দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৮ অক্টোবর: মরণাপন্ন শিশুকে নিয়ে প্রায় আধঘন্টা ধরে আটকে মেদিনীপুর শহরের তাঁতিগেড়িয়া লেভেল ক্রসিংয়ে! ক্রমেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লো ছোট্ট আদ্রিকা। মেদিনীপুর মেডিক্যালে পৌঁছলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন! মঙ্গলবার দুপুরে মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা শহর মেদিনীপুরের অদূরে খয়েরুল্লা চকে। জানা যায়, মেদিনীপুর সদর ব্লকের অন্তর্গত খয়েরুল্লা চকের বাসিন্দা, পেশায় কাঠের মিস্ত্রী প্রসেনজিৎ মজুমদারের দশ মাসের শিশুকন্যা আদ্রিকা-কে মঙ্গলবার বেলা ১০-১১ টা নাগাদ তাঁর স্ত্রী আইসিডিএস এর দেওয়া খিচুড়ি ছেঁকে খাওয়াচ্ছিলেন। সেই পাতলা খিচুড়ি খাওয়ানোর সময় কোনোভাবে তা আদ্রিকা’র শ্বাসনালীতে আটকে যায়! এরপরই, যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকে শিশুটি। শিশুটির সঙ্গে তার মাও কাঁদতে থাকেন! দ্রুত শিশুটিকে নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দেন পরিবার পরিজনেরা। কিন্তু, বাড়ির অদূরেই সেন্ট জোসেফ হাসপাতালে জরুরি বিভাগ না থাকায়, তাঁরা তড়িঘড়ি মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। দুর্ভাগ্যবশত, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে যাওয়ার পথেই তাঁতিগেড়িয়া লেভেল ক্রসিংয়ের রেল গেট পড়ে যায়! সেখানে প্রায় আধঘন্টা আটকে পড়তে হয় বলে অভিযোগ আদ্রিকা’র বাবা প্রসেনজিৎ-এর। এরপর, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে পৌঁছলে চিকিৎসকেরা শিশুটিকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। ঘটনায় শোকে মুহ্যমান পরিবারের সকলে। বারবার সংজ্ঞা হারাচ্ছেন শিশুটির মা! শোকে পাষাণ হয়ে গেছেন বাবা। একইসঙ্গে, পরিবার সহ এলাকাবাসীর ক্ষোভের ঢেউ আছড়ে পড়ছে ওই তাঁতিগেড়িয়া লেভেল ক্রসিং-কে ঘিরে!
ছোট্ট আদ্রিকার বাবা প্রসেনজিৎ মজুমদার বলেন, “ওকে খাওয়াতে গিয়ে কোনক্রমে খাবার আটকে যায় গলায়। আমরা দ্রুত মেডিক্যাল কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলাম। কিন্তু, আমাদের দুর্ভাগ্য তাঁতিগেড়িয়ার লেভেল ক্রসিং ঘন্টার পর ঘন্টা (বাস্তবে প্রায় আধঘন্টা) পড়ে থাকে! যার ফলেই আমাদের নিয়ে যেতে দেরি হয়। ফলে, রাস্তাতেই ওর মৃত্যু হয়! সরকারের কাছে আবেদন জানাব, এই লেভেল ক্রসিং-এর ওপর একটি ওভারব্রিজ যেন দ্রুত করা হয়। আমার মেয়ের মতো এভাবে যেন আর কাউকে চলে যেতে না হয়!” একইসঙ্গে, খয়েরুল্লা চকে অবস্থিত সেন্ট জোসেফ হাসপাতালে জরুরী বিভাগ চালু করার দাবিও তোলেন এলাকাবাসী। স্থানীয় স্বাস্থ্য কেন্দ্রের দিদিমণি সুমিতা ঘোষ বলেন, “এলাকার সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে স্বাস্থ্য কেন্দ্র বা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে তাঁতিগেড়িয়ার লেভেল ক্রসিং! যা ঘন্টার পর ঘন্টা পড়ে থাকে। সরকারের কাছে আবেদন করব, অবিলম্বে এখানে ওভার ব্রিজের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য। পাশাপাশি আমাদের গ্রামে অবস্থিত জোসেফ হাসপাতালে অবিলম্বে জরুরী পরিষেবা চালু করা হোক। না হলে হয়তো এই কয়েকটি গ্রামের অনেক মানুষের জীবন শেষ হয়ে যাবে এভাবেই!”