thebengalpost.net
প্রচারে চন্ডী ঘোষ:

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৬ জুন: না, কংগ্রেস বা বিজেপিতে নয়; ৯৮ সাল থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তথা তৃণমূল কংগ্রেসের বিশ্বস্ত সৈনিক। সম্প্রতি ‘দিদির দূত’ হিসেবে এলাকায় গিয়ে তাঁর বাড়িতেই মধ্যাহ্নভোজন সেরেছিলেন স্থানীয় বিধায়ক জুন মালিয়া। শাসকদলের সেই দাপুটে ও সুপরিচিত নেতা এবার সিপিআইমে। জঙ্গলমহল শালবনীতে এ যেন তাই ‘উলট-পুরাণ’! শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের বিদায়ী গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য চন্ডী ঘোষ (ওরফে সুকুমার ঘোষ) এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে সিপিআইএম প্রার্থী। নিজের পুরানো আসনেই এবার সিপিআইএমের প্রার্থী হয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের দাপুটে নেতা চন্ডী। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শালবনী ব্লকের ১০ নম্বর কর্ণগড় অঞ্চলের ভাবরিগেড়া গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে এবার ঠিক এমন ঘটনাই ঘটেছে। গত ২৫ বছর ধরে দাপটের সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস করে আসা বিদায়ী গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য চন্ডী ঘোষকে এবার টিকিট দেয়নি তৃণমূল। তার বদলে সমর হাতি নামে তুলনায় নবীন এক তৃণমূল কর্মীকে টিকিট দিয়েছে দল। চন্ডী বলেন, “বিধায়ক জুন মালিয়া আমার বাড়িতে এসে আমাকে কথা দিলেও, অঞ্চল সভাপতি ও স্থানীয় নেতৃত্ব আমার সঙ্গে বেইমানি করল!” তাই, সিপিআইএম থেকে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন চন্ডী। আত্মবিশ্বাসী চন্ডী ঘোষ বলেন, “জিতবো তো আমি একশ শতাংশ! আমি মানুষের পাশে ছিলাম। মানুষ আমার সঙ্গে আছেন।”

thebengalpost.net
গ্রামের পাকা রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে চন্ডী ঘোষ ওরফে সুকুমার ঘোষ:

তৃণমূলের ‘উন্নয়ন’-কে সঙ্গী করেই গ্রামের পাকা রাস্তা, পানীয় জলের সুব্যবস্থা করে দিয়েছেন বিদায়ী গ্রাম পঞ্চায়েত চন্ডী ঘোষ। মানুষের কাছে যাতে বিধবা ভাতা, বার্ধক্য ভাতা, কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রভৃতি সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পৌঁছে যায়, গত ৫ বছরে সেই ব্যবস্থাও করেছেন। তারপরেও সিপিআইএমের প্রার্থী? তৃণমূল আমলে তৈরি পাকা রাস্তায় দাঁড়িয়ে শুক্রবার সকালে চন্ডী ঘোষ বললেন, “তো কি হয়েছে? রাজ্য সরকার ও কেন্দ্র সরকারে যে দলই থাকুক না কেন, তাদেরকে তো নিজেদের কাজ করতেই হবে। সিপিআইমের আমলেও তো মানুষ বিনা পয়সায় চাল-ডাল-রেশন পেয়েছে, ঘরবাড়ি পেয়েছে, বিভিন্ন ভাতাও পেয়েছে। অনেক রাস্তাঘাট, হাসপাতালও হয়েছে। তৃণমূলের আমলেও পাচ্ছে। পঞ্চায়েত হিসেবে আমি আগেও মানুষের পাশে ছিলাম, আর ভবিষ্যতেও মানুষের বিপদে-আপদে একইভাবে পাশে থাকবো।” চন্ডী যোগ করেন, “আমি নিজের টাকায় মানুষকে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করা, অ্যাম্বুলেন্সে করে কলকাতায় পাঠানো প্রভৃতি অনেক কাজই করেছি। মানুষ বিপদে-আপদে ডাকলে সবসময় ছুটে গেছি। তাঁরা সেটা জানেন। তাই, এবারও আমি একশ শতাংশ জিতবো।”

গ্রামের যুবক শিবশঙ্কর শিট থেকে গৃহবধূ মমতা পাত্র প্রমুখ বললেন, “মানুষ হিসেবে ভালো।আমরা বিপদে-আপদে সবসময় পাশে পাই।” আর সেজন্যই জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী চন্ডী ঘোষ ওরফে সুকুমার ঘোষ। তবে, তাঁকে গুরুত্ব দিতে রাজি নয় তৃণমূল। শুক্রবার বিধায়ক জুন মালিয়া জানিয়েছেন, “যাদের কাজে মানুষ সন্তুষ্ট নয়, যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আছে তাদের এবার প্রার্থী করেনি দল। তুলনায় নবীনদের এবার গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আমাদের জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এমনটাই নির্দেশ ছিল। তবে, দলের বার্তা বুঝতে না পেরে যাঁরা অন্য দলে গেলেন, তাঁদের জন্য দলের দরজা চিরকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেল।” তিনি যোগ করেন, “দিদির সুরক্ষা কবচ কর্মসূচিতে গিয়ে আমরা যাদের বিরুদ্ধে মানুষের অসন্তোষ বুঝতে পেরেছি, অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের নির্দেশে তাদের প্রার্থী করা হয়নি।” দলের ব্লক সভাপতি নেপাল সিংহ জানান, “স্থানীয়ভাবে ওঁর কাজে মানুষ অসন্তুষ্ট ছিলেন। ওঁর বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ ছিল। তাই, ওই এলাকায় স্বচ্ছ ভাবমূর্তির এক যুবককে টিকিট দেওয়া হয়েছে।” তবে, শুধু চন্ডী ঘোষ নয়, শালবনী ব্লকের ভাদুতলা সহ এমন আরও দু’তিনটি ঘটনা ঘটেছে, যেখানে শাসকদলের টিকিট না পেয়ে গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যরা এবার সিপিআইএমের প্রার্থী হয়েছেন। আর, জেলা জুড়ে এরকম অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন ব্লকেই এখন তাই তৃণমূল ছেড়ে সিপিআইএম, বিজেপি অথবা কংগ্রেসে যাওয়ার ঢল নেমেছে। অনেকেই আবার গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি কিংবা জেলা পরিষদ আসনে নির্দল থেকে মনোনয়ন দিয়েছেন। দলের মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি সুজয় হাজরা এই বিষয়ে জানান, “দল বড় হলে এমন ঘটনা ঘটবেই। সকলের আশা বা চাহিদা পূরণ করা সম্ভব নয়। দলের একনিষ্ঠ কর্মী হলে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিশ্বস্ত সৈনিক হলে অন্য দলে যেতেন না। আর, এবার পঞ্চায়েত নির্বাচন হচ্ছে গ্রাম বাংলা জুড়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়ন এবং ‘বিশ্ববন্দিত’ একের পর এক সামাজিক প্রকল্পের ভিত্তিতে। তাই, বিপক্ষে যেই থাকুক না কেন, তৃণমূলের প্রার্থীরাই বিপুল ভোটে জিতবেন। ইতিমধ্যে, আমাদের জেলায় বহু আসনে পঞ্চায়েতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে তৃণমূল।”

thebengalpost.net
প্রচারে চন্ডী ঘোষ: