Midnapore News

Medinipur: ছেলের সাথে সম্পর্ক রাখেননি, ঈশ্বরের শেষ দিনগুলো কেটেছে কার্মাটাঁড়ে! বিদ্যাসাগর স্মৃতি রক্ষা সমিতির হাতে লক্ষাধিক টাকা তুলে দিল মেদিনীপুর সমন্বয় সংস্থা

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, মেদিনীপুর ও কার্মাটাঁড়, ২৩ ডিসেম্বর: একমাত্র পুত্র (ছেলে) নারায়ণচন্দ্রের আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে বিদ্যাসাগর তাঁকে ‘ত্যাজ্য’ ঘোষণা করেছিলেন। ছেলের সঙ্গে থাকা তো দূরের কথা, বন্ধ করে দিয়েছিলেন বাক্যালাপও। শান্তির খোঁজে জীবনের শেষ ১৭ বছর ঝাড়খণ্ডের (তৎকালীন বিহারের) কার্মাটাঁড়ে কাটিয়েছিলেন বাঙালির ঈশ্বর! সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) কার্মাটাঁড়ে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের স্মৃতিধন্য ‘বিদ্যাসাগর স্মৃতি রক্ষা সমিতি’র উন্নয়নমূলক কাজের জন্যে মেদিনীপুর সমন্বয় সংস্থার পক্ষ থেকে ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা অনুদান স্বরূপ তুলে দেওয়া হয়। প্রসঙ্গত, ছেলে নারায়ণচন্দ্রের সঙ্গে বিদ্যাসাগরের মোটেই সুসম্পর্ক ছিল না! একমাত্র পুত্রের আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে ১৮৭২ সালে তাঁকে ত্যাজ্য ঘোষণা করেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। কিছু দিন পরেই মারা যান স্ত্রী দীনময়ী দেবী। সবমিলিয়ে ‘ঈশ্বর’-র শেষ জীবন মোটেই সুখে কাটেনি! নিঃসঙ্গ বিদ্যাসাগর একটু নির্জনতার খোঁজে বড়ই আকুল হয়ে উঠেছিলেন। তখন তিনি অনেক দূরে শান্তির খোঁজে বিহারের (বর্তমানে, ঝাড়খণ্ডের) কার্মাটাঁড় স্টেশনের কাছে পাঁচশো টাকায় স্থানীয় এক ইংরেজ মহিলার কাছ থেকে আমবাগান সমেত প্রায় ১৪ বিঘা জায়গা কেনেন। স্বামীর মৃত্যুর পর ওই মহিলা বিদ্যাসাগরকে জমি বিক্রি করে চলে যান। সেখানেই একটি ছোট বাড়ি তৈরি করেন বিদ্যাসাগর। নাম দেন ‘নন্দনকানন’। সেখানকার গরীব, আদিবাসীদের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেন বিদ্যাসাগর।

বিদ্যাসাগরের আবক্ষ মূর্তির সামনে:

বিজ্ঞাপন (Advertisement):

