thebengalpost.net
পরে:

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৩ জানুয়ারি: হস্তশিল্পী ও স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের উৎসাহিত করতে ‘১ম আঞ্চলিক সৃষ্টিশ্রী মেলা’-র উদ্বোধন হল শুক্রবার (১২ জানুয়ারি)। সবংয়ের মাদুর, পিংলার পট থেকে শুরু করে বিষ্ণুপুরের বালুচরী সহ ১৪-টি জেলার হস্তশিল্পী তথা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর ১২২-টি স্টল নিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের মেদিনীপুর শহরের কলেজ কলেজিয়েট মাঠে শুক্রবার বিকেলে এই মেলার উদ্বোধন হয়। আর সেই ‘সৃষ্টিশ্রী মেলা’-র উদ্বোধনের আগেই পড়ন্ত বিকেলে ঐতিহাসিক কলেজ কলেজিয়েট মাঠের মঞ্চে সামান্য সময়ের জন্য হলেও এক নাটকীয় পরিস্থিতি তৈরী হয়! নাটকীয় এই পরিস্থিতিকে যদি একটি ‘ত্রিভুজ’-র রূপ দেওয়া যায়, তবে তার শীর্ষবিন্দুতে অবস্থান করবেন মেদিনীপুরের ‘কিশোর বিপ্লবী’ তথা অত্যাচারী ব্রিটিশ শাসক ডগলাস নিধনের অন্যতম ‘নায়ক’ শহীদ প্রদ্যোত কুমার ভট্টাচার্য (১৩ নভেম্বর, ১৯১৩ – ১২ জানুয়ারি, ১৯৩৩)। ত্রিভুজের নিচের ‘বাম’ বিন্দুতে অবস্থান করতে পারেন এই অনুষ্ঠানের আয়োজকরা! আর, ‘ডান’ বিন্দুতে অবস্থান করবেন নিঃসন্দেহে রাজ্যের ক্যাবিনেট মন্ত্রী (জলসম্পদ উন্নয়ন দপ্তরের) মানস রঞ্জন ভুঁইয়া। তবে, এই তিন বিন্দুর কোনোটিতেই ‘অবস্থান’ না করেও কার্যত ‘ট্র্যাজিক’ নায়ক-নায়িকাতে পরিণত হতে হল শহর মেদিনীপুরের সুপরিচিত ও সুপ্রতিষ্ঠিত দুই বাচিক শিল্পী তথা অনুষ্ঠানের দুই সঞ্চালককে (বা, ঘোষককে)!

thebengalpost.net
শেষমেশ শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন প্রদ্যোত ভট্টাচার্যের প্রতি:

প্রসঙ্গত, গতকাল অর্থাৎ ১২ জানুয়ারি ছিল ‘যুগপুরুষ’ স্বামী বিবেকানন্দের ১৬২-তম জন্মজয়ন্তী। একইসঙ্গে গতকাল (১২ জানুয়ারি) ছিল চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের নায়ক বিপ্লবী ‘মাস্টার দা’ সূর্য সেনের ৯১-তম আত্মবলিদান (২২ মার্চ ১৮৯৪ – ১২ জানুয়ারি ১৯৩৪) দিবসও। অন্যদিকে, মেদিনীপুরের ‘বীর সন্তান’ তথা অত্যাচারী ব্রিটিশ শাসক ডগলাস নিধনের অন্যতম ‘নায়ক’ শহীদ প্রদ্যোত কুমার ভট্টাচার্যেরও ৯২-তম আত্মবলিদান দিবস ছিল গতকাল অর্থাৎ ১২ জানুয়ারি। তবে, সৃষ্টিশ্রী মেলার মঞ্চে স্বামী বিবেকানন্দ এবং ‘মাস্টার দা’ সূর্য সেনের ছবি বা প্রতিকৃতি রাখা হলেও, ছিলো না পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুরের (গোকুলনগরের) ‘বীর সন্তান’ শহীদ প্রদ্যোত ভট্টাচার্যের ছবি বা প্রতিকৃতি! অনুষ্ঠানের সূচনা লগ্নে দুই সঞ্চালক মঞ্চে উপস্থিত মন্ত্রী মানস রঞ্জন ভুঁইয়া, প্রতিমন্ত্রী শিউলি সাহা, জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদরি সহ অতিথিদের বিবেকানন্দ ও মাস্টার দা-র ছবিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদনের জন্য আহ্বান জানান। এতদূর অবধি সব ঠিকঠাকই ছিল! পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করে যখন নিজের চেয়ারের দিকে ফিরছিলেন মন্ত্রী মানস রঞ্জন ভুঁইয়া, ঠিক সেই সময়ই তাঁকে মঞ্চের নিচ থেকে ডাকেন একটি নামকরা সংবাদপত্রের চিত্র সাংবাদিক দেবনাথ মাইতি। তিনিই মন্ত্রীকে বলেন, “একজন বিপ্লবী (মাস্টার দা সূর্য সেনের)-কে তাঁর আত্মবলিদান দিবসে শ্রদ্ধা জানানো হলো খুব ভালো কথা; কিন্তু মেদিনীপুরের বিপ্লবীকেই বিস্মৃত হলেন (বা, ভুলে গেলেন) আয়োজকরা?” এরপরই, আগুনে যেন ঘৃতাহুতি হয়! ‘বিপ্লবীদের আঁতুড়ঘর’ মেদিনীপুরের ‘বীর সন্তান’ শহীদ প্রদ্যোত ভট্টাচার্যের আত্মবলিদান দিবসে (ফাঁসির মঞ্চে জীবনের জয়গান গেয়ে যাওয়ার দিনে)-র কথা আয়োজকরা ভুলে যাওয়ায় তীব্র ভর্ৎসনা করেন সবংয়ের বিধায়ক তথা রাজ্যের ক্যাবিনেট মন্ত্রী মানস রঞ্জন ভুঁইয়া। দুই সঞ্চালককেও তিনি আয়োজকদের প্রতিনিধি বা সরকারি দপ্তরের কর্মী ভেবে তাঁদের উদ্দেশ্যেও কটাক্ষ ছুঁড়ে দেন! বলেন, “আপনারা থামুন! আজ প্রদ্যোত ভট্টাচার্যেরও আত্মবলিদান দিবস। মেদিনীপুরের ইতিহাস জানেনা!…দু’মিনিটের মধ্যে ছবি জোগাড় করে আনুন।”

