thebengalpost.net
সাত্যকির হাতে উপহার তুলে দিচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা:

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৮ জুন: বাঙালির ভাষা শিক্ষা আর নীতিশিক্ষার ভিত গড়ে দেয় ‘শ্রী ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রণীত’ বর্ণপরিচয়। মেদিনীপুরের মহামানব, নবজাগরণের অগ্রদূত পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত সেই ‘বর্ণপরিচয়’-র গোপাল, রাখাল, গিরিশ, নবীন-রা সব ‘অক্ষয়-অমর’ চরিত্র। আমাদের আশেপাশেই তো তারা ঘুরে বেড়ায় ভিন্ন ভিন্ন রূপে। এই যেমন শালবনীর ভাদুতলা হাইস্কুলের সাত্যকি। পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র সাত্যকি মাইতির সততা, আদর্শনিষ্ঠা, পারিবারিক শিক্ষা বর্ণপরিচয়ের ‘গোপাল বড় সুবোধ বালক’-এর কথা মনে করাতে বাধ্য! চলতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার (৫ জুন) প্রার্থনাসভায় বিদ্যালয়ের সমস্ত ছাত্রছাত্রীদের সাত্যকির ‘সততার গল্প’ শোনালেন প্রধান শিক্ষক ড. অমিতেশ চৌধুরী।

thebengalpost.net
সাত্যকির হাতে উপহার তুলে দিচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা:

thebengalpost.net
বিজ্ঞাপন (Advertisement):

গরমের ছুটি পড়ার ঠিক আগের দিন ভাদুতলা বিবেকানন্দ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক দিলীপ মাহাত প্রধান শিক্ষক ড. অমিতেশ চৌধুরীর কক্ষে গিয়ে বলেন, পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র সাত্যকি মাইতি আগের দিন ছুটির পর স্কুলের গেটের ঠিক বাইরেই আড়াই হাজার টাকা কুড়িয়ে পেয়েছে। সে সেই অর্থ স্কুলের হাতে তুলে দিতে চায়। প্রধান শিক্ষক সাথে সাথেই বলেন, ওই টাকা স্কুলের অন্য কোন ছাত্রছাত্রী বা শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের কিনা তা আগে ভালো করে খোঁজ নেওয়া হোক। দিলীপ বাবু জানান, তাঁরা সেই খোঁজ নিয়েছেন। কেউই এই টাকার দাবি করেনি। তা সত্ত্বেও প্রধান শিক্ষকের নির্দেশে, আবারও খোঁজ নেওয়া হয়। তাতেও দাবিদার মেলেনি! এরপরই প্রধান শিক্ষক সাত্যকি-কে বলেন, “কেউ যখন দাবি করছেনা। ওই টাকা তোমার কাছেই রেখে দাও। তোমার বাবা-মা যেভাবে বলবেন, সেভাবে কাজে লাগিও!” সাত্যকি জানায়, “না স্যার, আমার টাকা নয়। আমি নেবনা। আর বাবা বলে দিয়েছেন, এই টাকা আপনার হাতেই তুলে দিতে!” সাত্যকির কথায় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন প্রধান শিক্ষক অমিতেশ চৌধুরী, সহ শিক্ষক দিলীপ মাইতি, শিক্ষিকা গৌরী মন্ডলরা। তাঁদেরও মনে পড়ে যায় বর্ণপরিচয়ের সেই নীতিশিক্ষা (‘পরের দ্রব্যে হাত দিও না’) আর ‘গোপাল বড় সুবোধ বালক’-এর কথা।

গরমের ছুটি কাটিয়ে গত সপ্তাহেই স্কুল খুলেছে, তারপরও ওই টাকার কোনও দাবিদার খুঁজে পাওয়া যায়নি। এমনকি স্থানীয় সিভিক ভলেন্টিয়ার বা ভিলেজ পুলিশরাও টাকা খোওয়া যাওয়ার কোনও অভিযোগ পাননি! অগ্যতা সেই অর্থ স্কুলের কোন ভালো কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নেন অমিতেশ বাবুরা। সেইসঙ্গে বৃহস্পতিবার প্রার্থনাসভায় সাত্যকির সততার গল্প তুলে ধরেন প্রধান শিক্ষক। আর তার সততার পুরস্কার স্বরূপ স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা তার হাতে তুলে দেন একটি স্কুল ব্যাগ এবং একটি স্মারক। প্রধান শিক্ষক বলেন, “বর্তমান সমাজে এই সততা দুর্লভতম এক চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। আমাদের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে এভাবেই তা বেঁচে থাকুক!” সাত্যকির বাবা তুষার মাইতি পেশায় একটি মুরগি ফার্মের কর্মী। সততাই তাঁর জীবনের মূলমন্ত্র। শনিবার সন্ধ্যায় তিনি বলেন, “ওইদিন স্কুল ছুটির পর বাড়ি ফিরে ছেলে বলে, বাবা এই টাকাটা কুড়িয়ে পেয়েছি, স্কুলের গেটের ঠিক বাইরেই। আমি আর ওর মা (শিপ্রা মাইতি) সঙ্গে সঙ্গেই বলি, এই টাকা এভাবেই রেখে দাও। কাল স্কুল গিয়েই স্যারের হাতে তুলে দেবে। আমি জানতাম, ছেলে তাই করবে। একটু চঞ্চল। ৩ বার বললে তবে একবার পড়তে বসে। তবে, বাকি সবকিছুই ওর ভালো। আমাদের সব কথা শোনে। আর ছবি আঁকতে খুব ভালোবাসে।” স্কুলের শিক্ষক দিলীব বাবু, গৌরী ম্যাডামরা বলেন, “সাত্যকি পড়াশোনাতেও ভালো। আর সবথেকে বড় কথা, ও সৎ, ভদ্র ও বিনয়ী!”

thebengalpost.net
বিজ্ঞাপন (Advertisement):