IIT KHARAGPUR

IIT Kharagpur: পানীয় জলের সংকট আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করতে চলেছে! IIT খড়্গপুরের বিজ্ঞানীদের চরম সতর্কবার্তা

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পুরুলিয়া ও পশ্চিম মেদিনীপুর, ৭ জুন: অদূর ভবিষ্যতে পানীয় জলের সংকট গভীর থেকে গভীরতর হতে চলেছে। দুশ্চিন্তার কথা শোনাচ্ছেন খোদ আইআইটি খড়্গপুরের বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি পানীয় জলের সমস্যার কথা খড়্গপুর আইআইটি-কে জানায় পুরুলিয়া পৌরসভা। তার পরেই, শহরে আসেন আইআইটি খড়্গপুরের ‘স্কুল অব ওয়াটার রিসোর্স’ বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর পার্থসারথি ঘোষাল। পৌরসভার জল সরবরাহ বিভাগের আধিকারিকদের নিয়ে তিনি কংসাবতী নদীর যে ঘাটগুলি থেকে শহরে জল সরবরাহ হয়, সেগুলি ঘুরে দেখেন। নদীর পরিসর, বালির স্তর, এখন কত জল উঠছে, নদী কত দিন শুকনো থাকে, জেলায় বছরে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ— এই সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করেন তিনি। পৌরপ্রধান নবেন্দু মাহালি বলেন, “এই নদী থেকেই আমাদের জলের নতুন উৎসের সন্ধান করতে হবে। আইআইটি’র ওই বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক নদীর ঘাটগুলি ঘুরে দেখেছেন। বিভিন্ন তথ্যও সংগ্রহ করেছেন। তিনি আবার আসবেন। নতুন উৎসের খোঁজ দিতে বা জলের সরবরাহ বাড়াতে সবিস্তার প্রকল্প রিপোর্ট (ডিপিআর) দেবেন। সেই রিপোর্ট রাজ্য সরকারের কাছে পাঠাব।”

পৌরপ্রধান এও বলেন, “শহরে পানীয় জলের প্রধান উৎস কংসাবতী নদী। গ্রীষ্ম আসার আগেই নদী শুকিয়ে যায়। এই সময় ভরসা বালির স্তরে সঞ্চিত জল। সেই জল নদীর কয়েকটি জায়গা থেকে তোলা হয়। কিন্তু, এবার অবস্থা খুবই খারাপ। জলস্তর একেবারেই তলানিতে চলে গিয়েছে। নদীর তলা থেকে নামমাত্র পরিমাণ জল মিলছে।” তাঁর দাবি, “রাজ্যে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরে, ‘মিউনিসিপ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিরেক্টরেট’-এর বিশেষজ্ঞেরা নদীর বুকে ‘ইনফিল্টেশন গ্যালারি’ (নদীবক্ষে বালির নীচে আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে বালির স্তরের জল আটকে রাখা) তৈরি করে জলের জোগান কিছুটা বাড়াতে পেরেছিলেন। কিন্তু, চাহিদা বাড়তে থাকায় টান পড়ছে জলের সেই ভান্ডারেও। তাই নিয়মিত সরবরাহ করতে পারছি না। সে কারণে জলের নতুন উৎস খোঁজা প্রয়োজন।” তিনি বলেন, তেলেডি ঘাটে ইনফিল্টেশন গ্যালারি রয়েছে। প্রয়োজনে শিমূলিয়া ঘাটের কিছুটা নীচের দিকে আর একটি ইনফিল্টেশন গ্যালারি করা যেতে পারে।

এদিক, এই মুহূর্তে বিশ্বের সর্বাধিক জনবহুল দেশ ভারতে পানীয় জলের গভীর সঙ্কট নিয়ে খোদ বিশ্বব্যাঙ্ক আশঙ্কার কথা শুনিয়েছে। তাদের মতে, পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ১৮ শতাংশ মানুষ বাস করেন ভারতে। কিন্তু, সারা বিশ্বের ভূগর্ভস্থ জলের মাত্র ৪ শতাংশ (চার শতাংশ) অবস্থান করছে ভারতে। এই তথ্য জানিয়ে বিশ্বব্যাঙ্ক বলেছে, “যার ফলে ভারত এই মুহূর্তে বিশ্বের অন্যতম জলসংকটে থাকা বা ’ওয়াটার স্ট্রেসড’—দেশ (Water)!” এনিয়ে, গত রবিবার কলকাতায় একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত আইআইটি খড়্গপুরের (IIT Kharagpur) ভূতত্ত্বের অধ্যাপক তথা এই মুহূর্তে দেশের অন্যতম শীর্ষ জল-বিজ্ঞানী (জল-সংরক্ষণ, দূষণ নিয়ন্ত্রণ, জলের রাসায়নিক ও ভৌত চরিত্র বিশ্লেষণে অসাধারণ অবদানের জন্য পেয়েছেন বিজ্ঞান-সাধনায় ভারতের সর্বোচ্চ ‘শান্তিস্বরূপ ভাটনগর পুরস্কার’) অধ্যাপক অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় একটি সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে বলেন, “দেখুন, এই মুহূর্তে ভূগর্ভস্থ জলের উত্তোলন সারা পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হয় ভারতে। আর, এটা আজকের ব্যাপার নয়। মোটামুটি পুরো সভ্যতার ইতিহাসেই ভারত এই জায়গাটায় রয়েছে। ভূগর্ভস্থ জল হচ্ছে প্রাকৃতিক সম্পদ। ওটা আর ফিরে আসবে না। সবচেয়ে বড় কথা কী জানেন? শুধু ভারতীয় দৃষ্টিকোণ থেকে যদি দেখি, যেভাবে ভূগর্ভস্থ জল তোলা হচ্ছে, তাতে এই জল সম্ভবত আর তিরিশ-চল্লিশ বছরের মধ্যে পেট্রোলিয়ামের চাইতেও তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যেতে পারে!”