thebengalpost.net
মন্ত্রী মানস রঞ্জন ভুঁইয়া-কে মনে করিয়ে দিচ্ছেন সাংবাদিক দেবনাথ মাইতি:

ঘটনায় একপ্রকার ‘হতভম্ব’ হয়ে যান মঞ্চে থাকা সকলেই। রীতিমতো ঘামতে শুরু করেন দুই সঞ্চালকও! এই ঘটনায় যে তাঁদের (দুই সঞ্চালকের) কোন দোষ নেই, তা তখন মন্ত্রীর কানে নিয়ে পৌঁছে দেওয়ার মত লোক নেই! প্রায় ১০ মিনিট এমনভাবেই কাটে! এর মধ্যেই মঞ্চ থেকে নিচে নেমে গিয়ে মেদিনীপুর পৌরসভা থেকে শহীদ প্রদ্যোত ভট্টাচার্যের ছবি নিয়ে আসেন চেয়ারম্যান সৌমেন খান। মন্ত্রী মানস রঞ্জন ভুঁইয়া সহ অতিথিরা একে একে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করেন। তবে, তখনও নাকি সঞ্চালকদের উপর থেকে রাগ কমেনি মানসের! এরপর, তিনি যখন মঞ্চ থেকে নিচে নামেন, সেই সময় এক সঞ্চালক মন্ত্রীকে বলেন, “স্যার এতে আমাদের কোন দোষ নেই, পুরোটাই করেছেন আয়োজক তথা সরকারি আধিকারিকরা। আমরা বরং অনুষ্ঠানের আগে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছিলাম, মাস্টারদা সূর্য সেনের ছবি আছে, কিন্তু প্রদ্যোত ভট্টাচার্যের ছবি নেই কেন?” এরপর ভুল ভাঙে মন্ত্রীর! তিনি তাঁদের উদ্দেশ্যে বলেন, “কিছু মনে করো না। আমি তোমাদের সরকারি দপ্তরেরই কর্মী ভেবেছিলাম। খুব ভালো সঞ্চালনা হচ্ছে। চালিয়ে যাও (ক্যারি অন)!” পরে সাংবাদিকদের মন্ত্রী ডঃ মানস রঞ্জন ভুঁইয়া বলেন, “আয়োজকরা হয়তো ভুলে গিয়েছিলেন! যা হয়েছে আপনারাও ভুলে যান।” আর যাঁর জন্য এই ঘটনার সূত্রপাত, মেদিনীপুর শহরের অন্যতম প্রবীন সেই সাংবাদিক দেবনাথ মাইতি বলেন, “আসলে মেদিনীপুরের মাটিতে অনুষ্ঠান হচ্ছে, আর স্বাধীনতার জন্য মাত্র কুড়ি বছর বয়সে প্রাণ দেওয়া মেদিনীপুরের কিশোর বিপ্লবীরই ছবি নেই দেখে আবেগ সামলাতে পারিনি! মানস দা-কে ডেকে বিষয়টি বললাম। তবে, উনি যে এতখানি রেগে যাবেন, সেটা ভাবতে পারিনি! আর সত্যিই তো সঞ্চালকদের কোনো দোষই নেই। ওদের শুধুমাত্র সঞ্চালনা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বরং আয়োজকরা আরেকটু সচেতন হতে পারতেন!” মেদিনীপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান সৌমেন খানও বলেন, “এই ঘটনায় সত্যিই দুই তরুণ সঞ্চালকের কোন দোষ ছিল না। শুধু শুধু ওদের বকুনি খেতে হল! ওদের ডেকে বলেছি, এসব ভুলে যেতে।” প্রশাসনের এক আধিকারিকও অবশ্য তাই জানিয়েছেন।

thebengalpost.net
প্রথমে :

thebengalpost.net
পরে: