thebengalpost.net
শুক্রবার সকালে হাসিবুলের স্ত্রী মুক্তারা বিবি অভিনয় চালিয়ে যাচ্ছেন সংবাদমাধ্যমের সামনে:

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২০ জানুয়ারি: “JCB-র কিছু কাগজপত্র, কিছু জামাকাপড় আর দেড় লক্ষ টাকা নিয়ে বৃহস্পতিবার ভোরে বেরিয়েছিল। হাইকোর্টে উকিলকে ওই টাকা দেবে (মামলার খরচ) বলেই বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল…বাবা আর দাদাকে বাঁচাবে বলে কার সঙ্গে নাকি চ্যালেঞ্জ করেছিল!” শুক্রবার ভোরে পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলদা থানার অন্তর্গত বাখরাবাদ স্টেশন সংলগ্ন তেগেড়িয়া রেলগেটের কাছে আপ-লাইন থেকে বস্তাবন্দী মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায়, শনিবার ঠিক এমনটাই জানিয়েছেন মৃত যুবকের স্ত্রী। উল্লেখ্য যে, শুক্রবার বিকেল নাগাদ মৃত যুবকের ‘নাম-পরিচয়’ উদ্ধার করতে সক্ষম হয় খড়গপুর GRP (রেল পুলিশ)। জানা যায়, মৃত যুবক খড়গপুর গ্রামীণের সাঁকোয়া অঞ্চলের খাগড়া (বা, অরুণ খাগড়া) গ্রামের বাসিন্দা। নাম সেখ হাসিবুল রহমান। এও জানা যায়, বছর ৩০’র ওই যুবক তৃণমূল সমর্থক হিসেবে এলাকায় পরিচিত। স্ত্রী ছাড়াও যুবকের ৬ বছরের একটি ছেলে আছে।

thebengalpost.net
মৃতের স্ত্রী, সন্তান, কাকা (ডান দিকে) সহ অন্যান্যরা :

thebengalpost.net
মৃত হাসিবুল রহমান:

অপরদিকে, যুবকের কাকা আনিসুর রহমান আবার তৃণমূল পরিচালিত খড়গপুর-২ নং পঞ্চায়েত সমিতির কৃষি, সেচ ও সমবায় স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষ। যদিও, মৃতের স্ত্রী মুক্তারা বিবি থেকে শুরু করে কাকা আনিসুর রহমানের দাবি অনুযায়ী, এই ঘটনার সঙ্গে রাজনৈতিক-যোগ নেই। পুরোটাই ব্যবসায়িক! স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে রেল পুলিশ। পরিবারের তরফেও লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তবে, আজ, শনিবার (২০ জানুয়ারি) সন্ধ্যা অবধি এই ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ! তবে, তদন্ত অনেকটাই এগিয়েছে বলে পুলিশের বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, শুক্রবার ভোর ৩-টা নাগাদ আপ-লাইন দিয়ে যাওয়া এক ট্রেনের চালক বস্তাবন্দী ওই দেহটি দু’টুকরো অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। তিনিই নিকটবর্তী বেলদা স্টেশনে খবর দেন। এরপরই, রেল পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। খবর পাওয়ার পরই খড়গপুর থেকে রেল পুলিশের আধিকারিকরা ছুটে যান বেলদার বাখরাবাদের কাছে ২০ নম্বর রেলগেট বা তেগেগড়িয়া লেভেল ক্রসিং সংলগ্ন এলাকায়। পুলিশ কুকুর বা স্নিফার ডগ দিয়ে তল্লাশি শুরু হয়। মৃতদেহের গন্ধ শুঁকে ওই পুলিশ কুকুর তদন্তকারীদের নিয়ে যায় বাখরাবাদ সংলগ্ন পোক্তাপোলে কেলেঘাই নদীর ব্রিজের নিচে। সেখানে চাপ চাপ রক্ত দেখতে পান তদন্তকারীরা। নমুনা সংগ্রহ করেন তদন্তকারী আধিকারিকরা। এদিকে, মৃত হাসিবুলের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, তিনি বহুতল নির্মাণের সরঞ্জাম বিক্রেতা ছিলেন। কয়েক বছর আগে, পেশায় প্রোমোটার তাঁর দাদা একজনের কাছ থেকে একটি JCB নিয়ে আসেন। সেই জেসিবি-কে কেন্দ্র করে একটি মামলা হয়। দীর্ঘদিন ধরে চলে এই মামলা। মৃতের দাদা এবং বাবার নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা বা অ্যারেস্ট ওয়ারেন্টও বের হয়। এরপর থেকেই তাঁরা বাড়ি-ছাড়া! সেই মামলাতেই হাইকোর্টের এক উকিলকে দেড় লক্ষ টাকা দেওয়ার জন্য বৃহস্পতিবার ভোরে হাসিবুল বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। এরপর তাঁকে বহুবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন তোলেননি বলে দাবি হাসিবুলের স্ত্রী’র। বৃহস্পতিবার রাতের দিকে হাসিবুলের ফোন সুইচ অফ বলে আর শুক্রবার ভোরে তাঁর বস্তাবন্দী মৃতদেহ উদ্ধার করে রেল পুলিশ বা জিআরপি। মৃতের স্ত্রী-র দাবি তাঁর স্বামীকে খুন করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গেই তাঁর (মুক্তারা বিবির) অনুমান, এই খুনের সঙ্গে ওই দেড় লক্ষ টাকা এবং কারুর সঙ্গে ‘চ্যালেঞ্জ’-র বিষয়টির যোগ আছে! শনিবার সকালে তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “…এ ছাড়া অন্য কিছু থাকতে পারেনা! অপরাধীদের শাস্তি চাই।”

thebengalpost.net
ঘটনায় হতবাক সকলে: