thebengalpost.net
রায় ঘোষণা করলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়:

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১২ মে: ২০১৬-‘১৭ সালে নিযুক্ত প্রায় ৪৩ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের মধ্যে প্রায় ৩৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিল করলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। আগামী ৩ মাসের মধ্যে নতুন করে ইন্টারভিউ নিয়ে প্যানেল বা মেধা তালিকা তৈরি করে, আগামী ৪ মাসের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। প্রসঙ্গত, প্রাথমিক টেট- ২০১৪ (Primary TET- 2014)’র ভিত্তিতে ২০১৬-‘১৭ সালে প্রায় ৪৩ হাজার (৪২,৯৯৫) শিক্ষক নিয়োগ করেছিল রাজ্য সরকারের অধীন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। তৎকালীন পর্ষদ সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছিল। আর, সেই প্রক্রিয়ায় প্রায় ১১ হাজার প্রশিক্ষিত (D.El.Ed) এবং প্রায় ৩২ হাজার অপ্রশিক্ষিত (NCTE’র নিয়মে সেই সময় B.Ed দেরও অপ্রশিক্ষিত হিসেবেই ধরা হত) প্রার্থী শিক্ষক-শিক্ষিকা হিসেবে রাজ্যের বিভিন্ন স্কুলে নিযুক্ত হয়েছিলেন বলে পর্ষদ সূত্রে খবর। কিন্তু, ‘বিতর্কিত‘ সেই নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে বিস্তার অভিযোগ এবং মামলা হয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টে। আজ, শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩-টা নাগাদ তেমনই একটি মামলার রায়দান করলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। রুপালি সাহা, রাজর্ষি মুখার্জি, সুদীপ্তা ঘোষ, সায়ক হালদার, আমিরুল ইসলাম সহ প্রায় ১৪০ জন অপ্রশিক্ষিত চাকরিপ্রার্থী আইনজীবী তরুণ জ্যোতি তেওয়ারির মাধ্যমে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বেঞ্চে মামলা দায়ের করেছিলেন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় একাধিক ত্রুটি বা দুর্নীতির অভিযোগ তুলে‌ ধরে। অ্যাপটিটিউড টেস্ট (৫ নম্বরের) না নেওয়া, সংরক্ষণ নীতি না মানা, বেশি নম্বর পাওয়া চাকরি প্রার্থীদের বঞ্চিত করে কম নম্বর পাওয়াদের নিযুক্ত করা সহ নানা অভিযোগ আনা হয়েছিল। গত প্রায় ৪-৫ মাস ধরে সেই মামলার শুনানি হয়। মামলার চূড়ান্ত শুনানি হয় গতকাল অর্থাৎ বৃহস্পতিবার। আজ (শুক্রবার) সেই মামলার রায় ঘোষণা করলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।

thebengalpost.net
রায় ঘোষণা করলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়:

উল্লেখ্য যে, ২০১৬-‘১৭ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় চরম দুর্নীতি হয় বলে অভিযোগ উঠেছিল। গভীর রাতে প্রার্থীদের ফোনে এসএমএস বা মেসেজ পাঠিয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। সেই সময় রাজ্যে যথেষ্ট সংখ্যক ডিএলএড প্রশিক্ষিত (D.EL.ED) চাকরি প্রার্থী না থাকায় অপ্রশিক্ষিতদেরও নিয়োগ করা হয়েছিল NCTE’র ছাড়পত্র নিয়ে। সেই রিলাক্সেশন বা ছাড়পত্রের সুযোগ নিয়ে তৎকালীন পর্ষদ সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য বেনজির দুর্নীতি করেছিলেন বলে অভিযোগ। কোনোরকম সংরক্ষণ নীতি মানা হয়নি এবং সঠিক নিয়ম মেনে ইন্টারভিউ বা অ্যাপটিটিউড টেস্ট নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছিল। পরবর্তী সময়ে কলকাতা হাইকোর্টে ভুরি ভুরি মামলা হয়েছিল। তেমনই ১-টি মামলার রায় ঘোষণা করলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। যেখানে বলা হয়েছে, সেই সময় যাঁরা প্রশিক্ষিত ছিলেন তাঁদের নিয়োগ বৈধ। তাঁদের নিয়োগে আদালত কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করছে না। কিন্তু, সেই সময় ‘অপ্রশিক্ষিত’ (NCTE’র ছাড়পত্র বা Relaxation মেনে) যে ৩৬ হাজার (যদিও, এতদিন তা ৩২ হাজার বলেই পর্ষদের তরফে জানানো হয়েছিল) প্রার্থীকে নিয়োগ করা হয়েছিল, তাঁদের নিয়োগ বাতিল করা হচ্ছে। তবে, এখনই কারুর চাকরি যাবে না। আগামী চার মাস তাঁরা স্কুলে যেতে পারবেন। কিন্তু, তাঁরা প্যারা টিচারেরদের মতো বেতন পাবেন। এর মধ্যে যাঁরা ‘পুনরায়’ নিযুক্ত হবেন, তাঁদের সার্ভিস ব্রেক হবেনা!

এর মধ্যে, নতুন করে ইন্টারভিউ (অ্যাপটিটিউড টেস্ট সহ) নিয়ে, টেট ও অ্যাকাডেমিক নম্বর যোগ করে প্যানেল বা মেধাতালিকা তৈরি করবে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। তবে, ওই ৩৬ হাজার শিক্ষকের মধ্যে (সংখ্যাটা বিভিন্ন সময়ে পর্ষদের তরফে বলা হয়েছিল ৩১-৩২ হাজার) বর্তমানে যাঁরা প্রশিক্ষিত হয়েছেন (D.EL.ED) কিংবা হননি তাঁরাও নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। ‌সেই হিসেবে ৩৬ হাজার শিক্ষকই (বা, ৩২ হাজার) নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতেন পারবেন। কারণ, তাঁরা বর্তমানে সকলেই প্রশিক্ষিত হয়েছেন। তবে, তাঁরা সকলেই যে নতুন মেধাতালিকায় আসতে পারবেন, এমনটা নাও হতে পারে! কারণ, টেটের নম্বর, অ্যাকাডেমিক নম্বর এবং ইন্টারভিউর (অ্যাপটিটিউড টেস্ট সহ) নম্বর যোগ করে যে মেধাতালিকা তৈরি হবে, তাতে অনেকেই বাদ পড়তে পারেন এবং টেট পাস নট ইনক্লুডেড প্রশিক্ষিতদের মধ্যে অনেকেই সেই মেধা তালিকায় জায়গা করে নিতে পারেন। যদিও, রাজ্যের তরফে এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চ থেকে শুরু করে পরবর্তী সময়ে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়া হতে পারে বলেও আইনজীবীদের একটি মহল থেকে জানানো হচ্ছে। ইতিমধ্যে, শুক্রবার সন্ধ্যায় সাংবাদিক বৈঠক করে পর্ষদ সভাপতি গৌতম পাল জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা এই রায় চ্যালেঞ্জ করে উচ্চতর আদালতে অর্থাৎ কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে যাবেন। তাঁর মতে, এই মুহূর্তে সকলেই প্রশিক্ষিত হয়ে গেছেন এবং সেই সময় তাঁদের সমস্ত নিয়ম মেনেই নিয়োগ করা হয়েছিল।