দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৩ মার্চ: পশ্চিম মেদিনীপুরের ভাদুতলা থেকে জেলা শহর মেদিনীপুর- মঙ্গলবার (১২ মার্চ) বিকেলের পর বিজেপি সাংসদ তথা এবারও বিজেপি-র ‘সম্ভাব্য’ প্রার্থী দিলীপ ঘোষ যেখানেই কর্মসূচি করেছেন, সেখানেই পাল্টা কর্মসূচি নিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। রেগে খাপ্পা হয়েছেন বিজেপি-র প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথা মেদিনীপুরের সাংসদ! মঙ্গলবার বিকেলে শালবনীর ভাদুতলায় তাঁর পূর্ব ঘোষিত ‘যুব আড্ডা’র কর্মসূচি চলাকালীন, প্রায় গা ঘেঁষে মিছিল করে ১০নং অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব। ওঠে ‘চোর চোর’ স্লোগানও! সন্ধ্যা নাগাদ সেখান থেকে ফিরে তাঁর পরবর্তী ঘোষিত কর্মসূচি উপলক্ষে মেদিনীপুর শহরের পঞ্চুরচকের ‘যুব আড্ডা’-তে যোগ দিলে, সেখানেও সভাস্থলের একেবারে সামনে দিয়ে বাইক মিছিল করে যুব তৃণমূল কংগ্রেস! যদিও, যুব তৃণমূলের জেলা সভাপতি নির্মাল্য চক্রবর্তীর দাবি, তাঁদের কর্মসূচিও ছিল পূর্ব ঘোষিত। পুলিশের অনুমতি নিয়েই তাঁরা বাইক র্যালি করেছেন!
উল্লেখ্য যে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মেদিনীপুর শহরের পঞ্চুরচকে দিলীপের বক্তব্য চলাকালীন তারস্বরে হর্ণ বাজিয়ে বাইক র্যালি নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ ওঠে যুব তৃণমূলের কর্মীদের বিরুদ্ধে। এরপর, দিলীপ ঘোষও মাইক হাতে স্লোগান দেন “পিসি চোর ভাইপো চোর…”! পঞ্চুরচকের উপর দিয়ে প্রথমবার তৃণমূলের বাইক র্যালি যাওয়ার সময়, বিজেপি-র সমর্থকেরা কয়েকটি বাইক আটকে স্লোগান দেয় বলে পাল্টা অভিযোগ তৃণমূলের। এরপর, বাইকের সংখ্যা আরও বাড়িয়ে আসেন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা! অভিযোগ বিজেপি-র। ঘটনার জেরে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ, সাময়িক সময়ের জন্য ছড়ায় উত্তেজনা। তবে, শেষ মুহূর্তে অবশ্য বড় কিছু ঘটার আগেই নিজেদের ‘সংযত’ করে নেন উভয়পক্ষের কর্মীরা। তবে, বক্তব্য রাখতে গিয়ে দিলীপ ‘বেনজির’ আক্রমণ করেন তৃণমূলকে! বলেন, “ভাদুতলায় আমাকে দেখে বেশ কিছু লোক ঘেউঘেউ করতে শুরু করল! আমি TMC নেতাদের বলে দিচ্ছি, যদি ভাবেন এভাবে ভোট করাবেন, আমরাও পোস্টার-ব্যানার নিয়ে ভোট করব না; অন্য কিছু নিয়ে ভোট করব। আর যারা কানে দুল পরে চেঁচামেচি করছে, তারা যেন বাড়িতে বলে আসে, নিজেদের নামটা কেটে দেওয়ার জন্য! দিলীপ ঘোষ এরকম জোচ্চোরদের বুকে পা দিয়ে ১৮-টা সিট জিতিয়েছে। আর নিজে ৮৭ হাজার ভোটে জিতেছে। এই ধরনের গুন্ডা, বদমায়েশদের কানের নীচে দু’থাপ্পড় মারলে সাত দিন শুনতে পাবেনা! বাড়িতে মালা রেডি করে রাখতে বলে আসবে!”
এরপরই দিলীপের সংযোজন, “আরে এখনও আমাদের ক্যান্ডিডেটই ডিক্লেয়ার হলোনা, তোরা হেরে গেলি? একেই বলে, ‘খাবি কিরে ব্যাটা, ঝাঁজে মরে যাবি!’ ভালো কামাচ্ছ, থাকছ, খাচ্ছ, কেন চুলকাচ্ছ? বিজেপি যদি চুলকায় ঘাস বেরোবেনা! কোনও মলমে ঘা শুকোবেনা!” এরপরই, বে-লাগাম দিলীপ জেলা পুলিশ সুপারের উদ্দেশ্যে ‘অশ্লীল’ শব্দ প্রয়োগ করে বসেন। তবে, তৃণমূল প্রার্থী ‘জুন’ সম্পর্কে অবশ্য ‘ভালো’ শব্দই প্রয়োগ করেছেন বিজেপি-র ‘সম্ভাব্য’ প্রার্থী দিলীপ! দিলীপ বলেন, “দম থাকলে ইউসুফ পাঠানকে মেদিনীপুরে দাঁড় করা! দম থাকলে তোদের যত বড় নেতা আছে, মেদিনীপুরে দাঁড় করা! একজন ভদ্রমহিলা, ভালো, তিনি রাজনীতি বোঝেন না; তাকে ‘আমার’ সামনে, বিজেপি-র সামনে করে দিয়েছে! ভালো মানুষ, ভগবান আশীর্বাদ করুক!” তৃণমূলকে আক্রমণ করতে গিয়ে দিলীপ এদিন ‘কটাক্ষ’ ছুঁড়ে দিয়েছেন এই মুহূর্তে ‘অসুস্থ’, পিংলার বিধায়ক অজিত মাইতির উদ্দেশ্যেও। দিলীপের মন্তব্য, “এর আগে এক দাদা ছিল আমার, অজিত দা। সে এখন গোঁসা করে…সন্যাস নিয়ে হরিনাম করছে!” পাল্টা নির্মাল্য শুনিয়েছেন, “কে দিলীপ ঘোষ? ওঁর জন্য যুব তৃণমূলই কাফি!” অন্যদিকে, দিলীপ এদিন ‘চরম হুঁশিয়ারি’ দিয়ে তৃণমূল কর্মীদের উদ্দেশ্যে মন্তব্য করেছেন, “হিম্মত থাকলে গণতান্ত্রিক ভাবে লড়! ২ লাখের বেশি ভোটে যদি না হারিয়েছি এবার তোমাদেরকে…!” বোঝা গেল তৃণমূলের ‘ভালো’ জুনের বিরুদ্ধে বিজেপি-র প্রার্থী ‘রাগী’ দিলীপই!