দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৩ সেপ্টেম্বর: গোপন সূত্রে খবর পেয়ে মঙ্গলবার সকাল থেকেই দুই কুখ্যাত দুষ্কৃতীর খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছিল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশ। অবশেষে দুপুর নাগাদ এলো সাফল্য! কেশিয়াড়ি এলাকায় পুলিশের জালে মুম্বইয়ের দুই কুখ্যাত দুষ্কৃতী কাশেম সালিম ইরানি (২২) এবং আমজাদ সাপুর ইরানি (৪৫)। মঙ্গলবার বেলা ১টা নাগাদ কেশিয়াড়ি থানার খাজরা এলাকার একটি রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্কের গ্রাহক সেবা কেন্দ্রে ডাকাতির উদ্দেশ্যে তারা হানা দেয় বলে অভিযোগ। তবে, আগে থেকেই তৎপর ছিল জেলা পুলিশের এসওজি টিম এবং কেশিয়াড়ি থানার পুলিশ। গোপন সূত্রে খবর পৌঁছনোর সাথে সাথেই বিশাল পুলিশ বাহিনী গিয়ে দু’জনকে পাকড়াও করেন ঘটনাস্থল থেকে।

দুই দুষ্কৃতীকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে মঙ্গলবার বিকেলে জানিয়েছন জেলা পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার। দুই কুখ্যাত দুষ্কৃতী আন্তঃরাজ্য ডাকাতি ও ছিনতাই চক্রের সাথে যুক্ত বলে প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে পুলিশ। গত কয়েকমাসে ঝাড়গ্রাম, পূর্ব মেদিনীপুর, হাওড়া (শ্যামপুর) সহ বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতির ঘটনাতে এই দুই কুখ্যাত দুষ্কৃতী যুক্ত বলেও পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। সেইসঙ্গেই সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকের ভয়াবহ ডাকাতির ঘটনায় এই দুই দুষ্কৃতী যুক্ত কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে পুলিশের একটি সূত্রে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার সাতসকালেই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশের এসওজি টিম (স্পেশাল অপারেশনস গ্রুপ)-এর কাছে খবর এসে পৌঁছয় মহারাষ্ট্রের দুই কুখ্যাত দুষ্কৃতী বেলদা-কেশিয়াড়ি এলাকার বিভিন্ন ব্যাঙ্ক বা সোনার দোকানে ডাকাতির ছক কষছে! সেইমতোই ওই এলাকার সমস্ত ব্যাঙ্ক, সোনার দোকান সহ ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে পুলিশ। তৎপর থাকে জেলার প্রতিটি থানা। এরপরই এসওজি টিম খবর পায়, কেশিয়াড়ি এলাকায় বেশ কয়েকটি ব্যাঙ্কের শাখায় রেইকি করছে ওই দুই দুষ্কৃতী। দুপুর নাগাদ খাজরা এলাকায় একটি রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্কের গ্রাহক সেবা কেন্দ্রে গিয়ে হিন্দি ভাষায় কথা বলে ওই দুই দুষ্কৃতী। অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানোর কথা বলে তারা। সন্দেহ হয় গ্রাহক সেবা কেন্দ্রের পরিচালকের। দ্রুত তিনি স্থানীয় সিভিক ভলেন্টিয়ারকে খবর দিলেই, পৌঁছে যায় বিশাল পুলিশ বাহিনী। একেবারে হাতেনাতে পাকড়াও করা হয় দু’জনকে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ধৃত কাশেম সালিম ইরানি (২২) মহারাষ্ট্রের পুনে এলাকার বাসিন্দা এবং আমজাদ সাপুর ইরানি (৪৫) মহারাষ্ট্রের থানে এলাকার বাসিন্দা। তবে, দু’জনই বেশ কয়েকমাস ধরে ঝাড়গ্রামে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকত। সেখান থেকে বিভিন্ন জেলা ও পড়শি রাজ্যে ডাকাতি, ছিনতাই করে বেড়াত। ঝাড়গ্রাম, হাওড়া ও পূর্ব মেদিনীপুরের একাধিক ডাকাতির ঘটনায় ধৃতরা যুক্ত বলে মনে করছে পুলিশ। পুজোর মুখে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক ও সোনার দোকানে ডাকাতির ছক ছিল বলেও প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশ। জেলা পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার বলেন, “জেলা পুলিশের এসওজি টিম ও কেশিয়াড়ি থানার পুলিশের যৌথ অভিযানে দুই কুখ্যাত দুষ্কৃতীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।” ধৃতদের বুধবার আদালতে পেশ করে হেফাজতে (পুলিশ হেফাজতে) নেওয়ার আবেদন জানানো হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। আন্তঃরাজ্য এই দুই দুষ্কৃতীর সাথে আরও কেউ যুক্ত আছে কিনা, তাদের সাথে কোনও আগ্নেয়াস্ত্র ছিল কিনা, তাদের অপরাধের জাল কতদূর অবধি বিস্তারিত এই সমস্ত বিষয়েই এখন তদন্ত শুরু করেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশ।