thebengalpost.net
ধ্যান:

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৫ মে: দেশের প্রাচীনতম আইআইটি। যেখানে পড়াশোনা করেছেন গুগল সিইও সুন্দর পিচাই থেকে টাটা মোটরসের প্রাক্তন চেয়ারম্যান রবিকান্ত, বিনোদ গুপ্ত, সুরজিৎ পুরকায়স্থ, অরবিন্দ কেজরিওয়ালের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত হাজার হাজার ব্যক্তিত্বরা। বিশ্বের প্রথম সারির সেই ‘প্রতিষ্ঠান’ নিয়েই এখন উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা। চলতি বছরে ৪ মে পর্যন্ত, ৪ মাসে ৩ জন মেধাবী পড়ুয়ার ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে আইআইটি খড়্গপুরের বিভিন্ন হোস্টেল থেকে। পড়ুয়াদের নিজেদের রুম থেকেই পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করেছে প্রতিটি ক্ষেত্রে। ২০২২ সাল থেকে ধরলে এই অস্বাভাবিক মৃত্যুর সংখ্যাটা অন্তত ছয় (৬)। সম্প্রতি, পড়ুয়াদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা রুখতে একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে আইআইটি খড়্গপুরে। পড়ুয়াদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য অত্যাধুনিক জেন লাউঞ্জের উদ্বোধন হয়েছে প্রাক্তনীদের উদ্যোগে। নিয়মিত কাউন্সেলিং-র ব্যবস্থা সহ যেকোন পরিস্থিতিতে মানসিক অবসাদ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ২৪ ঘন্টার অনলাইন পরিষেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পড়ুয়াদের কাছে সেই তথ্য পৌঁছে দিতে প্রতিটি হোস্টেলের দরজায় দরজায় সাঁটিয়ে দেওয়া হয়েছে কিউআর কোড। যেকোনো মুহূর্তে, যেকোন পরিস্থিতিতে স্ক্যান করলেই মিলবে সহায়তা। এমনটাই জানিয়েছেন আইআইটি খড়্গপুরের জনসংযোগ আধিকারিক। শুধু তাই নয়, মৃত এক ছাত্রের পরিজনদের পরামর্শ মেনে গত ২ মে, শুক্রবার একটি বিশেষ কমিটি গঠনের সিদ্ধান্তও গৃহীত হয়েছে ভারপ্রাপ্ত ডিরেক্টর অমিত পাত্রের উপস্থিতিতে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, তার মাত্র দু’দিনের মধ্যেই, আজ, রবিবার (৪ মে) আরও এক মেধাবী পড়ুয়ার ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার হল তাঁর নিজের রুম থেকে। বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন আইআইটি কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে অভিভাবকরা।

thebengalpost.net
আইআইটি খড়্গপুরে ফের ছাত্রমৃত্যু:

thebengalpost.net
বিজ্ঞাপন (Advertisement):

উল্লেখ্য, গত ১২ জানুয়ারি (রবিবার) ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-র তৃতীয় বর্ষের ছাত্র তথা কলকাতার কসবার বাসিন্দা (আদিবাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরের খুকুড়দহে), বছর ২১-র সাওন মালিকের ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার হয় আজাদ হলের ৩০২ নম্বর রুম থেকে। এরপর, গত ২০ এপ্রিল, রবিবার রাত্রি ১০টা নাগাদ অনিকেত ওয়ালকার নামে ওশেন ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড নোভাল আর্কিটেকচার বিভাগের চতুর্থ বর্ষের মেধাবী পড়ুয়ার ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করা হয় জগদীশচন্দ্র বসু হলের সি-২১৪ রুম থেকে। অনিকেত মহারাষ্ট্রের রামনগর থানা এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। ফের আজ, রবিবার (৪ মে) বিহারের শিওহর জেলার বাসিন্দা তথা সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-র তৃতীয় বর্ষের ছাত্র মহম্মদ আসিফ কামারের ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার হয় আইআইটি খড়্গপুরের মদনমোহন মালব্য হলের ১৩৪ নম্বর রুম থেকে। তার আগে, গত তিন বছরে অর্থাৎ ২০২২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৩ পড়ুয়ার অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। ২০২২ সালের ১৪ অক্টোবর অসমের তিনসুকিয়ার বাসিন্দা, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-র তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ফয়জান আহমেদের পচাগলা দেহ উদ্ধার হয়। ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র কে. কিরণ চন্দ্রা এবং ২০২৪ সালের জুন মাসে বায়ো টেকনোলজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী দেবিকা পিল্লাইয়ের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। এর মধ্যে একমাত্র ফাইজান আহমেদের ক্ষেত্রেই ‘খুনের তত্ত্ব’ উঠে এসেছে। বাকিরা পড়াশোনার চাপ, মানসিক অবসাদ সহ নানা কারণে আত্মঘাতী হয় বলেই পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছে।

আইআইটি সূত্রেই জানা যায়, গত ২০ এপ্রিল মৃত অনিকেত ওয়ালকারের মা সুনীতা দীপক ওয়ালকার আইআইটি খড়্গপুরে পৌঁছে কর্তৃপক্ষকে জানান, ঠিক কি কারণে তাঁর ছেলে এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা খুঁজে বের করতে যেন একটি বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়। তাতে ভবিষ্যতে অন্যান্য পড়ুয়াদের ক্ষেত্রেও সতর্ক হতে পারবে আইআইটি কর্তৃপক্ষ। সেই পরামর্শ মেনে কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইআইটি খড়্গপুরের জনসংযোগ আধিকারিক। এছাড়াও, পড়ুয়ারা যাতে যোগা, মেডিটেশন প্রকৃতির মাধ্যমে নিজেদের চাপমুক্ত রাখতে পারে সেজন্য গত ৭ ফেব্রুয়ারি এক অসাধারণ পরিবেশ যুক্ত জেন লাউঞ্জের উদ্বোধন করা হয়েছে। যদিও, তারপরও দুই মেধাবী পড়ুয়া আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। এনিয়ে বর্তমান পড়ুয়াদের অভিভাবকরা যেমন উদ্বিগ্ন, ঠিক তেমনই দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন ভাবী অভিভাবকরাও। চলতি বছরে অল ইন্ডিয়া জয়েন্টের এক টপার আইআইটি খড়্গপুরে পড়াশোনার জন্য জেইই অ্যাডভান্সের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। রবিবারের ঘটনার পর ওই পড়ুয়ার অভিভাবকও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁর মতে, “কিভাবে একের পর এক উজ্জ্বল নক্ষত্ররা হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যশালী ও প্রাচীনতম এই প্রযুক্তিবিদ্যার প্রতিষ্ঠান থেকে! কর্তৃপক্ষের আরও সচেতন ও সজাগ হওয়া প্রয়োজন।”

thebengalpost.net
জেন লাউঞ্জ: