National

Amarnath: “আমরা ভালো আছি!” পবিত্র অমরনাথ গুহার খুব কাছেই পঞ্চতরণীতে পশ্চিম মেদিনীপুরের ‘মৃত্যুঞ্জয়ী’ ১০ তীর্থযাত্রী

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১০ জুলাই:”অমরনাথ দর্শনে বেরিয়েছিলাম। ভাবিনি প্রকৃতির কাছে এভাবে অসহায় আত্মসমর্পণ করতে হবে। চাইলেও প্রকৃতির কাছে মানুষ বড় অসহায়!” পবিত্র অমরনাথ গুহা থেকে মাত্র ৬ কিলোমিটার দূরে পঞ্চতরণী’র বায়ুসেনা ক্যাম্প থেকে শনিবার (৯ জুলাই) সন্ধ্যায় পাঠানো ভিডিও-বার্তাতে এভাবেই নিজেদের মনের কথা তুলে ধরেছেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কেশিয়াড়ির বাসিন্দা বছর ৫৫’র বিষ্ণুপদ সাহু। তিনি এও যোগ করেন, “অমরনাথ গুহা থেকে মাত্র ৬ কিলোমিটার দূরে আছি। বাবার দর্শন পাব কিনা জানিনা! সব-ই শঙ্করের ইচ্ছা। তবে, ভোলে বাবার আশীর্বাদে আমরা নিরাপদে আছি। ভালো আছি এবং সম্পূর্ণ সুস্থ আছি।” বিষ্ণুপদ ছাড়াও এই সেনা ক্যাম্পে জেলার আরও ৯ জন আটকে আছেন। তাঁরা প্রত্যেকেই ‘নিরাপদে’ আছেন বলে জানিয়েছেন। এই ১০ তীর্থযাত্রীর মধ্যে বিষ্ণুপদ সাহু সহ মোট ৯ জন-ই কেশিয়াড়ি ব্লকের বাসিন্দা। একমাত্র সন্দীপ পাল নামে বছর ৪০-এর যুবক দাঁতনের বাসিন্দা। এই সন্দীপের মোবাইল থেকেই শনিবার দুপুরের পর থেকে একের পর এক ভিডিও বার্তা এসে পৌঁছয় তাঁদের পরিবার সহ জেলা প্রশাসন ও সাংবাদিকদের কাছে। নিশ্চিন্ত হন সকলে! সন্দীপ ও বিষ্ণুপদ ছাড়া অমরনাথ যাত্রী পশ্চিম মেদিনীপুরের বাকি ৮ জন হলেন, যথাক্রমে – দুলাল দাস, জগদীশ জানা, তরুণ হাতি, সুভাষ দত্ত, সিদ্ধার্থ সাহু, গদাধর সিং সর্দার, সৃজন ঘোষ ও সমরেশ ঘোষ।

পঞ্চতরণী থেকে সন্দীপ পাল সহ অন্যান্যরা :

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, দাঁতনের যুবক সন্দীপের বর্ণনায়, “গত ২ জুলাই পুরুষোত্তম এক্সপ্রেস ধরে আমরা দিল্লি পৌঁছই। দিল্লি থেকে স্বরাজ এক্সপ্রেস ধরে জম্মু হয়ে চন্দনওয়াড়ি। সেখান থেকে বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) সকালে হাঁটতে শুরু করি। প্রায় ১০ ঘন্টা হেঁটে পৌঁছই শেষনাগে। শেষনাগের সেনা ক্যাম্পে রাত্রি কাটিয়ে শুক্রবার সকাল থেকে ফের হাঁটা শুরু করি। শুক্রবার রাত্রি ৮ টা নাগাদ পৌঁছই পঞ্চতরণী সেনা ক্যাম্পে। পৌঁছে শুনি এই ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা!” শুক্রবার বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ অমরনাথের নিম্ন গুহার কাছে (পঞ্চতরণী থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে) মেঘ ভাঙ্গা বৃষ্টি হয়। আর, তার ফলেই হড়পা বানে ভেসে যায় ২৪-টি তাঁবু ও ৩-টি লঙ্গর। মৃত্যু হয় ১৫ জনের।‌ এখনও (শনিবার সন্ধ্যা অবধি) নিখোঁজ ৪০ জন। উল্লেখ্য যে, অমরনাথ যাত্রার একটি মূল শিবির বা বেস ক্যাম্প ছিল এই নিম্ন গুহা বালতালে। সেখানেই বিপদ ঘনায়! ধেয়ে আসে মৃত্যু স্বরূপ মেঘভাঙা বৃষ্টি আর হড়পা বান। প্রবল দুর্যোগে প্রাণ যায় ১৫ জন তীর্থযাত্রীর। এদিকে, এখনও ৪০ জন‌ নিখোঁজ থাকলেও, প্রায় ১৫ হাজার তীর্থযাত্রীর প্রাণ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। বায়ুসেনার অক্লান্ত পরিশ্রম ও নজিরবিহীন তৎপরতার কথা তুলে ধরেছেন পশ্চিম মেদিনীপুরে দুলাল, বিষ্ণু, সন্দীপরাও। বার বার তাঁরা জানিয়েছেন, “প্রকৃতির কাছে মানুষ বড্ড অসহায়। তবে, ভারত সরকারের তৎপরতায় সেনাবাহিনী ও এনডিআরএফ যেভাবে উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে, তাতে কোন প্রশংসাই যথেষ্ট নয়! তাঁদের প্রতি শতকোটি শ্রদ্ধা নিবেদন করি। তাঁদের জন্যই আজ আমরাও বেঁচে আছি, সুস্থ ভাবে আছি।” একইসঙ্গে, জগদীশ, গদাধর, সৃজন, সিদ্ধার্থ প্রমুখ এও জানিয়েছেন, “এখনও পর্যন্ত বায়ু সেনার লঙ্গরখানা থেকে আমাদের পর্যাপ্ত খাবার দাবার দেওয়া হয়েছে এবং হচ্ছে। আবহাওয়ার-ও উন্নতি হয়েছে। তবে, অমরনাথ যাত্রা এখন বন্ধ রাখা হয়েছে। ফের, ভারত সরকার ও সেনাবাহিনীর অনুমতি দিলে আমরা ভোলে বাবার দর্শন করতে পারব!”