তাঁর মতে প্রকৃতির ভারসাম্য তথা জলাভূমি নষ্ট করার ক্ষেত্রে বাংলা তথা ভারত অগ্রগণ্য! এর সঙ্গে, অনাবৃষ্টি, নদীর দূষণ, জলাধারে জল নেমে যাওয়া— একের পর এক সমস্যা দেখে এবার সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ছে ভূগর্ভস্থ জলের দিকে। খোঁড়া হচ্ছে অতি-গভীর ‘পাম্প’, তার জল চলে যাচ্ছে শহরের বহুতল অট্টালিকা থেকে গ্রামের চাষের জমি সর্বত্র! আর, এটাই এখন বিপদ ডেকে এনেছে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, “এই যে ভূগর্ভস্থ জল কমে আসছে, তার সরাসরি ফলশ্রুতি হচ্ছে, গঙ্গা ক্রমশ শুকিয়ে যাচ্ছে। আমাদের হিসেবে, গত পঞ্চাশ বছরে ৫৯ শতাংশ গঙ্গার ভূগর্ভস্থ জলের যোগান শুকিয়ে গিয়েছে। এইরকম চলতে থাকলে ২০৫০ সালের মধ্যে ৭৫ শতাংশ কমে যাবে! শুধু গঙ্গাই নয়, ভারতের নানা বড় নদীই এইভাবে শুকিয়ে আসছে।” বিজ্ঞানী অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় আরও বলেন, “আসলে আমরা যেটা করছি, ওই অল্পসময়ের লাভের জন্য দীর্ঘমেয়াদি লাভের জায়গাগুলো আমরা ধ্বংস করে ফেলছি! যদি আপনি ইতিহাস দেখেন, এককালে কলকাতায় বহু জলাভূমি ছিল। যেগুলো পড়ে রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে এই পূর্ব কলকাতা জলাভূমিটাই সেই অর্থে বেঁচে আছে। আদি গঙ্গার অবস্থা দেখুন। মেট্রোর থাম বসে আদি গঙ্গার প্রবাহটাই আটকে গিয়েছে। অথচ, আদিগঙ্গাই ছিল এককালে গঙ্গার মূল প্রবাহ। দক্ষিণ কলকাতার জল-ভারসাম্যটা আদিগঙ্গাই নিয়ন্ত্রণ করত। এখন দেখুন, এই যে দক্ষিণ কলকাতায় এত জল জমছে, তার অন্যতম কারণ আদি গঙ্গার এই বেহাল দশা। এদিকে, পূর্ব কলকাতা জলাভূমি হচ্ছে যাকে বলে ‘ডিসচার্জ জোন’। এটা যদি বুজিয়ে ফেলা হয়, তাহলে জল তো উপচাবেই। সাধারণ ভৌত বিজ্ঞানের যুক্তি। ফলে জলাভূমির জন্য একটা মিলিত, ইন্টিগ্রেটেড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম তৈরি করা দরকার। না হলে আরও বিপদ এলে আর কিছু করার থাকবে না।”

বিজ্ঞানী অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় :

News Desk

Recent Posts

Vidyasagar University: আবহাওয়ার নিখুঁত খবর জানতে ISRO-র সহযোগিতায় আকাশে যন্ত্র লাগানো বেলুন পাঠাল বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৩ জুন: রবিবার (২২ জুন) দুপুর ঠিক ২টো ১…

1 day ago

Midnapore: “১৯৭৮-এর পর এমন ভয়াবহ বন্যা দেখেনি গড়বেতা!” আসরে NDRF-SDRF; প্লাবন পরিস্থিতি চন্দ্রকোনাতেও

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২০ জুন: ১৯৭৮ সালের পর এমন ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির…

4 days ago

Midnapore: মিয়াজাকি, ব্ল্যাকস্টোন থেকে আম্রপালি, হিমসাগর; মেদিনীপুরে জমজমাট ‘আম উৎসব’

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৮ জুন: ৩০ টাকা প্রতি কেজি থেকে ৩ লক্ষ…

6 days ago

Kharagpur: খড়্গপুরের কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ! মৃত্যু এক শ্রমিকের

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, খড়্গপুর, ১৭ জুন: গ্লিসারিন কারখানায় ওয়েল্ডিং- এর কাজ চলাকালীন ভয়াবহ বিস্ফোরণ!…

1 week ago

Midnapore: প্রায় দু’দশক পরে পশ্চিম মেদিনীপুরে শুরু হয়েছিল প্রাথমিকে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া; থমকে গেল আদালতের নির্দেশে

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৬ জুন: ২০০৮ এর পর ২০২৫। দীর্ঘ প্রায় দুই…

1 week ago

Elephant: হাতির পালকে তাক করে ছোঁড়া হচ্ছে একের পর এক জ্বলন্ত হুলা; নেটমাধ্যমে ছবি ছড়িয়ে পড়তেই নিন্দার ঢল

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, খড়্গপুর, ১৩ জুন: হাতির পালকে তাক করে ছোঁড়া হচ্ছে একের পর…

2 weeks ago