দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৩০ জুলাই: তিনি নবজাগরণের অগ্রদূত। ‘বর্ণপরিচয়’ এর স্রষ্টা। নারী শিক্ষার অন্যতম পথিকৃৎ। বাংলার বরেণ্য সমাজ সংস্কারক, বীরসিংহের ‘সিংহশিশু’ সেই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রয়াণ দিবসে (২৯ জুলাই) মালা পেলেন না নিজের জেলাতেই! অবহেলায়-অনাদরে পড়ে রইলেন ‘বর্ণপরিচয়ের’ স্রষ্টা তথা মেদিনীমাতার বীর সন্তান বিদ্যাসাগর। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা রোডের বিডিও অফিস (BDO Office) থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে অবস্থিত বিদ্যাসাগর মঞ্চের সামনে বিদ্যাসাগরের পূর্ণাবয়ব মূর্তিতে একটি ‘মালা’ দেওয়া তো দূরের কথা, পুরানো শুকিয়ে যাওয়া মালাটাও পরিষ্কার করলেন না কেউ! উৎসাহ দেখালেন না প্রশাসনের আধিকারিক থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরাও। শনিবার (২৯ জুলাই), ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ১৩৩-তম প্রয়াণ দিবসে ঠিক এমন ঘটনাই ঘটলো তাঁর নিজের জেলা মেদিনীপুরে (অধুনা, পশ্চিম মেদিনীপুরে)। আজ, রবিবার (৩০ জুলাই) সেই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরই শোরগোল পড়ে যায়! নিন্দার ঝড় বয়ে যায় জেলা জুড়ে।

thebengalpost.net
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মূর্তিতে পড়লোনা মালা :

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২০০৩ সালের ২৫ জানুয়ারি চন্দ্রকোনা রোডে বিদ্যাসাগর মঞ্চের উদ্বোধন করেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ওই অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রমন্ত্রী সুশান্ত ঘোষ। তারপর থেকে প্রতিবছর শ্রদ্ধার সঙ্গেই পালিত হয়ে এসেছে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মদিন (২৬ সেপ্টেম্বর) ও মৃত্যুদিন (২৯ জুলাই)। কিন্তু, ব্যতিক্রমী হিসেবে থেকে গেল এই বছরের মৃত্যু দিন বা প্রয়াণ দিবস! কয়েক বছর আগে কলকাতার বিদ্যাসাগর কলেজে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার পর ‘বিদ্যাসাগর’-কে নিয়ে কম টানাটানি করেনি রাজনৈতিক দলগুলি! মূর্তি ভাঙার পর পরই বিদ্যাসাগরের জন্মস্থান পশ্চিম মেদিনীপুরের বীরসিংহ গ্রামে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছিল বিদ্যাসাগরের মূর্তি। দীর্ঘদিন জরাজীর্ণ থাকার পর গত কয়েক বছর আগে সংস্কার করা হয় চন্দ্রকোনা রোডের বিদ্যাসাগর মঞ্চটিরও। রংচটা মূর্তিতে নতুন রঙের প্রলেপও পড়ে। যদিও, মূর্তির পরিখাটির অবস্থা এখনও বেহাল! মূর্তির পাদদেশে জন্ম নিয়েছে আগাছা। মূর্তির দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে গড়বেতা-৩ পঞ্চায়েত সমিতি। তবে, সারাবছর অবহেলায় পড়ে থাকলেও, জন্মদিন ও মৃত্যুদিনে অন্তত মূর্তি পরিষ্কার করা হতৌ। এবার তাও হলোনা!

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, মালা দেওয়া তো দূরের কথা, অবহেলাতেই পড়ে থাকলেন মেদিনীপুরের ‘ঈশ্বর’! যাঁর কার্যালয়ের অদূরেই বিদ্যাসাগরের মূর্তি, গড়বেতা ৩নং নম্বর ব্লকের সংশ্লিষ্ট সেই বিডিও অমিতাভ বিশ্বাস এদিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, “বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে দেখব।” আর, এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যাচ্ছে আপামর মেদিনীপুরবাসীর!