এলাকার আদিবাসীদের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করে তাঁদের কাছে জীবনদাতা ঈশ্বর হয়ে উঠেছিলেন তিনি। সেখানে মেথরপল্লিতে উপস্থিত থেকে তিনি নিজের হাতে কলেরা রোগীদের শুশ্রূষা করেছেন। বিদ্যাসাগর দেখেছিলেন তাঁদের সহজ, সরল জীবনযাত্রা। সহজ-সরল আদিবাসীদের বন্ধু হয়ে উঠেছিলেন তিনি। কার্মাটাঁড়ে বসেই তিনি ‘সীতার বনবাস’, ‘বর্ণপরিচয়’-এর তৃতীয় সংস্করণের প্রুফ দেখেছেন। কার্মাটাঁড়ের সঙ্গে বিদ্যাসাগরের সম্পর্ক ছিল প্রায় ১৭ বছরের। শরীর-স্বাস্থ্যের ভগ্নদশার কারণে ১৮৯০-এর গোড়া থেকে আর কার্মাটাঁড়ে বাস করেননি বিদ্যাসাগর। ফিরে এসেছিলেন কলকাতায়। যদিও, ছেলের সঙ্গে বাক্যালাপ প্রায় বন্ধ ছিল। ১৮৯১ সালে ঈশ্বর-হীন হয় বাঙালি! এদিকে, পিতার মৃত্যুর পরই নারায়ণচন্দ্র কার্মাটাঁড়ের বাড়ি ও সম্পত্তি বিক্রি করে দেন কলকাতার এক মল্লিক পরিবারের কাছে। তাঁরা বাড়িটি এমনিই ফেলে রাখেন। ১৯৩৮ সালে বিহারের প্রবাসী ও প্রতিষ্ঠিত বাঙালিরা তৈরি করেন ‘বিহার বাঙালি সমিতি’। বিহারের বাঙালি সমিতি বিদ্যাসাগরের স্মৃতিরক্ষার জন্য উদ্যোগী হয়ে মল্লিক পরিবারের কাছ থেকে ওই জায়গা কিনে নেন চব্বিশ হাজার টাকায়। সেখানে বিদ্যাসাগরের মা ভগবতী দেবী নামাঙ্কিত একটি মেয়েদের স্কুলও চালু করেন তাঁরা। ২০০১ সালে বিহার ভেঙে ঝাড়খণ্ড হয়। আলাদা করে তৈরি হয় ‘ঝাড়খণ্ড বাঙালি সমিতি’। ঝাড়খণ্ড সরকারের সামাজিক নিবন্ধীকৃত আইনে ২০১৬-র অক্টোবর মাসে দুই বাঙালি সমিতির সমন্বয়ে তৈরি হয়েছে ১১ সদস্যের ‘বিদ্যাসাগর স্মৃতি রক্ষা সমিতি’।

বিদ্যাসাগরের স্মৃতিধন্য নন্দনকানন:

কার্মাটাঁড়ে ‘বিদ্যাসাগর স্মৃতি রক্ষা সমিতি’র উন্নয়নমূলক কাজের জন্যে সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) মেদিনীপুর সমন্বয় সংস্থার পক্ষ থেকে, বিদ্যাসাগরের আবক্ষ মূর্তির সামনে সংস্থার যুগ্ম রাজকুমার মাইতি, অমিত কুমার সাহু এবং অধ্যাপক শ্যামাপদ জানা স্মৃতি রক্ষা সমিতির কোষাধক্ষ্য সচিদানন্দ সিনহা (Sachidananda Sinha)-র হাতে ১ লক্ষ ১০ হাজার ১০১ (১,১০,১০১) টাকার চেক তুলে দেন। সোমবার কার্মাটাঁড়েই এক সাংবাদিক সম্মেলনে অমিত বাবু বলেন, “আপনারা অনেকেই জানেন, ‘দয়ারসাগর’ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর জীবনের শেষ ১৭-১৮ বছর কাটিয়েছেন কার্মাটাঁড়ের এই নন্দনকাননে। লোকচক্ষুর আড়ালে থেকে, সমাজের পিছিয়ে পড়া এই আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকাটিকে বেছে নিয়েছিলেন নিজের কর্মভূমি রূপে। তাঁর সারাজীবনের কষ্টার্জিত উপার্জন থেকে ৩ একর ১৯ ডেসমিল জায়গা কিনে এখানকার জনজাতি অধ্যুষিত মানুষের মৌলিক চাহিদা খাদ্য, বস্ত্র ও মাথাগোঁজার ঠাঁইয়ের পাশাপাশি শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের প্রসারের জন্যে অবৈতনিক বিদ্যালয়, হোমিওপ্যাথি চিকিৎসালয় ও স্বনির্ভরতার জন্য বহুবিধ প্রকল্প গড়ে তুলেছিলেন। বর্তমানে, নন্দনকানন স্মৃতি রক্ষা কমিটির ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় কার্মাটাঁড় স্টেশনের নাম পরিবর্তন হয়ে ‘বিদ্যাসাগর স্টেশন’ নামকরণ হয়েছে। এছাড়াও, বেশ কিছু উন্নয়ন ঘটলেও, বিদ্যাসাগর প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টির অস্তিত্ব নেই। বর্ণপরিচয়ের স্রষ্টার এই পবিত্র স্থানে যাতে বাংলা, হিন্দি ও ইংরেজি ত্রিভাষা মিশ্রিত পেশা ভিত্তিক কোনো বিদ্যালয় গড়ে তোলা যায় তার উদ্যোগ নেওয়ার জন্যে উভয় সরকারের কাছে আমরা আবেদন জানাচ্ছি।” প্রয়োজনে ডেপুটেশনে বাংলা থেকে ইচ্ছুক শিক্ষকদের নিয়োগ করে, স্কুলটি চালু করার জন্য তথা বিষয়টি প্রশাসনের দৃষ্টি গোচর করার জন্য বঙ্গবাসী ও মেদিনীপুরবাসীকে সামিল হওয়ার অনুরোধও জানান মেদিনীপুর সমন্বয় সংস্থার সদস্যরা। স্মৃতি রক্ষা সমিতি’র পক্ষ থেকে আবেগঘন কন্ঠে কোষাধ্যক্ষ সচিদানন্দ সিনহা (Sachidananda Sinha) জানান, “২০১৯ সালে বিদ্যাসাগরের জন্মদিনে (১২ আশ্বিন) এখানে এসে যখন অমিতবাবু আমার হাত ধরে তাঁর লেখা ‘কুইজে বিদ্যাসাগর’ বইটি আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকাশ করেন, তখন থেকেই ওনাদের কাছে সহায়তার বার্তা দিয়েছিলাম। পরবর্তী পর্যায়ে সমন্বয় সংস্থার কেন্দ্রীয় কমিটির একটি ৪২ জনের টিমও ভ্ৰমণ করেন। আজ কৃতজ্ঞাতার বন্ধনে উভয় সংস্থা যুক্ত হলাম।”

