দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৩ অক্টোবর: সোমবার ভোরে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সিসিইউ-তে মৃত্যু হয় ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা শিখা দে দাস (৩২)-এর। ময়নাতদন্ত শেষে সোমবার সন্ধ্যায় জানা গেল, শিখার গর্ভে ছিলো এক ফুটফুটে কন্যাসন্তান। পরিবারের অভিযোগ চিকিৎসায় গাফিলতির জন্যই অকালে হারিয়ে গেল মা ও তাঁর সন্তান! ‘সব হারিয়ে’ কাঁদতে কাঁদতে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল ছাড়েন শিখার স্বামী তথা বেলদার নাহাপার গ্রামের বাসিন্দা পবিত্র দাস। বাড়িতে শিখা ও পবিত্রর ১২ বছরের নাবালক ছেলে আছে। মায়ের সাথে সাথে ‘বোন’-কেও হারালো সে!

অন্যদিকে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের স্যালাইন কাণ্ডের পর ফের একবার মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে প্রসূতি মৃত্যু কাণ্ডে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত-কমিটি গড়ল রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর। সোমবার বিকেল ৫টা নাগাদ সেই তদন্ত-কমিটির তিন সদস্য এসে পৌঁছন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে। এই দলে ছিলেন ডঃ ভবানী দাস (ADHS), প্রফেসর রামপ্রসাদ দে (কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের প্রসূতি বিভাগের চিকিৎসক) ও গীতা ভৌমিক (DADHS)। তাঁদের সঙ্গেই ছিলেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকারিক তথা এই তদন্ত কমিটির অপর সদস্য ডঃ সৌম্যশঙ্কর ষড়ঙ্গীও। এছাড়াও, এদিনের এই তদন্ত বা জিজ্ঞাসাবাদ পর্বে উপস্থিত ছিলেন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডঃ মৌসুমী নন্দী, সুপার ডঃ ইন্দ্রনীল সেন সহ হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগের সিনিয়র চিকিৎসক ও আধিকারিকরা। সূত্রের খবর, এদিন তদন্তের মুখোমুখি হতে হয় রবিবার সন্ধ্যা থেকে সোমবার ভোর অবধি মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের মাতৃমা বিভাগ ও মেডিসিন বিভাগে কর্তব্যরত প্রায় ৩০ জন চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীকে। প্রায় ৩ ঘন্টা ধরে চিকিৎসক, জুনিয়র চিকিৎসক থেকে শুরু করে নার্সদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এদিন। সেইসঙ্গেই খতিয়ে দেখা হয় প্রয়োজনীয় সমস্ত নথিপত্র, সিসিটিভি ফুটেজ ও রোস্টারও। তার আগে মৃত প্রসূতি শিখা দে দাস (৩২)-এর স্বামী তথা বেলদার নাহাপার গ্রামের বাসিন্দা পবিত্র দাস সহ পরিজনদের সাথেও কথা বলেন তদন্তকারীরা। তাঁদের লিখিত অভিযোগও খতিয়ে দেখা হয়। তদন্তে সর্বাধিক গুরুত্ব পায়, শ্বাসকষ্ট-যুক্ত একজন ৯ মাসের প্রসূতিকে রবিবার সন্ধ্যায় ভর্তি না নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হলো কেন?
হাসপাতালেরই একটি সূত্রে জানা যায়, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ শ্বাসকষ্ট-যুক্ত ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা শিখাকে যখন হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়, তখন তাঁর বিপি (ব্লাড প্রেসার) ছিল ১৮০/১০০। স্বাভাবিকভাবেই মাতৃমা বিভাগের তরফে ওই প্রসূতিকে ভর্তি নেওয়ার কথা। তা না নিয়ে তাঁরা মেডিসিন বিভাগে রেফার করেন। মেডিসিন বিভাগ বেশকিছু সময় অক্সিজেন চালিয়ে এবং প্রাথমিক কিছু ওষুধপত্র দিয়ে ছেড়ে দেয় বলে শিখার স্বামী পবিত্র লিখিতভাবে অভিযোগ করেছেন। তারপরই ভোর ৩টা নাগাদ পুনরায় শিখার শ্বাসকষ্ট শুরু হলে তাঁকে ফের মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের ইমারজেন্সিতে আনা হয়। সেখান থেকে পাঠানো হয় মাতৃমা বিভাগে। মাতৃমা বিভাগ রেফার করে সিসিইউ-তে। ভোরে সেখানেই মৃত্যু হয় শিখার! রাত্রি ৮টা নাগাদ তদন্ত শেষ করে বেরোনোর সময় তদন্তকারী দলের তরফে ডঃ ভবানী দাস ও রামপ্রসাদ দে বলেন, “তদন্ত শুরু করা হয়েছে। মৃত প্রসূতির ময়নাতদন্তও সম্পন্ন হয়েছে। সমস্ত রিপোর্ট সংগ্রহ করা হচ্ছে।” গাফিলতির প্রশ্নে তাঁরা বলেন, “এখনই সবটা বলা সম্ভব নয়।” মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ মৌসুমী নন্দী বলেন, “তদন্ত শুরু হয়েছে। ওঁরা যা কিছু চেয়েছেন আমরা সবটাই দিয়েছি।” জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকারিক বলেন, “রবিবার রাতে কর্তব্যরত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের এদিন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তদন্তে সবটাই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”