দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৬ জুলাই: কেশিয়াড়ি বিডিও অফিসের হেডক্লার্ক কাম অ্যাকাউন্টেন্ট (বড়বাবু) অভিষেক গঙ্গোপাধ্যায় (৩৮)-এর রক্তাক্ত ও ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ উদ্ধার ভাড়াবাড়ি থেকে! মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টা নাগাদ মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর কেশিয়াড়ি গ্রামীণ হাসপাতালে পাঠানো হলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। ঘটনা ঘিরে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে জেলাজুড়ে। তবে, ঘটনার মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যেই মূল অভিযুক্ত শিবু রাউলকে গ্রেপ্তার করে খুনের কিনারা করেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশ তথা কেশিয়াড়ি থানার পুলিশ। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ শিবু সহ ৪ জনকে আটক করেছিল কেশিয়াড়ি থানার পুলিশ। রাত্রি ৯টা নাগাদ মূল অভিযুক্ত শিবুকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শিবু খুনের কথা স্বীকার করেছে বলে জেলা পুলিশের একটি সূত্রে জানা গেছে। আজ, বুধবার শিবুকে আদালতে পেশ করে পুলিশ নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানাবে বলে জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন। সেইসঙ্গে মৃত অভিষেকের দেহের ময়নাতদন্তও সম্পন্ন হবে আজ (বুধবার) দুপুর নাগাদ খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে।

জানা যায়, সোমবার রাতে অভিষেকের ভাড়াবাড়িতে তাঁর সঙ্গে বসে মদ্যপান করছিল শিবু। সেই সময়ই কোনও একটি বিষয়ে বচসার কারণে ধারালো কোনও অস্ত্র (ছুরি বা হাঁসুয়া) দিয়ে নির্মমভাবে কুপিয়ে অভিষেককে খুন করা হয় বলে পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। পুলিশ ও বিডিও অফিস সূত্রে জানা গেছে, মেদিনীপুর শহরের নজরগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা অভিষেক মাস দুয়েক হল বিডিও অফিসের অদূরে (৭-৮ কিলোমিটার দূরে) ওই মেসবাড়িতে বা ভাড়াবাড়িতে থাকতে শুরু করেন। বাড়িতে স্ত্রী ও ১১ বছরের নাবালক সন্তান আছে। একসময় অভিষেক মেদিনীপুর শহরের একটি স্থানীয় টিভি চ্যানেলে সাংবাদিকতার কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন বলেও জানা যায়। বাবার মৃত্যুর পর এই চাকরি পেয়েছিলেন তিনি। প্রথম পোস্টিং ছিল গড়বেতা। ২০২৩ সালে কেশিয়াড়িতে বদলি হয়ে আসেন। সোমবারও অভিষেক যথারীতি অফিসে গিয়েছিলেন বলে জানান বিডিও অফিসের কর্মীরা। তবে, মঙ্গলবার অফিসে যাননি অভিষেক। দুপুর নাগাদ সহকর্মীরা তাঁকে ফোনে না পেয়ে খোঁজখবর শুরু করেন। পরিবারের লোকজনও ফোন করেছিলেন অভিষেককে। এরপরই বাড়ির মালিককে ফোন করা হলে, ভরদুপুরে দরজা ভেজানো দেখে তাঁর সন্দেহ হয়। দরজা খুলেই আঁতকে ওঠেন তিনি। রক্তাক্ত ও ক্ষতবিক্ষত দেহ পড়ে বিছানার উপর! তিনিই পুলিশকে খবর দেন।
বিকেল সাড়ে ৩টা নাগাদ কেশিয়াড়ি থানার পুলিশ গিয়ে রক্তাক্ত ও ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ উদ্ধার করে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রাত থেকেই দরজা বাইরে থেকে ভেজানো ছিল। খুন করার পরই পালিয়ে যায় শিবু। তাঁকে খড়্গপুর গ্রামীণের একটি এলাকা থেকে মঙ্গলবার সন্ধ্যা নাগাদ আটক করা হয়। পরে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, অভিষেক তাঁর রুমে ওই মেসবাড়িরই অপর এক আবাসিক শিবুর সঙ্গে নিয়মিত মদ্যপান করতেন। শিবুর বাড়ি কেশিয়াড়ি ব্লকেরই প্রত্যন্ত বাঘাস্তি এলাকায় বলে জানা গেছে। স্থানীয় একটি কলেজে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সাথে সাথেই একটি বেসরকারি সংস্থায় সে কাজ করত বলেও জানা গেছে। প্রায় প্রতিদিনই শিবু আর অভিষেক একসঙ্গে বসে মদ্যপান করতেন। সোমবার রাতেও বসেছিল আসর। সেখানেই বচসা থেকে এই ঘটনা ঘটে বলে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে শিবু। কেশিয়াড়ির বিডিও হিতাংশু হালদার বলেন, “মর্মান্তিক দুঃসংবাদ! বিকেল নাগাদ পুলিশ সূত্রেই আমরা জানতে পারি। শোকার্ত পরিবারকে সমবেদনা জানানোর ভাষা নেই!” জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “তদন্তে নেমে মাত্র ৩-৪ ঘন্টার মধ্যেই মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে।”