দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৯ জুলাই: বর্ষার আকাশে এক অদ্ভুত দৃশ্য! না রামধনুর মতো সুন্দর নয়, আবার টর্নেডোর মতো ভয়ঙ্করও নয়। দেখতে অনেকটা হাতির শুঁড় বা কালো ফানেলের মতো। রবিবার বিকেলে পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতনে সুবর্ণরেখা নদী অববাহিকায় হঠাৎই এর আগমন ঘটে। দাঁতন থানার অধীন বেলমুলা এলাকায় মাত্র কয়েক মিনিটের জন্য এই দৃশ্য দেখা যায় বলে ওই এলাকার বাসিন্দাদের দাবি। কেউ কেউ তা ক্যামেরাবন্দীও করে সমাজমাধ্যমে পোস্টও করেন। নিমেষের মধ্যেই তা ভাইরালও হয়ে যায়। তবে, বর্ষার মেঘলা আকাশের বুক চিরে ফুটে ওঠা ওই অদ্ভুত দৃশ্য ঘিরে নানা মতান্তর দেখা দিয়েছিল রবিবার থেকেই। ওই এলাকার বহু প্রবীণ ব্যক্তির মতে ওটা ছিল’ মেঘাসুর’। আবার, বেশিরভাগজনই একে ‘মিনি টর্নেডো’ বা ‘জল-টর্নেডো’ নাম দিয়েছিলেন। অনেকেই আবার, কারিকুরি করা বা এআই দিয়ে তৈরি ভিডিও বলে উড়িয়েও দিচ্ছিলেন একে! তবে, সোমবার এই বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা ছাড়াও কথা বলা হয় ভূগোলবিদদের সাথে। মেলে এর সহজ-সরল ভৌগলিক ব্যাখ্যা। তাঁরা জানান, “বিষয়টি মোটেও আশ্চর্যের নয়। নদী বা সমুদ্রের উপর খুব অল্প সময়ের জন্য এমন মেঘাসুরের দেখা মিলতেই পারে। একে আসলে জলস্তম্ভ বা ওয়াটার স্পাউট (Waterspout) বলে।”

বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিষয়ের বরিষ্ঠ অধ্যাপক প্রফেসর রামকৃষ্ণ মাইতি বলেন, “নদী বা সমুদ্রের উপর জলীয়বাষ্প পূর্ণ এই ঘূর্ণায়মান স্তম্ভ দেখা যায় অনেক সময়। একে জলস্তম্ভ বা ওয়াটার স্পাউট বলে।” তিনি এও জানান, এই জলস্তম্ভ বা ওয়াটার স্পাউট টর্নেডোর মতো ভয়ঙ্কর হয়না। বেলদা কলেজের ভূগোল বিষয়ের অধ্যাপিকা ড. লিপিকা মন্ডল বলেন, “এটা ঠিক এই জলস্তম্ভকে গ্রামবাংলায় অনেকে ‘মেঘাসুর’ বলে। আসলে এটি মেঘ বা জলীয়বাষ্প পূর্ণ জলস্তম্ভ বা ওয়াটার স্পাউট। টর্নেডোর সাথে এর মূল পার্থক্য হলো, টর্নেডো বাতাসে পরিপূর্ণ, আর জলস্তম্ভ জলে (বা, জলীয়বাষ্পে) পরিপূর্ণ। হঠাৎ করে উপক্রান্তীয় অঞ্চলে তীব্র গরমের সৃষ্টি হলে নদী বা সমুদ্র পৃষ্ঠের উপরে, আকাশ বরাবর এমন ফানেল বা স্তম্ভের সৃষ্টি হয়। কয়েক সেকেন্ড বা মিনিটের মধ্যেই এই জলস্তম্ভ মিলিয়ে যায়।” তবে, বর্ষার তুলনায়, মূলত গ্রীষ্মের বিকেলেই এই জলস্তম্ভের দেখা মেলে বলেও ড. মন্ডল জানিয়েছেন।