thebengalpost.net
দিব্যেন্দু মুখার্জির কাছ থেকেই উদ্ধার হয় টাকা:

শশাঙ্ক প্রধান, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৭ মার্চ: বন্ধুর ধার দেওয়া ৫ লক্ষ (৪ লক্ষ ৯০ হাজার) টাকা আত্মসাৎ করাই ছিল লক্ষ্য! তাই, ব্যাংক থেকে টাকা তোলার পর, মুদি দোকান থেকে একটা লঙ্কার গুঁড়োর প্যাকেটও কিনেছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের সবংয়ের যুবক। তারপর টাকা বাড়িতে রেখে এসে, দুই চোখে অল্পস্বল্প লঙ্কার গুঁড়ো মাখিয়ে সোজা সবং থানায় হাজির হয়ে যায় বছর ৩৯-র দিব্যেন্দু মুখার্জি। অভিযোগ, ব্যাঙ্ক থেকে ৪ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা তুলে বাইরে বেরোনোর পরই সেই টাকা ছিনতাই হয়ে গেছে! রহস্যের উন্মোচন করতে অবশ্য সবং থানার পুলিশকে বিশেষ বেগ পেতে হয়নি। ব্যাঙ্কের সিসিটিভি (CCTV) ফুটেজ খতিয়ে দেখে তদন্ত কিছুটা এগিয়ে নিয়ে যেতে না যেতেই সবটা জলের মতো পরিষ্কার হয়ে যায়।

thebengalpost.net
ধৃত যুবক:

thebengalpost.net
বিজ্ঞাপন (Advertisement):

পুলিশের কড়া জিজ্ঞাসাবাদের মুখে দিব্যেন্দু স্বীকার করেন, টাকা তাঁর বাড়িতেই আছে! এরপরই, দিব্যেন্দু মুখার্জিকে গ্রেপ্তার করে সবং থানার পুলিশ। বৃহস্পতিবার এই চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সবংয়ে। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বুধবার তেমাথানির বন্ধন ব্যাংকের শাখা থেকে ৪ লক্ষ ৯০ হাজার তুলে বাড়ি ফেরেন দিব্যেন্দু মুখার্জি নামে পেশায় ব্যবসায়ী ওই যুবক। তারপর বাড়িতে সেই টাকা রেখে এসে, নিজের চোখে নিজেই লঙ্কার গুঁড়ো ছিটিয়ে (বা, লাগিয়ে) ছিনতাইয়ের গল্প তৈরি করেন! থানায় গিয়ে দিব্যেন্দু অভিযোগ করেন, তেমাথানির বন্ধন ব্যাংকের শাখা থেকে ৪ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা তুলে বাড়ি ফেরার সময়, সবং বাজার এলাকায় দুই দুষ্কৃতী তাঁর পথ আটকে চোখে লঙ্কার গুঁড়ো ছিটিয়ে ৪ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা নিয়ে চম্পট দিয়েছে। অভিযোগ পাওয়ার পরেই সবং থানার পুলিশ তড়িঘড়ি তদন্তে নামে। তদন্তে শুরু করার কিছুক্ষণের মধ্যেই অবশ্য সবং থানার তদন্তকারী অফিসার সহ পুলিশ আধিকারিকরা বুঝতে পারেন, দুধে জল নয়, জলে এক ফোঁটাও দুধ নেই! পুরোটাই গল্প! বন্ধু তথা পরিচিত ব্যবসায়ীর ধার দেওয়া টাকা ‘আত্মসাৎ’ করতেই ছিনতাইয়ের গল্প ফাঁদে যুবক। পুলিশের একটি সূত্রে জানা যায়, দুই চোখের নিচে হালকা করে লাগানো লঙ্কার গুঁড়ো আর ব্যাঙ্কের সিসিটিভি ফুটেজের সঙ্গে দিব্যেন্দু-র বয়ান পুরোপুরি না মেলায় তদন্তকারী অফিসারের মনে সন্দেহ জাগে। এরপর, ধাপে ধাপে কিছুটা এগোনোর পরই রহস্যের উন্মোচন হয়! পুলিশের চাপে সব স্বীকার করেন দিব্যেন্দু। তাঁর বাড়ি থেকেই উদ্ধার হয় টাকা। সবমিলিয়ে, অভিযোগ পাওয়ার ৫ ঘন্টার মধ্যেই বড়সড় সাফল্য লাভ করে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশ তথা সবং থানার পুলিশ। বুধবার রাতেই গ্রেফতার করা হয় দিব্যেন্দু মুখার্জিকে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে মেদিনীপুর আদালতে পেশ করা হয় ধৃত যুবককে। পুলিশের আবেদন মেনে ধৃতের ২ দিনের পুলিশ হেফাজত মঞ্জুর করেন বিচারক। জেলা পুলিশের একটি সূত্রে জানা গেছে, ধৃত দিব্যেন্দু আদতে কেশপুরের বাসিন্দা হলেও, সম্প্রতি সবংয়ে একটি সাবান গুঁড়ো বা ডিটারজেন্ট পাউডারের ফ্যাক্টরি করেন তিনি। এছাড়াও, অন্যান্য কিছু ব্যবসার সঙ্গেও যুক্ত। এজন্য তিনি বিভিন্ন জায়গা থেকে বেশ ভালো পরিমাণে লোন করেছেন বলেও প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে পুলিশ। বুধবার এই ধরনের ব্যবসার সঙ্গেই যুক্ত এক বন্ধুর কাছ থেকে দু’দিনের মধ্যেই শোধ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে, প্রায় ৫ লক্ষ (৪ লক্ষ ৯০ হাজার) টাকা ধার করেছিলেন দিব্যেন্দু। ওই বন্ধু দিব্যেন্দু-র স্ত্রী’র অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়েছিলেন বলে জানা যায়। এরপরই টাকা তুলে, ছিনতাইয়ের গল্প তৈরী করেন দিব্যেন্দু! পুরো ঘটনায় আরো বেশ কিছু ‘রহস্য’ জড়িয়ে থাকতে পারে বলে পুলিশের অনুমান। তদন্ত সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে পুলিশের তরফে।

thebengalpost.net
দিব্যেন্দু মুখার্জির কাছ থেকেই উদ্ধার হয় টাকা: