thebengalpost.net
সাথীকে দেওয়া হল সংবর্ধনা:

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১ মে: মাস খানেক আগে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শালবনী ব্লকের মৌপাল দেশপ্রাণ বিদ্যাপীঠের দশম শ্রেণীর ছাত্রী তথা এক ‘দিন আনা দিন খাওয়া’ আদিবাসী পরিবারের কন্যা বাসন্তী টুডু নিজের বিয়ের রুখে দিয়ে জেলা প্রশাসনের প্রশংসা কুড়িয়েছিল। স্বয়ং, অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন ও সমাজকল্যাণ) কেম্পা হোন্নাইয়া নিজে স্কুলে গিয়ে বাসন্তীকে সংবর্ধনা দিয়েছিলেন। তার সঙ্গে আগামী তিন বছর পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য মাসিক ৪ হাজার টাকা বৃত্তি বা স্কলারশিপের ঘোষণাও করেছিলেন। এরপরই, এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে সেই শালবনী ব্লকেরই কর্ণগড় সংলগ্ন প্রত্যন্ত বালিজুড়ি গ্রামের দরিদ্র-খেটেখাওয়া পরিবারের আরেক কন্যা সাথী সিং-ও নিজের অসীম সাহসিকতায় রুখে দিয়েছে নিজের বিয়ে। ভাদুতলা বিবেকানন্দ উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রী সাথীর বিয়ে ঠিক করেছিল তার পরিবার। সাথী প্রতিবাদ করে জানিয়েছিল, “আমি আরো পড়তে চাই। বিয়ে করবনা।” কথা শোনেননি পরিবারের সদস্যরা। এরপর, একদিন স্কুলে গিয়ে শিক্ষিকাদের কাছে কান্নাকাটি করে সাথী। তার পরের ঘটনা রীতিমতো সিনেমার মতো!

thebengalpost.net
মৌপাল স্কুলে অতিরিক্ত জেলাশাসক:

ভাদুতলা বিবেকানন্দ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ড. অমিতেশ চৌধুরী সোমবার জানান, “আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষিকারা সাথীর বিষয়টি আমাকে জানানোর পরই, আমি তৎক্ষণাৎ গৌরী ম্যাডাম, রুমা ম্যাডাম, মধুরিমা ম্যাডাম-দের নেতৃত্বে কন্যাশ্রী ক্লাব ‘বহ্ণিশিখা’র সদস্যা গার্গী, সীমা, সন্তোষী, প্রিয়াঙ্কা, মৌসুমী সিং ও মৌসুমী গাঁতাইত-দের নিয়ে বালিজুড়ি গ্রামের সেই বাড়িতে উপস্থিত হই। চলে বোঝানোর পালা। সাথী পড়াশোনা করে নিজের পায়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সংকল্প নিয়ে, এত কম বয়সে বিয়ে করাকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে। এটা ওর বাবা-মা এবং দিদিকে বোঝাতে থাকি। কিন্তু, তেমন একটা কাজ হয়না! ফিরে এসেই সরাসরি 1098- এ ফোন করে সমস্ত বিষয় জানাই।” এরপরই, BDO প্রণয় দাস দাস, জয়েন্ট BDO দেবব্রত কোনার, শালবনী থানার আইসি গোপাল বিশ্বাসের সহায়তায় ছাত্রীর বাবা-মাকে একপ্রকার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। এই অপরাধ করলে, তাঁদের যে জেলে যেতে হবে, তাও বলা হয়। অবশেষে বিয়ে রোখা সম্ভব হয়। গত শুক্রবার বিদ্যালয়ের তরফে সাথীকে দেওয়া হয়েছে সংবর্ধনা। অন্যান্য অভিভাবকদেরও বিশেষ বৈঠকে ডেকে শপথ বাক্য পাঠ করানো হয়েছে। ‘কোনোভাবেই তাঁরা ১৮ বছরের আগে কিংবা মেয়ের অমতে তাদের বিয়ে দেবেন না’- এই অঙ্গীকার করেছেন অভিভাবকরা।

thebengalpost.net
সাথীকে দেওয়া হল সংবর্ধনা:

অন্যদিকে, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা ২ নম্বর ব্লকের মহেশপুর গ্রামের বাসিন্দা বিলকিস খাতুন-ও গত শনিবার (২৯ এপ্রিল) নিজের বিয়ের রুখে দিয়ে জেলা জুড়ে প্রশংসিত হয়েছে। একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী বিলকিসের অভিযোগ ছিল, তার বাবা (মইদুল ইসলাম খান) ও মা তার জন্য পাত্র ঠিক করে ফেলে। পাত্রপক্ষ তাকে দেখে যায় এবং বিয়ের দিন চূড়ান্ত করে ফেলে। কিন্তু, মেধাবী ছাত্রী বিলকিস পড়াশোনায় অনড় থাকে। রুখে দাঁড়ায় বাবা-মা’র সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, তার ওপর চাপ সৃষ্টি করতে থাকে পরিবার। বিলকিসের কথায়, “বাবা-মা বলে হয় বিয়ে কর, না হলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যা।” অগত্যা কোন উপায় না দেখে শনিবার চন্দ্রকোনা ২ নম্বর ব্লকের বিডিও অমিত ঘোষের কাছে এসে উপস্থিত হয় ওই নাবালিকা। সমস্ত বিষয়টি বলে বিডিও-কে। এমনকি বিয়ে বন্ধের জন্য বিডিও’র কাছে লিখিত আবেদন জানায়। দ্রুত চন্দ্রকোনা ২ নম্বর ব্লকের বিডিও অমিত ঘোষ ও চন্দ্রকোনা থানার পুলিশের সহযোগিতায়, রাতেই তার বাবা মাকে নিয়ে আসা হয় চন্দ্রকোনা থানায়। বোঝানো হয় তাদের। লেখানো হয় মুচলেকা। বিয়ে বন্ধ হয়েছে বিলকিসের। বিডিও অমিত ঘোষ বলেন, “বিলকিসের মতো মেয়েরাই জেলার লক্ষ লক্ষ কন্যাশ্রী-দের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে যে, কোনভাবেই ১৮ বছরের বয়সের আগে বিয়ে নয়। আগে পড়াশোনা, প্রতিষ্ঠা লাভ করা, তারপর বিয়ে।”

thebengalpost.net
বিডিও’র কাছে বিলকিস: