মণিরাজ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৭ জুন: “মোদের পায়ের তলায় মূর্ছে তুফান…!” পদে পদে বিপদ। মৃত্যুর চোখরাঙানি। এসব উপেক্ষা করেই অসম্ভবকে সম্ভব করলেন জেলা শহর মেদিনীপুরের দুই যুবক। শহরের পালবাড়ির বাসিন্দা, তন্ময় বেরা এবং তাঁর বন্ধু শালবনীর যুগডিহার সৌমেন বেরা- বছর ২২ এর এই দুই যুবক গত ৪ এপ্রিল নিজেদের ১১০ সিসির Honda Livo বাইকে চেপে প্রায় ১৮ হাজার ফুট (১৭,৮০০) তথা ৫৪৩০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত সিকিমের গুরুদংমার লেকে পৌঁছে যান। সিকিম (Sikkim)- এর এই গুরুদংমার লেক (Gurudongmar Lake) হল, বিশ্বের অন্যতম উচ্চ (One of the Highest Lake in World) একটি লেক। সেই লেকে বাইকে করে অভিযান করেন অনেকেই। তবে, পেছনে একজন সঙ্গীকে (Pillion/ পিলিয়ন) বসিয়ে ১১০ সিসি’র বাইকে গুরুদংমার অভিযান এই প্রথম। তাই, মাত্র দু’তিন আগেই তন্ময়ের মেদিনীপুরের বাড়িতে এসে পৌঁছেছে ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ড (India Book of Records)- এর স্বীকৃতি।

উল্লেখ্য যে, বাইকে করে বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ বা বাইক অ্যাডভেঞ্চার (Adventure) দুই বন্ধুর-ই নেশা। তন্ময় জানিয়েছেন, নিজের এই ১১০ সিসি’র বাইক নিয়ে এর আগে পুরুলিয়ার অযোধ্যা থেকে ওড়িশার পুরী- বিভিন্ন জায়গায় চষে বেড়িয়েছেন তাঁরা দুই বন্ধু। তবে, এতবড় আর ঝুঁকিপূর্ণ অভিযান এই প্রথম! মঙ্গলবার নিজের বাড়িতে বসে মেদিনীপুর শহরের যুবক তন্ময় স্বীকার করলেন, “বাড়ি থেকে বাধা এসেছিল। বাধা এসেছিল সব জায়গা থেকে। তবে, আমরা অটল-অনড় ছিলাম। তাই, সমস্ত বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে গত ১ এপ্রিল বেরিয়ে পড়ি গুরুদংমার এর উদ্দেশ্যে। প্রথমে শিলিগুড়ি, শিলিগুড়ি থেকে গ্যাংটক, সেখান থেকে লাচেন, লাচেন থেকে গুরুদংমার। মোট ৮৪১ কিলোমিটার দূরত্ব। আমরা পৌঁছই ৪ এপ্রিল।” তন্ময় যোগ করেন, “পদে পদে মৃত্যুর হাতছানি ছিল! চোখের সামনে পাহাড়ের বড় চাঙড় খসে পড়তে দেখেছি। অনেক জায়গাতেই বাইক নিয়ে উঠতে পারিনি। দু’জনে মিলে বাইক টেনে তুলেছি। তবে, দু’জন ছিলাম বলেই হয়তো অসম্ভবকে সম্ভব করতে পেরেছি! সব তথ্য খুঁটিয়ে দেখে তাই, ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডস আমাদের স্বীকৃতি দিয়েছে।” তন্ময়ের পরামর্শ একটাই, “আমরা উপলব্ধি করেছি দুটো জিনিস, পাহাড়ি মানুষ খুব মহৎ হৃদয়ের হয়ে থাকেন। তাঁদের সাহায্য পেয়েছিলাম বলেই থাকা-খাওয়ার সমস্যা হয়নি! দ্বিতীয়ত, সামান্য অন্ধকার ঘনিয়ে এলেই যাত্রা বন্ধ করে দেওয়া উচিত। আবার সকালে যাত্রা শুরু করতে হবে। আমরা বুঝেছি, অন্ধকারে পাহাড়ি রাস্তায় প্রতিমুহূর্তে বিপদ।” আর, সব বিপদ জয় করেই আপাততো সাফল্যের জোয়ারে ভেসে যাচ্ছেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার এই দুই যুবক।