thebengalpost.net
ভাই বিক্রম (ডানদিকে) এবং দাদা দেব :

তনুপ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১ মে: “২০১৬ সাল। তখন প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় বাড়ি পেয়েছিলাম। কিন্তু, বাড়িটা করতে পারিনি। ৭৫ হাজার টাকা পেয়েছিলাম। এর মধ্যে, ১৫ হাজার টাকা আমাকে দিয়ে ৬০ হাজার টাকাই ওরা নিয়ে নিয়েছিল। ওরা মানে এখানকার তৃণমূল নেতাদের কয়েকজন।” শনিবার ঠিক এমনই বিস্ফোরক অভিযোগ করেছিলেন অভিনেতা-সাংসদ দীপক অধিকারী ওরফে দেবের ভাই বিক্রম অধিকারী। দেবের আদি বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কেশপুর ব্লকের মহিষদা গ্রামের বাসিন্দা তিনি। বিক্রম সম্পর্কে দেবের জেঠতুতো দাদা। ঘাটালের সাংসদ তথা অভিনেতা দেবের মেজ জেঠু বিষ্ণুপদ অধিকারীর ছেলে বিক্রম। তিনি দাবি করেছেন, “কেশপুরের বিধায়ক শিউলি সাহা সহ দলের সকলেই জানে!” এই বিষয়ে শনিবার কেশপুরের বিডিও দীপক ঘোষ জানিয়েছিলেন, “ওঁর নামে কয়েক বছর আগে বাড়ি বরাদ্দ হয়েছিল। তবে, তারপর যে সমস্যা হয়েছিল সেটা জানাননি!” আর, এনিয়ে যখন রাজ্য রাজনীতি উত্তাল, ঠিক তখনই সাংসদদের বিরুদ্ধে পোস্টার পড়ল তাঁর সংসদীয় এলাকাতে। সোমবার যে পোস্টার পড়েছে, তাতে লেখা- “নিজের দাদা সাংসদ থাকা সত্ত্বেও কাটমানি দিতে হয়, তাহলে সাধারণ মানুষের কি হবে?”

thebengalpost.net
ভাই বিক্রম (ডানদিকে) এবং দাদা দেব :

সোমবার গোটা ঘাটাল শহর জুড়ে দেব ওরফে দীপক অধিকারীর বিরুদ্ধে পোস্টার পড়ল। বিজেপির তরফে এই পোস্টার দেওয়া হয়েছে। পোস্টারে উল্লেখ রয়েছে প্রচারে- ভারতীয় জনতা পার্টি, ঘাটাল বিধানসভা। বিজেপির তরফে ঘাটাল শহরের পাঁশকুড়া বাসস্ট্যান্ড, ঘাটাল কলেজ, মহকুমাশাসক দপ্তর, সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ড সহ একাধিক জায়গায় এই ধরনের পোস্টারিং করা হয়।হটাৎ ঘাটাল শহরে তৃণমূল সাংসদ অভিনেতা দীপক অধিকারী ওরফে দেবের নাম উল্লেখ করে কেনো এই ধরনের পোস্টারিং করা হল? তার উত্তরে বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, “ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল সাংসদ অভিনেতা দীপক অধিকারী ওরফে দেবের ভাই বিক্রম অধিকারী স্বীকার করেছেন আবাস যোজনার বাড়ি পেতে তৃণমূলের ঘোষিত ‘৭৫ শতাংশ’ কাটমানি দিতে হয়। তৃণমূলের কাটমানির বিষয়টি খোদ সাংসদ দেবের পরিবারের এক সদস্য প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন। তাই এই পোস্টারিং। অবিলম্বে সাংসদ দেবের পদত্যাগ দাবি করছি আমরা।” উল্লেখ্য, ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ঘাটাল বিধানসভার বিধায়ক হলেন বিজেপির শীতল কপাট। তাই, দেবের বিরুদ্ধে ঘাটাল এলাকায় এই অপপ্রচার চালানো হচ্ছে বলে তৃণমূলের অভিযোগ। এই বিষয়ে সংসদ দেবের কোন প্রতিক্রিয়া পাওয়া না গেলেও, ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের অধীন কেশপুরের বিধায়ক শিউলি সাহা বলেন, “আমার কাছে কেশপুরের বাকি সব মানুষের গুরুত্ব যতটা, বিক্রম অধিকারীর গুরুত্বও ঠিক ততটাই। দেবের ভাই বলে আলাদা কোন গুরুত্ব দিচ্ছি না। ওঁর কাছে যদি কেউ টাকা নিয়ে থাকে, এতদিন অভিযোগ করেননি কেন? বা, কারুর নামে এফআইআর করেননি কেন?.. শুনেছি ওঁর মাথায় একটু গন্ডগোল থাকতে পারে!” অন্যদিকে, স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দেবের ভাই একসময় বাস কর্মী ছিলেন, এখন পুরোহিতের কাজ করেন। একসময় সিপিএম কর্মী হিসেবে এলাকায় পরিচিতি থাকলেও, এখন তৃণমূল করেন বলে দাবি বিক্রমের। বলেন, “বছর দুয়েক হলো তৃণমূল করছি। তৃণমূলে আমায় টেনে নিল। কিন্তু, সুযোগ সুবিধা কিছুই নেই। ঘর-দুয়ারটুকুও হলো না!”

thebengalpost.net
পোস্টার:

অন্যদিকে, মঙ্গলবার অনলাইনে কেশপুর থানায় দেবের ভাই বিক্রম অধিকারীর বিরুদ্ধে FIR করেছেন কেশপুরের বিধায়ক শিউলি সাহা। তাঁর এবং তাঁর দলের বিরুদ্ধে মিডিয়ার সামনে মিথ্যা অভিযোগ আনার জন্য-ই এই অভিযোগ বলে জানা গেছে। তবে, বিক্রম জানিয়েছেন, তাঁর অভিযোগ মিথ্যা নয়। তিন দফায় ৭৫ হাজার টাকা তুলেছেন এবং তিন দফাতে মোট ৬০ হাজার টাকা স্থানীয় নেতাদের কাটমানি দিতে হয়েছে। ঘটনা ঘিরে নতুন করে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে দেবের (দীপক অধিকারী’র) সংসদীয় এলাকা বা লোকসভা কেন্দ্র ঘাটালের অধীন কেশপুর বিধানসভায়। উল্লেখ্য যে, এই কেশপুর থেকেই দেব সর্বাধিক লিড পেয়েছিলেন ২০১৯’র লোকসভা নির্বাচনে!