দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৬ নভেম্বর: প্রায় ৮০ ঘন্টা পেরিয়ে গেল, এখনও খোঁজ মিললো না মেদিনীপুর শহর সংলগ্ন নেপুরা গ্রামের বছর পাঁচেকের শিশু অরণ্য মাঝি’র। বুধবার (২৩ নভেম্বর) বাড়ির উঠোনে খেলছিল সে। সেই সময় মাত্র ১০ মিনিটের জন্য মায়ের তথা পরিবারের সদস্যদের চোখের আড়াল হয়েছিল! তার মধ্যেই আর খুঁজে পাওয়া যায়নি অরণ্য-কে। বুধবার থেকে চতুর্দিকে খোঁজাখুঁজি থেকে শুরু করে পুলিশের তল্লাশির পরেও খোঁজ মেলেনি ছোট্ট অরণ্যের। শনিবার সকাল থেকে তাই ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী মেদিনীপুর-গুড়গুড়িপাল রাজ্য সড়ক অবরোধ করলেন। তাঁদের একটাই দাবি, “অরণ্যকে খুঁজে দিতে হবে।” দুপুর ২টো অবধি চলে অবরোধ। পরে পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তাদের হস্তক্ষেপে এলাকাবাসী আজকের মতো অবরোধ তুলে নেন। অন্যদিকে, দুপুরের পর ড্রোন এবং স্নিফার ডগ নিয়ে গিয়ে গোটা এলাকায় তল্লাশি অভিযান চালানো হয় জেলা পুলিশের তরফে। তবে, কোথাও খোঁজ মেলেনি অরণ্যের। এমনকি, পুলিশের তরফেও এখনও পর্যন্ত আশার আলো দেখানো হয়নি! একইসঙ্গে তাই শোক ও ক্ষোভের ছায়া এলাকাজুড়ে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বুধবার সকালের দিকে রোজকার মতোই বাড়ির সামনে খেলাধুলা করছিল বছর পাঁচেকের অরণ্য। সকাল সাড়ে সাড়ে এগারোটা নাগাদ তার মা স্নান করতে যাওয়ার কথা বললে, সে জানায় “একটু পরে স্নান করবো।” এরপর, মা বছর দুয়েকের ছোটো ছেলেকে নিয়ে স্নান করতে যান বাড়ির পাশেরই একটি পাম্পে। ১০ মিনিট পর ফিরে এসে মা আর খুঁজে পাননা তাঁর বড় ছেলেকে (অরণ্য-কে)। এরপরই, স্থানীয় গুড়গুড়িপাল থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয় পরিবারের তরফে। তবে, এখনও অবধি পুলিশ অরণ্যের হদিস পায়নি। এদিকে, স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, অরণ্য’র বাবা রমেশ মাঝি একজন অতি সাধারণ খেটেখাওয়া মানুষ। কখনও দীনমজুর হিসেবে অন্যের জমিতে বা শ্রমিক হিসেবে কোনো কাজ করেন। মা অমৃতা মাঝি গৃহবধূ। তাঁদের দুই ছেলে। অরণ্য বড়। ছোটো ছেলের বয়স দেড়-দু’ বছর। সহজ-স্বাভাবিক জীবনে এই ঘটনা যেন তাঁদের কাছে অনেকটা বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতোই! অরণ্যের মা জানিয়েছেন, মাত্র ১০ মিনিট বাড়ির সামনে একাই খেলছিল সে। তারপরই তিনি ফিরে এসে দেখেন, অরণ্য কোথাও নেই!
এদিকে, বাড়ির আশেপাশে পুকুর বা জলাশয়-ও নেই যে কোনো দুর্ঘটনা ঘটবে! তবুও, কিছুটা দূরে যে পুকুর আছে, সেখানেও জাল ফেলে দেখা হয়েছে ইতিমধ্যে। অন্যদিকে, এলাকায় অরণ্যের বাবা রমেশ মাঝি’র কোনো শত্রুও নেই বলে জানিয়েছেন প্রতিবেশীরা। সর্বোপরি, পাড়ায় বা ওই এলাকায় সন্দেহ করার মতো এখনও কারুর হদিস মেলেনি। তবে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকাবাসীর মধ্যে কেউ কেউ বলছেন, অচেনা কোনো পুরুষ বা মহিলা-কে তাঁরা সন্দেহ করছেন। যদিও, কেউই তেমন সন্দেহজনক কিছু দেখেননি বলে জানিয়েছেন। তা সত্ত্বেও, তাঁদের অনুমান অচেনা কোনো লোকজন-ই হয়তো ‘অপহরণ’ করে নিয়ে গেছে অরণ্যকে। পুলিশ অবশ্য তদন্তে সমস্ত দিকই খতিয়ে দেখছে। শনিবার দুপুরে গ্রামে গিয়েছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হেডকোয়ার্টার) পিনাকী দত্ত। তিনি জানিয়েছেন, তদন্ত চলছে। আগামীকালও এলাকায় তল্লাশি অভিযান চালানো হবে। আশেপাশের সিসিটিভি ফুটেজ-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।