দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৯ জুলাই: “মেদিনীপুরের তিনজন জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নাম কর যারা সন্ত্রাসবাদীদের দ্বারা নিহত হন?” আজ, বুধবার (৯ জুলাই) অনুষ্ঠিত বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় (Vidyasagar University)-এর ষষ্ঠ সেমিস্টারের (তৃতীয় বর্ষের) পরীক্ষার এই ‘প্রশ্ন’ ঘিরেই এখন উত্তাল অখন্ড মেদিনীপুর সহ সারা বাংলা। অত্যাচারী ব্রিটিশ জেলাশাসকদের (পেডি, ডগলাস ও বার্জ) নিধনকারী মেদিনীপুরের বীর সন্তান তথা ভারতমাতার বীর স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ‘সন্ত্রাসবাদী’ আখ্যা দেওয়া হলো কিভাবে? এই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে নেটদুনিয়া থেকে শুরু করে বাংলা তথা মেদিনীপুরের আকাশে-বাতাসে। উঠেছে প্রতিবাদের ঝড়। তড়িঘড়ি ‘ভুল’ স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছেন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বুধবার সন্ধ্যা নাগাদ রেজিস্ট্রার (নিবন্ধক) ড. জয়ন্ত কিশোর নন্দী জানিয়েছেন, “প্রাথমিকভাবে আমরা জানতে পেরেছি ওটি ছাপার ভুল। উপাচার্যের নজরে আসার পরই উনি পরীক্ষা নিয়ামক (কন্ট্রোলার)-কে নির্দেশ দিয়েছেন, এই বিষয়ে তদন্ত করে বৃহস্পতিবারই রিপোর্ট জমা দিতে। বিষয়টি নিয়ে এখনও আমরা একটি বৈঠকে রয়েছি।”

অন্যদিকে, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন চন্দ্রকোনারোড গৌরব গুইন মহাবিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক তথা মেদিনীপুর শহরের উপকন্ঠে অবস্থিত বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী ড. আকবর আলি শাহ বলেন, “আমি জানিনা বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় এখন কাদের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে বা কারা এসব প্রশ্ন করছেন। তাঁদের তো দেশদ্রোহী বললেও খুব একটা ভুল হয় না! এক তো ভুলে ভরা প্রশ্ন। একই প্রশ্ন একাধিকবার রিপিট হয়েছে। তার উপরে আমাদের ‘ভারতমাতা’-র বীর সন্তান তথা মেদিনীপুরের বীর স্বাধীনতা সংগ্রামীদের যেভাবে সন্ত্রাসবাদী আখ্যা দেওয়া হয়েছে, তাতে লজ্জায় আমাদের মাথা হেঁট হয়ে যাচ্ছে!”
প্রসঙ্গত, ১৯৩১ (৭ এপ্রিল), ১৯৩২ (৩০ এপ্রিল) এবং ১৯৩৩ (২ সেপ্টেম্বর)- পর পর তিন বছর তিন অত্যাচারী জেলাশাসক (পেডি, ডগলাস, বার্জ)-কে ‘নিধন’ করে শহিদ হয়েছিলেন মেদনীপুরের কিশোর বিপ্লবীরা। মেদিনীপুরের বীর সন্তান বিমল দাশগুপ্ত, জ্যোতিজীবন ঘোষ, প্রদ্যোৎ কুমার ভট্টাচার্য, প্রভাংশু শেখর পাল, অনাথবন্ধু পাঁজা, মৃগেন্দ্রনাথ দত্ত, ব্রজকিশোর চক্রবর্তী, রামকৃষ্ণ রায়, নির্মলজীবন ঘোষ-রা নিজেদের প্রাণের বিনিময়ে ‘হত্যা’ করেছিলেন যথাক্রমে তিন অত্যাচারী ব্রিটিশ জেলাশাসক পেডি, ডগলাস আর বার্জ-কে। মেদিনীপুর শহরের উপকন্ঠে অবস্থিত বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ষষ্ঠ সেমিস্টারের (তৃতীয় বিশ্বের) ‘মর্ডান ন্যাশনালিজম ইন ইন্ডিয়া’ (Modern Nationalism in India) পেপার (C-14 T)-এর ১২নং প্রশ্নে সেই বীর স্বাধীনতা সংগ্রামীদেরই ‘সন্ত্রাসবাদী’ আখ্যা দেওয়া ঘিরে লজ্জিত গোটা মেদিনীপুর! প্রশ্নে অত্যাচারী ব্রিটিশ জেলাশাসকদের ‘মেদিনীপুরের তিন ম্যাজিস্ট্রেট’-রূপে তুলে ধরে, বিপ্লবীদের ‘সন্ত্রাসবাদী’ আখ্যা দেওয়ার পিছেনে কি তবে কোন গভীর চক্রান্ত আছে? বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক নির্মল মাহাত বলেন, “কলেজ স্তরের পরীক্ষা চলছে। যদি সত্যিই ওই ধরনের কোন লাইন থাকে, তবে নিশ্চিতভাবে তা ছাপার ভুল!” নিবন্ধক জয়ন্ত কিশোর নন্দী বলেন, “উপাচার্য তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। তবে, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে ছাপার ভুল।”