দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২ মে: মাস চারেক আগে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার তমলুকের খামারচক হাই স্কুলে ‘ভুয়ো’ জাতিগত শংসাপত্রের ভিত্তিতে তথা সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে একজন কম্পিউটার শিক্ষক নিয়োগের অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার করেছিল সিআইডি (CID)। এবার, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শালবনী ব্লকের ভীমপুরে অবস্থিত ভীমপুর সাঁওতাল উচ্চ বিদ্যালয় এবং ভীমপুর এবিএম গার্লস হাই স্কুলে ‘অবৈধভাবে’ প্রায় ২৪ জন শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী নিয়োগের ঘটনায় (‘ভুয়ো’ নিয়োগে অ্যাপ্রুভাল বা অনুমোদন দেওয়ার অভিযোগে) তাঁকে গ্রেফতার (সোন অ্যারেস্ট/Shown Arrest) করল শালবনী থানা তথা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশ। ‘গুনধর’ এই শিক্ষাকর্তা হলেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার প্রাক্তন ডিআই (প্রাক্তন জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক) চাপেশ্বর সর্দার। মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) তাঁকে সিআইডি হেফাজত থেকে আদালতের অনুমতি নিয়ে সোন অ্যারেস্ট (Shown Arrest) করা হয় এবং আজ (বৃহস্পতিবার) বিকেল সাড়ে ৩টা নাগাদ তাঁকে মেদিনীপুর জেলা আদালতে তোলা হয়। মেদিনীপুর জেলা আদালতের বিচারক তাঁর ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। আপাতত মেদিনীপুর সেন্ট্রাল জেলেই ঠাঁই হচ্ছে প্রাক্তন এই শিক্ষাকর্তার। তদন্তের স্বার্থে এরপর তাঁকে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানানো হবে বলে জেলা পুলিশের একটি সূত্রে জানা গেছে।

thebengalpost.net
মেদিনীপুর জেলা আদালতে চাপেশ্বর সর্দার:

উল্লেখ্য যে, পূর্ব মেদিনীপুরের ডি.আই থাকাকালীন (২০১৮ সাল অবধি) তমলুকের খামারচক হাই স্কুলে ওই স্কুলেরই তৎকালীন প্রধান শিক্ষক অশোক কুমার হাটুয়া-র ভাইপো (শুভেন্দু হাটুয়া)-কে ‘অবৈধভাবে’ নিয়োগ করার ঘটনায় তাঁকে আদালতের নির্দেশে চলতি বছরের (২০২৪ সালের) ১০ জানুয়ার গ্রেপ্তার করেছিল সিআইডি। এবার, খ্রিস্টান সার্ভিস সোসাইটি পরিচালিত ভীমপুরের দু’টি স্কুলে অবৈধভাবে শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী নিয়োগ হচ্ছে জেনেও, মোটা টাকার বিনিময়ে অ্যাপ্রুভাল বা অনুমোদন দেওয়ার অভিযোগে প্রাক্তন ডিআই চাপেশ্বর সর্দার-কে গ্রেফতার করল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশ তথা শালবনী থানার থানার পুলিশ। চাপেশ্বর-কে জিজ্ঞাসাবাদ করে খ্রিস্টান সার্ভিস সোসাইটির মূল ষড়যন্ত্রকারীদের গ্রেফতার করার জন্য আদালতের অনুমতি চাইতে পারে পুলিশ। আপাতত মেদিনীপুর সেন্ট্রাল জেলে গিয়েই তাঁকে জেরা করা হবে বলে তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গেছে। ১৪ দিন জেল হেফাজত শেষে চাপেশ্বর-কে পুলিশ নিজেদের হেফাজতে (PC) নেওয়ার আবেদন জানাবে বলেও জানা গেছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত খ্রিস্টান সার্ভিস সোসাইটির ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর (প্রভঞ্জন সিট ও ড্যানিয়েল দাস গোষ্ঠী) মদতে বা চক্রান্তে ভীমপুরের ওই দু’টি স্কুলে এবং মেদিনীপুর শহরের মিশন গার্লস হাই স্কুলে প্রায় ৩০ জন (বা, আরও বেশি) শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী নিযুক্ত হন। ওই সমস্ত পদগুলির আইনি বৈধতা না থাকা সত্ত্বেও বা ‘ভুয়ো নিয়োগ’ জানা সত্ত্বেও, মোটা টাকার বিনিময়ে তৎকালীন ডিআই (চাপেশ্বর সর্দার) ওই সমস্ত পদের অ্যাপ্রুভাল বা অনুমোদন দেন বলে অভিযোগ। এর বিরুদ্ধেই শালবনী থানায় অভিযোগ দায়ের করেন সোসাইটির অন্য একটি গোষ্ঠীর সদস্যরা। মামলা করা হয় মেদিনীপুর জেলা আদালত এবং কলকাতা হাইকোর্টেও। শেষ পর্যন্ত গ্রেফতার হলেন প্রাক্তন ডিআই চাপেশ্বর সর্দার। তবে, অভিযোগকারী থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, এই ঘটনায় ‘আসল মাথা’দের গ্রেফতার করতে হবে। তবে, চাপেশ্বরের গ্রেফতারিতে কিছুটা হলেও খুশি অভিযোগকারীরা তথা খ্রিস্টান সার্ভিস সোসাইটির অপর গোষ্ঠীর সদস্যরা এবং স্থানীয় বাসিন্দারা। এদিন, আদালত চত্বরে চাপেশ্বর-কে দেখে ‘চোর চোর’ স্লোগান দেন তাঁরা!

thebengalpost.net
তোলা হল মেদিনীপুর আদালতে: