দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৮ জুলাই: শুক্রবার রাতের অশান্তির পর সকাল থেকে ‘অপ্রত্যাশিত’ শান্তি বিরাজ করছিল কেশপুরে। যদিও, দেবের গ্রাম মহিষদা, সিরসা সহ বিভিন্ন গ্রামের বুথ দখল করার অভিযোগ ওঠে শাসকদলের বিরুদ্ধে। তবে সেসব জায়গাতে বিরোধীদের কোন বাধা না থাকায়, ‘শান্তিপূর্ণভাবেই’ বুথ দখল থেকে ছাপ্পা সবকিছুই হয়েছে! এরপর, দুপুর নাগাদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মনোনীত কেশপুরের উচাহারের গ্রাম পঞ্চায়েত প্রার্থী হোসিনুদ্দিনের এলাকায় কংগ্রেস আর তৃণমূলের মধ্যে বেধে যায় তীব্র সংঘর্ষ। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কেশপুর ব্লকের ১১ নম্বর কলাগ্রাম অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি কাজী শাহাদাতের নেতৃত্বে বহিরাগত দুষ্কৃতীরা উচাহার বুথে ছাপ্পা দিতে যায় বলে অভিযোগ কংগ্রেসের। সেই সময়, শেখ আরিফ ও শেখ তসলিম নামের দুই কংগ্রেস কর্মী তৃণমূল কর্মীদের বাধা দিতে গেলে, দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি কাজী শাহাদাত সহ দুই কংগ্রেস কর্মী আহত হয়। এরপর, আরিফ ও তসলিম নামের দুই কংগ্রেস কর্মীকে কেশপুর গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করতে গেলে পুনরায় তাঁদের ওপর চড়াও হয় একদল তৃণমূল কর্মী। হাসপাতাল চত্বরেই ব্যাপক মারামারির ঘটনা ঘটে। এর পরই, অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি কাজী শাহাদাতকে কংগ্রেস কর্মীরা ব্যাপক মারধর করেন। গুরুতর জখম হন তিনি। মাথা ফাটে কংগ্রেসের দুই কর্মীরও। শাহাদাত সহ দুই কংগ্রেস কর্মীকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। যদিও, কংগ্রেস কর্মীদের মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল।

thebengalpost.net
কেশপুরে উত্তেজনা:

প্রসঙ্গত, এই উচাহারেই গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন লড়ছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মনোনীত প্রার্থী শেখ হসিরুদ্দীন। তাঁর বিরুদ্ধে কংগ্রেসের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এক সময়ের সক্রিয় তৃণমূল কর্মী জব্বর মল্লিক। কংগ্রেসের অভিযোগ, তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি শাহাদাতের বাড়ি উচাহার থেকে অন্তত তিন কিলোমিটার দূরে মাজুরহাটি এলাকায়। বহিরাগত দুষ্কৃতীদের নিয়ে তিনি ছাপ্পা দিতে এসেছিলেন উচাহারে। তবে, কংগ্রেস কর্মীদের প্রতিরোধে পিছু হটতে হয় তাঁকে। এরপরই দু’পক্ষের মধ্যে বেধে যায় সংঘর্ষ। শুধু কেশপুর নয়, শনিবার সকাল থেকেই শাসকদল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করতে দেখা গেছে নারায়ণগড়ের সিপিআইএম কর্মী থেকে শুরু করে গড়বেতার বিজেপি কর্মীদেরও। গড়বেতার কাস্টগুড়া ১৩১ নম্বর বুথে তালা লাগিয়ে দেয় বিজেপি। অভিযোগ বুথ দখল করে, ছাপ্পা মারছিল শাসক দল। বিজেপি ও গ্রামবাসীরা একজোট হয়ে ব্যালট বাক্স ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে ভাঙচুর করে। বুথের বাইরে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। এরপর বিজেপি- তৃণমূল সংঘর্ষ বাধে। ঘটনায় আহত হয়েছেন ৫ তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী। ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় ছড়ায় উত্তেজনা। পৌঁছয় বিশাল পুলিশ বাহিনী।

thebengalpost.net
ভোটকেন্দ্রের বাইরে বের করে দেয়া হচ্ছে হোসিনুদ্দিনকে :

অন্যদিকে, বুথে এজেন্ট ঢুকতে বাধা দেওয়ার প্রতিবাদ করায় সিপিআইএম প্রার্থীর চোখে লঙ্কার গুঁড়ো ছিটিয়ে, মারধরের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ঘটনায় সিপিআইএম প্রার্থী সহ ৩ জন ক্ষীরপাই গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পাল্টা সিপিআইএমের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল। তাদের ৮ জন আহত বলে দাবি তৃণমূল নেতৃত্বের। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা-১ ব্লকের মাংরুল গ্রাম পঞ্চায়েতের ৮ ও ৯ নম্বর গোয়ালসিনি বুথে সিপিআইএমের এজেন্ট ঢুকতে বাধা দেয় শাসকদল তৃণমূল। সিপিআইএমের প্রার্থী সেখ আবু কালাম প্রতিবাদ করতে গেলে প্রার্থীর চোখে লঙ্কা গুঁড়ো ছিটিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। সিপিএম প্রার্থী, এজেন্ট সহ তিনজনের উপর তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা আক্রমণ করে বলেও অভিযোগ। অন্যদিকে, জঙ্গলমহল শালবনীতে চাপা উত্তেজন থাকলেও তুলনামূলকভাবে শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে বিকেল চারটা অবধি। যদিও, মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি শংকর গুছাইতের অভিযোগ, “ভোটের নামে প্রহসন করতে চেয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্য জুড়ে রক্তের হোলি খেলা চলছে। কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ব্যবহার করা হয়নি। পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনীতেও আমরা দেখলাম, যেখানে প্রয়োজন নেই, সেখানে দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। যেখানে প্রয়োজন, সেখানে দেওয়া হয়নি। দিনভর ছাপ্পা মারার চেষ্টা করে গেছে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। তবে, জঙ্গলমহলে তা রুখে দিয়েছেন বিজেপি কর্মীরা।” যদিও, মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলার নারায়ণগড়, দাঁতন, মোহনপুর প্রভৃতি এলাকায় এবং ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার ডেবরা, সবং, কেশপুর, চন্দ্রকোনা প্রভৃতি এলাকাতে তৃণমূলের তরফে অবাধে ছাপ্পা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।

thebengalpost.net
চন্দ্রকোনাতেও অশান্তি: