননি, তিনিই প্রথম ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে ‘বন্দিনী’ হয়েছিলেন। শিরোমণি-কে তাই অনেকেই পরাধীন ভারতবর্ষের প্রথম রাজনৈতিক বন্দিনী বলে থাকেন। তাঁর মৃত্যুর ১৬ বছর পর (১৮২৮) ঝাঁসির রাণী লক্ষ্মীবাঈয়ের জন্ম হয়েছিল। সেই শিরোমণি-কে এবার অনন্য স্বীকৃতি দিতে চলেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শালবনী ব্লকের কর্ণগড় সংলগ্ন (বা, ভাদুতলা সংলগ্ন) কুতুরিয়া জুনিয়র হাই স্কুল (Kuturia Junior High school)। এই প্রথম রাণী শিরোমণি’র পূর্ণাবয়ব মূর্তি উন্মোচিত হতে চলেছে। আর্কাইভ নির্ভর এই মূর্তি ইতিমধ্যে নির্মিত হয়েছে, আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর (বাংলা, ২ আশ্বিন),‌ রাণীর ২১১-তম প্রয়াণ দিবসে তা উন্মোচিত হতে চলেছে কুতুরিয়া জুনিয়র হাই স্কুল প্রাঙ্গণে।

thebengalpost.net
আর্কাইভ অবলম্বনে এমনই মূর্তি নির্মিত হয়েছে রাণী শিরোমণি’র:

সোমবার (৮ আগস্ট, ২২ শ্রাবণ) সেই উপলক্ষেই বিদ্যালয়ে তৈরি হয়েছে উৎসব কমিটি। গঠিত হয়েছে উপদেষ্টা মণ্ডলীও। উৎসব কমিটির সভাপতি হয়েছেন মেদিনীপুরের বিধায়ক জুন মালিয়া। ১৯ সেপ্টেম্বর তাঁর হাত ধরেই উন্মোচিত হবে রাণী শিরোমণি’র পূর্ণাবয়ব মূর্তি। কমিটির যুগ্ম সম্পাদক হয়েছেন, শালবনী পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধক্ষ্য সন্দীপ সিংহ এবং বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক (টিচার ইনচার্জ) অরুনাংশু দে। উপদেষ্টা মণ্ডলীতে আছেন মেদিনীপুর জেলা পরিষদের বন ও ভূমি সংস্কার কর্মাধক্ষ্য নেপাল সিংহ, শালবনী পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মিনু কোয়াড়ি, ভাদুতলা বিবেকানন্দ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ড. অমিতেশ চৌধুরী, মৌপাল দেশপ্রাণ বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক ড. প্রসূন কুমার পড়িয়া প্রমুখ। অপরদিকে, সোমবার বিদ্যালয়ে পালিত বাইশে শ্রাবণের অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিধায়ক জুন মালিয়া’র কাছে বিদ্যালয়ের তরফে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, কুতুরিয়া জুনিয়র হাই স্কুলের নাম ‘রাণী শিরোমণি’র নামাঙ্কিত করার বিষয়ে। বিধায়ক জুন মালিয়া এই প্রস্তাব স্কুল শিক্ষা দপ্তরে তথা রাজ্য সরকারের কাছে পাঠানোর আশ্বাস দিয়েছেন।

thebengalpost.net
বিদ্যালয়ে বিধায়ক জুন মালিয়া, অভিবাদন জানালেন প্রধান শিক্ষক অরুনাংশু দে, আছেন জেলা কর্মাধ্যক্ষ নেপাল সিংহ: