দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৮ সেপ্টেম্বর:’শেষ হাসি’ হাসবে কে? দৌড়ে আছেন অনেকেই! পদের নাম- বিদ্যাসাগর সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাংকের ‘চেয়ারম্যান’। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সর্ববৃহৎ ও সর্বাধিক আদান-প্রদান পরিষেবা যুক্ত সমবায় ব্যাঙ্ক। জেলার কৃষিজীবী, শ্রমজীবী মানুষ থেকে শুরু করে শিক্ষক ও সরকারি কর্মচারীদের কাছে এই ব্যাঙ্কের গুরুত্ব অপরিসীম। স্বাভাবিকভাবেই, জেলার সেই কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কটির চেয়ারম্যান পদটিরও গুরুত্ব অপরিসীম। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইচ্ছেতেই দীর্ঘদিন এই ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান পদে আসীন ছিলেন- তৎকালীন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর দলবদলের পর থেকেই জল্পনা শুরু হয়েছিল, তাঁকে দলের ‘মনোনীত’ এই সমস্ত পদ থেকে অপসারিত করার বিষয়ে! ইতিপূর্বে, পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান পদ থেকেও অপসারিত করা হয়েছে তাঁকে। এবার, অব্যাহতি দেওয়া হল- বিদ্যাসাগর সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদ থেকেও। ১৫ জন ডাইরেক্টরের মধ্যে, স্বয়ং শুভেন্দু অধিকারী ছাড়া বাকি ১৪ জনের মিলিত অনাস্থা প্রস্তাবে শুভেন্দু-কে সরানো হয়েছে গত ১৬ সেপ্টেম্বর। পরবর্তী আকর্ষণ- ব্যাংকের নতুন ‘চেয়ারম্যান’ কে হবেন, সেটাই! আপাতত দায়িত্ব সামলাচ্ছেন ভাইস চেয়ারম্যান- সন্দীপ ঘোষ। তবে, এত সহজে সন্দীপ বাবুকেই পরবর্তী স্থায়ী চেয়ারম্যান হিসেবে জায়গা ছাড়তে নারাজ শাসক দলেরই একপক্ষ (হতে পারে- দু’-তিন পক্ষও)! জেলা নেতাদের একাংশ মেনে নিচ্ছেন- “বেশ ভালোই ইঁদুর দৌড় শুরু হয়েছে!”

thebengalpost.net
১৬ সেপ্টেম্বরের সাংবাদিক বৈঠকে ব্যাঙ্কের সদস্যরা :

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ১৬ সেপ্টেম্বর অনাস্থা ভোটের দিনই হঠাৎ করে ব্যাংকে পৌঁছে গিয়েছিলেন পিংলার বিধায়ক তথা জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি অজিত মাইতি। বোর্ড মেম্বারদের শুভেচ্ছা জানাতে গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছিলেন তিনি। সূত্রের খবর, ‘চেয়ারম্যান’ হওয়ার ইচ্ছে আছে তাঁর। তবে, স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছেন তিনি! অন্যদিকে, দলের অনেক বর্ষীয়ান নেতা ও বিধায়কেরও নাকি ইচ্ছে আছে চেয়ারম্যান হওয়ার। দলেরই বিভিন্ন সূত্র জানাচ্ছে, সেই দৌড়ে আছেন- খড়্গপুর গ্রামীণের বিধায়ক তথা দলের জেলা চেয়ারম্যান দীনেন রায়, রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর দুই সদস্য তথা প্রাক্তন বিধায়ক প্রদ্যোৎ ঘোষ ও আশি চক্রবর্তী প্রমুখ। এছাড়াও, আরও কয়েকজন তাবড় জেলা নেতাও নাকি এই পদ পাওয়ার জন্য মুখিয়ে আছেন! যদিও, শাসকদলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা জানিয়েছেন, “এই বিষয়ে দলের তথা দলনেত্রী ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। জেলার আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপটে এই ব্যাঙ্কের গুরুত্ব অপরিসীম! যেই চেয়ারম্যান হোন না কেন, গত কয়েক মাসে যে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছিল, তা কাটিয়ে উঠে এই ব্যাঙ্ক-কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই মূল লক্ষ্য।” উল্লেখ্য যে, ১৬ সেপ্টেম্বর অনাস্থা প্রস্তাবে শুভেন্দু অধিকারী-কে সরিয়ে দেওয়ার পরই, ওই দিন সন্ধ্যায় শাসকদলের মেদিনীপুর জেলা কার্যালয়ে জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা ও জেলা চেয়ারম্যান দীনেন রায়ের উপস্থিতিতে ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান সন্দীপ ঘোষ, সেক্রেটারি প্রদীপ পাত্র সহ ১৪ জন বোর্ড সদস্যের বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে, তাঁরা বলেন, “প্রাক্তন চেয়ারম্যান শুভেন্দু অধিকারী’কে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তা তিনি গত কয়েক মাসে পালন করতে পারেননি! তাই, ব্যাংক এর স্বার্থে, জেলাবাসীর স্বার্থে এই পরিবর্তন প্রয়োজন ছিল। ব্যাঙ্ক-কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই আমাদের লক্ষ্য।” বিশ্বস্ত সূত্রে খবর, এই এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে, ব্যাঙ্কের কাজে অভিজ্ঞ ভাইস চেয়ারম্যান সন্দীপ ঘোষ-কেই স্থায়ী চেয়ারম্যান হিসেবে চাইছেন দলের একটা বড় অংশ!