দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৯ সেপ্টেম্বর: ‘রেল শহর’ খড়্গপুরের গোলবাজারে নামি সোনা দোকানে ভয়াবহ ডাকাতির ঘটনায় মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যে ৫ আন্তঃরাজ্য দুষ্কৃতীকে ঝাড়গ্রাম জেলার গোপীবল্লভপুর ও বেলিয়াবাড়ার মাঝামাঝি রন্টুয়া এলাকা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশের সহায়তায় রীতিমতো ড্রোন উড়িয়ে ওই ডাকাত দলটিকে পাকড়াও করতে সক্ষম হয় পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশ। ধৃত দুষ্কৃতীদের কাছ থেকে ৩টি পিস্তল ও তাজা গুলি উদ্ধার করা হয়েছে বলে সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টা নাগাদ খড়্গপুরে জানান জেলা পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার। ৫ দুষ্কৃতীই বিহারের বৈশালী জেলার বাসিন্দা বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। দুষ্কৃতীদের স্করপিও গাড়িটিও আটক করেছে পুলিশ। গাড়িটির রেজিস্ট্রেশন নম্বরও বিহারের।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, শুক্রবার বেলা ১১-টা – সাড়ে ১১-টা নাগাদ খড়্গপুরের গোলবাজারে অবস্থিত স্বনামধন্য স্বর্ণ ব্যবসায়ী আশিস কুমার দত্তের দোকানে হামলা চালিয়ে গয়না লুট করে ওই ডাকাতদল। মেদিনীপুর শহরের পাটনাবাজার এলাকার বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব আশিষ কুমার দত্ত দুষ্কৃতীদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে তারঁ বুকে গুলি চালায় দুষ্কৃতীরা। অয়ন ভট্টাচার্য নামে (বছর ২৫’র যুবক) দোকানের এক কর্মচারীর হাতেও ছুরির কোপ বসায় দুষ্কৃতীরা। তারপরই, ওই ডাকাত দলটি খড়্গপুর শহর থেকে কলকাতা-মুম্বই ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে লোধাশুলির দিকে রওনা দিয়েছিল। তাদের ধাওয়া করে খড়্গপুর টাউন থানার পুলিশ। খবর দেওয়া হয় ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশকেও। এদিকে, পুলিশ পিছু নিয়েছে দেখে ফেকো মোড়ের কাছে জাতীয় সড়ক থেকে বাঁদিকে ঢুকে পড়ে ডাকাত দলের গাড়ি। তার পর গোপীবল্লভপুর হয়ে উড়িষ্যা পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করে। খবর পৌঁছয় ঝাড়গ্রাম পুলিশের কাছে। সেই মতো বেলিয়াবেড়া থানার রন্টুয়া এলাকায় ঝাড়গ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হেডকোয়ার্টার) কল্যাণ সরকার এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপারেশন) উত্তম ঘোষের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী ব্যারিকেড তৈরি করে তাদের অপেক্ষা করতে থাকে। একটি সাদা রঙের স্করপিও গাড়ি দেখেই সন্দেহ হয় তাঁদের। এত পুলিশ দেখে গাড়ি থেকে নেমে ৫ জন দৌড় শুরু করে! সঙ্গে সঙ্গে তাদের ধাওয়া করে পুলিশ। প্রথমে ২ জনকে গ্রেফতার করা হয়। বাকিরা জামা-প্যান্ট খুলে ধান জমিতে লুকিয়ে যায়। সাহায্য নেওয়া হয় ড্রোনের। শেষমেষ, রীতিমতো দক্ষিণী সিনেমার স্টাইলে বাকি ৩ জনকে ধান জমি থেকে পাকড়াও করে পুলিশ। বিকেল ৪টা-সাড়ে ৪টার মধ্যেই দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করা হয় বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
এই পুরো অপারেশনটিতে নেতৃত্ব দেন ঝাড়গ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হেডকোয়ার্টার) কল্যাণ সরকার এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপারেশন) উত্তম ঘোষ। তবে, পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকারের নেতৃত্বে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (খড়্গপুর) রানা মুখোপাধ্যায় ও এসডিপিও (খড়্গপুর) দীপক সরকারও পৌঁছে গিয়েছিলেন ঘটনাস্থলে। তাঁদের হাতে দুষ্কৃতীদের তুলে দেওয়া হয় ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশের তরফে। ঝাড়গ্রামের পুলিশ সুপার অরিজিৎ সিনহা বলেন, “অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হেডকোয়ার্টার ) কল্যাণ সরকার এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপারেশন) উত্তম ঘোষের নেতৃত্বাধীন পুলিশ টিম ডাকাত দলের ৫ জনকে গ্রেফতারের করেছে।” তাঁদের জন্য ৬০ হাজার টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করে ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশ। সন্ধ্যায় সাংবাদিক বৈঠক করে পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার জানান, “রীতিমতো পরিকল্পনা করে গত ২ দিন আগে থেকেই পরিত্যক্ত রেল কোয়ার্টারে এই দুষ্কৃতীরা আশ্রয় নিয়েছিল।” এও জানান, ধৃতদের আগামীকাল মেদিনীপুর আদালতে পেশ করা হবে। এই আন্তঃরাজ্য দুষ্কৃতী চক্রের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু করা হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশের তরফে।