দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৩ আগস্ট: রাত পোহালেই পশ্চিম মেদিনীপুর সহ সংশ্লিষ্ট প্রত্যেক জেলাতেই জেলা পরিষদের বোর্ড গঠিত হতে চলেছে। পশ্চিম মেদিনীপুরে জেলা পরিষদের ৬০টি আসনেই এবার জয়ী হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। বিজয়ীদের মধ্যে ৩৩ জনই মহিলা। অন্যদিকে, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতির আসনটিও মহিলা সংরক্ষিত। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন, জেলা পরিষদের ‘দশম’ সভাধিপতি কে হচ্ছেন? এর আগে, ২০১৩ থেকে ২০২৩- দুই দফায় সভাধিপতির দায়িত্ব সামলেছেন গড়বেতার বর্তমান বিধায়ক উত্তরা সিংহ হাজরা। এবারও, শেষ মুহূর্তে জেলা পরিষদের টিকিট পেয়েছেন তিনি। গড়বেতা থেকে, ৫১নং জেলা পরিষদ আসনে বিপুল ভোটে (প্রায় ৩৯ হাজার) জয়ী হয়েছেন। তবে, দলের একটি সূত্রে জানা যায়, তৃতীয় বারের জন্য উত্তরা’র সভাধিপতি হওয়ার সম্ভাবনা কম! অনেকেই মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ২০২২ সালের ১৭-মে মেদিনীপুর শহরের প্রদ্যোৎ স্মৃতি সদনে অনুষ্ঠিত একটি প্রশাসনিক সভায় স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করে জানিয়েছিলেন, “উত্তরা তোমাকে আমি এক মাসের জন্য সময় দিচ্ছি…!” যদিও, তারপর কংসাবতী আর শিলাবতী নদী দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে। শেষ মুহূর্তে টিকিট পেয়ে, জেলা পরিষদ নির্বাচনে রেকর্ড ভোটে জয়ী হয়েছেন! তা সত্ত্বেও, নানা কারণে তৃতীয়বারের জন্য তাঁর সভাধিপতি হওয়ার সম্ভাবনা কম বলেই দলের বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়।

thebengalpost.net
সভাধিপতি কে?

প্রথমত, বিধায়ক হওয়া সত্ত্বেও দল এবারও টিকিট দিয়েছিল জেলা পরিষদের বিদায়ী সভাধিপতি উত্তরা সিংহ হাজরা এবং বিদায়ী সহ-সভাধিপতি অজিত মাইতি-কে। তবে, তখনই নাকি দলের শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে তাঁদের ‘শর্ত’ দেওয়া হয়েছিল এবার তাঁরা সভাধিপতি এবং সহ-সভাধিপতি’র পদের জন্য ‘দাবি’ করতে পারবেন না! এর মধ্যেই, দলের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ ‘নতুন’ সভাধিপতি ও সহ-সভাধিপতি’র দাবি জানিয়ে এসেছেন ধারাবাহিকভাবে। সেই নতুনদের দৌড়ে এবার প্রথমেই যাঁর নাম উঠে এসেছে, তিনি বিদায়ী বোর্ডের নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষ প্রতিভা মাইতি। দলের দীর্ঘদিনের এই লড়াকু নেত্রী তথা অভিজ্ঞ ও বর্ষীয়ান জেলা পরিষদের সদস্যকে এবার রাজ্য নেতৃত্বের তরফে নাকি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এলাকার বাসিন্দা (নারায়ণগড় এলাকার বাসিন্দা) না হওয়া সত্ত্বেও, গড়বেতা ৩নং ব্লকের একটি আসন থেকে এবার তিনি বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে জেলা পরিষদের সদস্য হয়েছেন। সভাধিপতির দৌড়ে নাকি এবার স্বচ্ছ ভাবমূর্তির প্রতিভার পাল্লা-ই ভারী! এছাড়াও, দৌড়ে আছেন ডেবরার প্রাক্তন বিধায়ক সেলিমা খাতুন। বর্তমান, বিধায়ক হুমায়ুন কবীর-কে চাপে রাখতে শীর্ষ নেতৃত্ব শেষ মুহূর্তে সেলিমা-কেও বেছে নিতে পারে বলে দলের একটি সূত্র জানাচ্ছে। গড়বেতা ৩নং ব্লকের অন্য একটি আসন থেকে জয়ী হয়েছেন শালবনীর বিধায়ক তথা রাজ্যের প্রতিমন্ত্রী শ্রীকান্ত মাহাত-র স্ত্রী (সহকারী অধ্যাপক) অঞ্জনা মাহাত-ও। তাঁর জন্যও নাকি বিভিন্ন মহল থেকে তদবির করা হয়েছে দলের জেলা ও রাজ্য নেতৃত্বের কাছে! এছাড়াও, বিদায়ী বোর্ডের শিক্ষা কর্মাধক্ষ্য তথা দলের মেদিনীপুর সাংগঠনিক মহিলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভানেত্রী মামণি মাণ্ডির নামও কেউ কেউ তুলছেন। তবে, বিভিন্ন সূত্রের খবর অনুযায়ী শেষ পর্যন্ত লড়াই নাকি প্রতিভা আর উত্তরা-র মধ্যেই! প্রতিভার পাল্লা ভারী হলেও, সর্বশেষ ‘উত্তর’ মিলবে সোমবার সকালেই

অপরদিকে, পিংলার বিধায়ক অজিত মাইতির সঙ্গে সহ-সভাধিপতির দৌড়ে এবার আছেন দলের ঘাটাল সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি আশিস হুদাইত। বিধায়ক হওয়ার সাথে সাথেই দলের অবিভক্ত জেলার ‘সাংগঠনিক’ বড় (পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের আহ্বায়ক) পদেও আছেন অজিত। তাই, সহ-সভাধিপতির দায়িত্ব এবার নাও পেতে পারেন তিনি! সেক্ষেত্রে, আশিস হুদাইতের সঙ্গেই বিদায়ী বোর্ডের পূর্ত কর্মাধক্ষ্য তথা দলের অভিজ্ঞ নেতা নির্মল ঘোষ-ও ‘সহ-সভাধিপতি‘ পদের দাবিদার। খড়্গপুরের বাসিন্দা হলেও, নির্মল-কে এবার টিকিট দেওয়া হয়েছিল গড়বেতা-৩নং ব্লকের একটি আসনে। এছাড়াও, ঘাটালের প্রাক্তন বিধায়ক শংকর দলুই-র নামও তুলছেন কেউ কেউ। তবে, শেষ পর্যন্ত লড়াই নাকি আশিস ও অজিতের মধ্যেই! শেষ হাসি হাসবেন কে? জানতে হলে অপেক্ষা করতে হবে আর মাত্র কয়েক ঘন্টা!