চলছে উদ্ধার কাজ :

উল্লেখ্য যে, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা থেকে ১০ জনের এই দলটি গত ২ জুলাই অমরনাথ ধামের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। শনিবার (৯ জুলাই) তাঁদের অমরনাথ গুহা’য় পৌঁছে যাওয়ার কথা ছিল। সেই মতো সব ঠিকঠাক এগোচ্ছিলোও। তবে, শুক্রবার (৮ জুলাই) সন্ধ্যা নাগাদ হঠাৎ আসা বৃষ্টি আর হড়পা বান-ই ডেকে আনে বিপর্যয়! শুক্রবার রাতে এই খবর মিডিয়ার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই, দুঃশ্চিন্তায় পড়েন তাঁদের পরিবার-পরিজন। তাঁদের সঙ্গে সেই সময় যোগাযোগ করাও একপ্রকার অসম্ভব হয়ে পড়েছিল! অবশেষে, শনিবার জানা যায়, তাঁরা নিরাপদে আছেন। এ প্রসঙ্গে এও উল্লেখ্য যে, নিজেদের পরিস্থিতির বর্ণনা দিতে দিতে, কেশিয়াড়ির বিষ্ণুপদ সাহু দাঁতনের যুবক সন্দীপের মোবাইল থেকে নিজের হাড়হিম করা পূর্ব অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। তাঁর বর্ণনায়, ১৯৯৬ সালেও এক ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয় (তুষারপাত) ঘটেছিল এই অমরনাথ ধামে। সেবারও তিনি তীর্থযাত্রী ছিলেন। কয়েক হাজার ঘোড়া ও কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল সেই ভয়াবহ তুষারপাতে! শনিবারের ভিডিও বার্তায় এমনটাই জানিয়েছেন তিনি। এবার-ও অমরনাথ দর্শনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে সেই প্রকৃতিই! পরিবার-পরিজন থেকে শুরু করে জেলা ও ব্লক প্রশাসন তাঁদের নিরাপদে থাকার খবরে তাই আশ্বস্ত হলেও, মন খারাপ বিষ্ণুপদ, জগদীশ, গদাধর, সন্দীপ-দের। ‘ভোলে বাবা’র এতো কাছে পৌঁছেও কি তবে দর্শন না করেই ফিরতে হবে? এই প্রশ্ন-ই এখন তাঁদের মনের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। তবে, এর উত্তর-ও দিচ্ছেন নিজেরাই, “সবই শঙ্করের ইচ্ছা। তিনি যা চাইবেন তাই হবে। ‘বাবা’ যদি চান, রবিবার-ই আমরা ৬ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে তাঁর দর্শন করতে পারব!”

পশ্চিম মেদিনীপুরের ৮ জন, ছবির বাইরে আছেন আরো ২ জন :

ভিডিও বার্তায় বললেন, “আমরা ভালো আছি!”

News Desk

Recent Posts

Vidyasagar University: আবহাওয়ার নিখুঁত খবর জানতে ISRO-র সহযোগিতায় আকাশে যন্ত্র লাগানো বেলুন পাঠাল বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৩ জুন: রবিবার (২২ জুন) দুপুর ঠিক ২টো ১…

15 hours ago

Midnapore: “১৯৭৮-এর পর এমন ভয়াবহ বন্যা দেখেনি গড়বেতা!” আসরে NDRF-SDRF; প্লাবন পরিস্থিতি চন্দ্রকোনাতেও

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২০ জুন: ১৯৭৮ সালের পর এমন ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির…

4 days ago

Midnapore: মিয়াজাকি, ব্ল্যাকস্টোন থেকে আম্রপালি, হিমসাগর; মেদিনীপুরে জমজমাট ‘আম উৎসব’

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৮ জুন: ৩০ টাকা প্রতি কেজি থেকে ৩ লক্ষ…

6 days ago

Kharagpur: খড়্গপুরের কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ! মৃত্যু এক শ্রমিকের

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, খড়্গপুর, ১৭ জুন: গ্লিসারিন কারখানায় ওয়েল্ডিং- এর কাজ চলাকালীন ভয়াবহ বিস্ফোরণ!…

1 week ago

Midnapore: প্রায় দু’দশক পরে পশ্চিম মেদিনীপুরে শুরু হয়েছিল প্রাথমিকে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া; থমকে গেল আদালতের নির্দেশে

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৬ জুন: ২০০৮ এর পর ২০২৫। দীর্ঘ প্রায় দুই…

1 week ago

Elephant: হাতির পালকে তাক করে ছোঁড়া হচ্ছে একের পর এক জ্বলন্ত হুলা; নেটমাধ্যমে ছবি ছড়িয়ে পড়তেই নিন্দার ঢল

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, খড়্গপুর, ১৩ জুন: হাতির পালকে তাক করে ছোঁড়া হচ্ছে একের পর…

2 weeks ago