বিদ্যাসাগর নামাঙ্কিত স্টেশন:

কার্মাটাঁড়ের বিদ্যাসাগর স্টেশনে:

বিজ্ঞাপন (Advertisement):

News Desk

Recent Posts

Vidyasagar University: আবহাওয়ার নিখুঁত খবর জানতে ISRO-র সহযোগিতায় আকাশে যন্ত্র লাগানো বেলুন পাঠাল বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৩ জুন: রবিবার (২২ জুন) দুপুর ঠিক ২টো ১…

19 hours ago

Midnapore: “১৯৭৮-এর পর এমন ভয়াবহ বন্যা দেখেনি গড়বেতা!” আসরে NDRF-SDRF; প্লাবন পরিস্থিতি চন্দ্রকোনাতেও

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২০ জুন: ১৯৭৮ সালের পর এমন ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির…

4 days ago

Midnapore: মিয়াজাকি, ব্ল্যাকস্টোন থেকে আম্রপালি, হিমসাগর; মেদিনীপুরে জমজমাট ‘আম উৎসব’

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৮ জুন: ৩০ টাকা প্রতি কেজি থেকে ৩ লক্ষ…

6 days ago

Kharagpur: খড়্গপুরের কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ! মৃত্যু এক শ্রমিকের

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, খড়্গপুর, ১৭ জুন: গ্লিসারিন কারখানায় ওয়েল্ডিং- এর কাজ চলাকালীন ভয়াবহ বিস্ফোরণ!…

1 week ago

Midnapore: প্রায় দু’দশক পরে পশ্চিম মেদিনীপুরে শুরু হয়েছিল প্রাথমিকে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া; থমকে গেল আদালতের নির্দেশে

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৬ জুন: ২০০৮ এর পর ২০২৫। দীর্ঘ প্রায় দুই…

1 week ago

Elephant: হাতির পালকে তাক করে ছোঁড়া হচ্ছে একের পর এক জ্বলন্ত হুলা; নেটমাধ্যমে ছবি ছড়িয়ে পড়তেই নিন্দার ঢল

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, খড়্গপুর, ১৩ জুন: হাতির পালকে তাক করে ছোঁড়া হচ্ছে একের পর…

2 weeks ago