দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৬ জুলাই: কোভিড অতিমারীর সময়ে এলাকার ভগবান হয়ে উঠেছিলেন তিনি! শেষমেশ নিজেও কোভিড আক্রান্ত হয়ে পড়েন। ১৮ দিনের লড়াই শেষে প্রয়াত হন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়্গপুর শহরের নামকরা চিকিৎসক ডাঃ এ. কে. মাইতি। প্রথম ঢেউয়ের সময়ে হাজার হাজার রোগীকে পরিষেবা দিয়েছিলেন তিনি। শুধু কোভিড নয়, সারা বছর ধরে যেকোনো রোগ-জ্বালার ক্ষেত্রে এলাকাবাসীর বড় ভরসা ছিলেন এই অভিজ্ঞ চিকিৎসক। কিন্তু, দ্বিতীয় ঢেউয়ের শুরুতেই (ফেব্রুয়ারি মাস নাগাদ) সত্তরোর্ধ্ব এই চিকিৎসক শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর দু’ই ছেলেই চিকিৎসক। বড় ছেলে কলকাতায় থাকেন। ছোটো ছেলে লন্ডনে ইএনটি’র উপরে এফ আর সি এস করছেন। ডাঃ এ. কে. মাইতি’র স্ত্রী জয়ন্তী মাইতি জানিয়েছেন, “আমার স্বামীকে বাঁচানোর লড়াইতে আমরা সকলেই সেই সময় কলকাতায় ছিলাম। তাঁর মৃত্যুর পরও ৩-৪ মাস কলকাতাতেই ছিলাম। এরপর, আমার ছোটো ছেলে লন্ডন থেকে ফেরার পর খড়্গপুরে এসে দেখি, খরিদা বাজার এলাকায় তাঁর ৪০ বছরের চেম্বারটি দখল করে নিয়েছেন মালিক পক্ষ! আমরা ভাড়া সহ সমস্ত কিছুই ৪০ বছর ধরে ঠিকঠাক রেখেছি। তা সত্ত্বেও এভাবে আমাদের তালা ভেঙে নিজেদের তালা লাগিয়ে এবং চেম্বারের সামনে মালপত্র জমা করে দখল করে নেওয়াটা মেনে নিতে পারিনি!” এরপর, গত মাস দুয়েক ধরে চিকিৎসকের ষাটোর্ধ্ব স্ত্রী থানা-পুলিশ করেও কাজ হয়নি। শেষ পর্যন্ত, পৌর প্রশাসক প্রদীপ সরকারের হস্তক্ষেপে এবং খড়্গপুরের সাংবাদিকদের আবেদনে সাড়া দিয়ে, পুলিশ প্রশাসনের লোকেরা রবিবার চেম্বার উদ্ধার করে দেন। চেম্বারের চাবি তুলে দেওয়া হয়, জয়ন্তী দেবী’র হাতে।

thebengalpost.in
চেম্বার উদ্ধার করা হলো পশ্চিম মেদিনীপুরে :

প্রসঙ্গত, গত প্রায় ৪০ বছর ধরে খড়্গপুর শহরের খরিদা বাজার এলাকায় জৈন বিল্ডিংয়ের একতলায় রোগী দেখেছেন চিকিৎসক ডাঃ এ. কে. মাইতি। মাঝেমধ্যে ওই চেম্বারে রোগী দেখতেন তাঁর চিকিৎসক ছেলেরাও। কিন্তু, বাবার মৃত্যুর পর, ছেলেরা দেখেন তাঁদের এতদিনের চেম্বার দখল করে নিয়েছেন মালিকপক্ষ। তাঁরা আপাতত বাইরে থাকেন, তাই ভোগান্তিতে পড়তে হল মা জয়ন্তী মাইতি’কে! এদিকে, জৈন-দের দুই ভাই, নবীন জৈন ও প্রদীপ জৈন। সম্পত্তি তাঁদের দুই ভাইয়ের মধ্যেও বিবাদ আছে বলে জানা গেছে। চিকিৎসকের তরফে ভাড়া মেটানো হত ছোটো ভাই নবীন’কে। প্রদীপ এদিন ভাইয়ের নামে অভিযোগ করে বললেন, “ও একটা জালিয়াত। এটার মালিক আমি। আমার সঙ্গে ডাক্তারবাবুর স্ত্রী কোনো আলোচনাই করেননি!” যাই হোক, আপাততো সকলের প্রচেষ্টায় স্বামীর চেম্বার ফিরে পেয়ে খুশি জয়ন্তী দেবী। এজন্য তিনি এলাকার প্রাক্তন বিধায়ক তথা পৌর প্রশাসক প্রদীপ সরকার এবং সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন, খড়্গপুর টাউন থানার আই সি সহ পুলিশ প্রশাসনের প্রতিও।